ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
ভ্যালেন্টাইনস ডে নয়, টাঙ্গাইলে ওষুধ বিক্রিতে অস্বীকৃতির কারণে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ
This article is more than 1 month old

ভ্যালেন্টাইনস ডে নয়, টাঙ্গাইলে ওষুধ বিক্রিতে অস্বীকৃতির কারণে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ

ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

সামাজিক মাধ্যমে সাম্প্রতি ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে বলা হচ্ছে, ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে ফার্মেসি বন্ধ রাখার নির্দেশ অমান্য করে জন্ম নিরোধক সামগ্রী (কনডম) বিক্রি করায় ওষুধের দোকানে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে মোল্লারা। ভিডিওটি সেই ঘটনার প্রতিবাদে আয়োজিত মিছিলের বলে দাবি করা হলেও যাচাইয়ে পাওয়া যায় ভিন্ন তথ্য। প্রকৃতপক্ষে, এটি ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রিতে অস্বীকৃতি জানানোয় টাঙ্গাইলে ফার্মেসিতে হামলা, লুটপাট ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে হওয়া বিক্ষোভ সমাবেশের দৃশ্য।

সম্প্রতি ফেসবুকে একজন ব্যবহারকারী একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করেন, ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষে টাঙ্গাইলের ফার্মেসি মালিকদের দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে কিছু মালিক নিষেধ অমান্য করে কনডম বিক্রি করায় মোল্লারা তাদের ওপর হামলা চালায় এবং কয়েকটি ফার্মেসিতে ভাঙচুর করে। ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় এই ঘটনার প্রতিবাদে ফার্মেসি মালিকরা টাঙ্গাইল শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এই ভিডিওটি সেই প্রতিবাদ মিছিলের দৃশ্য বলে দাবি করা হয় পোস্টটিতে, যা এখন পর্যন্ত দেড় লাখেরও বেশি ভিউ পেয়েছে এবং সাতশো’র বেশি বার শেয়ার করা হয়েছে, এছাড়াও এতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আড়াই হাজারের বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারী। ভিডিওটি “প্রান্তিক নিউজ” নামক একটি ফেসবুক পেজ, ও একাধিক প্রোফাইল (, , ) এবং গ্রুপ থেকে পোস্ট করে একই রকম দাবি করা হয়। কেউ হামলাকারীদের মোল্লা ও হুজুর, কেউ আবার তৌহিদি জনতা বলে দাবি করেন।

ভিডিওটির কি-ফ্রেম ধরে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। একই কি-ফ্রেমের একই ঘটনার ভিন্ন একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায় আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারীর প্রোফাইলে। ক্যাপশনে বলা হয়, “মধুপুর সোহাগ ফার্মেসিতে অতর্কিত ভাবে সন্ত্রাসিবাহিনী হামলা চালায়। হামলার প্রতিবাদে, মধুপুর শিল্প ও বণিক সমিতি, প্রতিবাদ রেলি করেন এবং সন্ত্রাসিদের গ্রেফতারের দাবি জানান। সন্ত্রাসিদের ঠিকানা মধুপুরে হবেনা, সন্ত্রাসিদের আস্তানা ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও, সন্ত্রাসিদের কালো হাত ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও। একটা একটা সন্ত্রাস ধরো সকাল বিকাল ধোলাই করো।” 

একই কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে খোঁজ করলে মূল ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়, টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায় ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি না করায় ফার্মেসিতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। হামলায় গুরুতর আহত হন সোহাগ ফার্মেসির মালিক ফজলুল হক। ঘটনার পর মধুপুরের সব ব্যবসায়ী তাদের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানায় এবং অনির্দিষ্টকালের জন্য দোকান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়।  “মধুপুর মিডিয়া টিভি” নামক একটি ফেসবুক পেজ থেকে হামলায় গুরুতরভাবে আহত সোহাগ ফার্মেসির মালিক ফজলুল হক এবং এর প্রতিবাদে ডাকা বিক্ষোভ সমাবেশের একাধিক লাইভভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। আজ রোববার সকাল থেকে সব দোকান খোলার হলেও, ওষুধের দোকানগুলো এখনও বন্ধ রয়েছে। এই নিয়ে দৈনিক আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনও খুঁজে পাওয়া যায়। 

অর্থাৎ, প্রেসক্রিপশন ছাড়া ঘুমের ওষুধ বিক্রি না করায় হওয়া হামলার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়।

আরো কিছু লেখা