তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
বস্তাবন্দি কুকুর উদ্ধারের ভিডিওটি ভারতের, বাংলাদেশের নয়

বস্তাবন্দি কুকুর উদ্ধারের ভিডিওটি ভারতের, বাংলাদেশের নয়

তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বস্তাবন্দি অনেকগুলো কুকুর উদ্ধারের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। একাধিক আইডি থেকে (, , , ) ভিডিওটি শেয়ার দিয়ে দাবি করা হয়, রাজধানী ঢাকায় কাচ্চি বিরিয়ানিতে দেওয়া হচ্ছে কুকুরের মাংস। যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। ১৪ কুকুর উদ্ধারের ঘটনাটি ভারতের আসামের।

গত ২৬ মে ফেসবুকের এক ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে ২ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। এতে দেখা যায় কিছু ব্যক্তি অনেকগুলো কুকুর বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার করেছেন। ভিডিওতে বলতে শোনা যায় ‘আশ্রয়’ নামের একটি সংস্থা কুকুর পাচারকারীদের ধরার জন্য ফাঁদ পেতে তাদের আটক করেছে; উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে ১৪টি কুকুর। উদ্ধারকারীরা বলছিলেন, কুকুরগুলো চুরি করা হয় ভারতের আসামের করিমগঞ্জ ও আশেপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে। ভিডিওতে কুকুর পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের পরিচয়ও দেওয়া হয়। এছাড়া পাচারের কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কার দেখিয়ে বলা হয়, গাড়িটি নিবন্ধন নাম্বার থেকে স্পষ্ট এটি আসামের করিমগঞ্জ এলাকার।

ঘটনাটি ভারতের- ভেতরে এই বক্তব্য থাকলেও ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর উপরে বাংলায় লেখা হয়- ‘কাচ্চি প্রেমিদের দাওয়াত রইলো কুত্তা বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য।’ এছাড়া পোস্টের ক্যাপশনে লেখা- ‘রাজধানীতে কাচ্চি বিরানির নামে খাওয়ানো হচ্ছে কুত্তা বিরিয়ানি। ওরে এবার তোরা একটু মানুষ হ।’ কমেন্টে এক ব্যবহারকারী লেখেন- ‘আরো বেশি করে খাও ঢাকাইয়া বিরিয়ানি।’

ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ে অনলাইনে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে করে ডিসমিসল্যাব। অনুসন্ধানে ‘আশ্রয় – করিমগঞ্জ (Ashroy – Karimganj)’ নামের ফেসবুক পেজে মূল ঘটনার ভিডিও পাওয়া যায়। এই পেজ থেকে গত ২২ মে ফেসবুক লাইভ করা ভিডিওর সঙ্গে বাংলা লিখে শেয়ার করা ভিডিওটির পুরো মিল রয়েছে। ১০ মিনিট ২১ সেকেন্ডের লাইভ ভিডিওর শুরুর অংশ কেটে নিয়ে তা বাংলাদেশের বলে প্রচার করা হয়। প্রকৃত ভিডিওর ইংরেজি ক্যাপশনের বাংলা অর্থ দাঁড়ায়- ‘আরেকটি কুকুর চোরাচালানের ঘটনা… ১৪ কুকুর উদ্ধার।’

‘আশ্রয় – করিমগঞ্জ’ পেজটি যাচাইয়ে দেখা যায় এটি আসামের করিমগঞ্জ এলাকার একটি বেসরকারি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান (এনজিও)। প্রতিষ্ঠানটি প্রাণী উদ্ধার, খাওয়ানো ও পরিচর্যার কাজ করে থাকে। পেজটির একাধিক পোস্টে (, ) কুকুর উদ্ধার ও পরিচর্যার ছবি-ভিডিও দেখা যায়।

ভিডিওটির প্রকৃত উৎস আসামের কিনা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে ভারতের তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান অল্টনিউজের সাবেক সাংবাদিক ও ফ্যাক্টচেকার কলিম আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিসমিসল্যাব। জবাবে তিনি বলেন, “প্রকৃত ভিডিওটি আসামের করিমগঞ্জের। ভিডিওতে ব্যবহৃত গাড়ির নাম্বার প্লেটও একই স্থানের।”

কুকুর উদ্ধারের এই ঘটনা নিয়ে আসাম ভিত্তিক গণমাধ্যম ‘বারাক বুলেটিন’ এর একটি প্রতিবেদনও খুঁজে পাওয়া যায় অনলাইনে। প্রতিবেদনে বলা হয়, পাচারকারীরা কুকুরের মাংস বিক্রির মতো অবৈধ কারবারে জড়িত। এই পাচারের গন্তব্য ছিল পাশের মিজোরাম রাজ্যের আইজল নামক স্থানে।

নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, কুকুর উদ্ধারের ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। ভারতের আসামের একটি এনজিওর করা লাইভ ভিডিওর কিছু অংশ কেটে তা বাংলাদেশের বলে ছড়ানো হচ্ছে।

আরো কিছু লেখা