তামারা ইয়াসমীন তমা

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
অপটিক্যাল ইল্যুশন থেকে মানসিক চাপ বুঝতে পারার ভাইরাল পোস্টটি ভুয়া
This article is more than 1 year old

অপটিক্যাল ইল্যুশন থেকে মানসিক চাপ বুঝতে পারার ভাইরাল পোস্টটি ভুয়া

তামারা ইয়াসমীন তমা

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সম্প্রতি ফেসবুকে অপটিক্যাল ইল্যুশন বা দৃষ্টিভ্রম সৃষ্টিকারী একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। বাংলা ও ইংরেজি একাধিক পোস্টের দাবি অনুসারে (, , ) এই ছবি দেখে কেউ কতটুকু মানসিক চাপে রয়েছে তা পরীক্ষা করা সম্ভব। ২০২০২০২২ সালে টুইটারেও একই তথ্য সম্বলিত পোস্ট পাওয়া যায়। তবে যাচাই করে দেখা গেছে, এই দাবি ভিত্তিহীন।

২০১৮ সালে ফেসবুক, টুইটার ও রেডিটে একই দাবি ভাইরাল হলে বিবিসি বাজফিড নিউজ এটিকে মিথ্যা প্রমাণিত করে। পরবর্তীতে পোস্টটি ভাইরাল হওয়া অব্যাহত থাকলে ২০১৯ সালে এএফপি এবং ২০২০ রয়টার্সও একই দাবি খণ্ডন করে।

ছবির সঙ্গে থাকা বাংলা পোস্টটি নিচে তুলে দেওয়া হলো:

“এই ছবিটি একজন Japanese neuroscientist (স্নায়ুবিজ্ঞানী) তৈরি করেছেন। যদি ছবি না নড়ে, আপনি শান্ত। যদি এটা ধীরে ধীরে চলে, আপনি একটু চাপে আছেন। যদি এটা দ্রুত চলে যায়, আপনি খুব ক্লান্ত।”

বিবিসির মতে, পোস্টের ছবিটি জাপানি স্নায়ুবিজ্ঞানীর আঁকা দাবি করা হলেও ছবিটির আসল শিল্পী ইউক্রেনের অলেক্সান্দ্রিয়ার গ্রাফিক ডিজাইনার, আর্টিস্ট ও ইলাস্ট্রেটর ইউরি পেরেপাডিয়া। ইউরি ২০১৬ সালে ছবিটি আঁকেন। কোনো গবেষণা কাজের অংশ হিসেবে নয়, মাত্র দুই ঘণ্টায় ছবিটি সম্পন্ন করেন ইউরি। ছবির এই আসল শিল্পীর বক্তব্য অনুসারে, কেউ কতটুকু চাপ অনুভব করছে, তার সঙ্গে এই ছবির কোনো সম্পর্ক নেই।

বিবিসি থ্রিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউরি বলেছেন “আমি প্রথম ফেসবুকে এই ফেক পোস্টটি দেখি এবং এরপর তা সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।”

“আমি খুব বিরক্ত হয়েছি। এটা ছিল কপিরাইট লঙ্ঘন। তাই আমি পোস্টগুলো অপসারণের দাবি জানিয়ে চিঠি লিখেছিলাম”।

কিন্তু তা সত্ত্বেও কোনো সমাধান না পাওয়ায় ইউরি ২০১৮ সালের নভেম্বরে নিজের ইন্সটাগ্রাম প্রোফাইলে এক পোস্টে পুরো বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি সেখানে লিখেন:

“আমি অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর ব্যবহার করে ২০১৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর এই অপটিক্যাল ইলিউশনের ছবি আঁকি। এটি তৈরি করতে আকিয়োশি কিতাওয়া এফেক্ট ব্যবহার করি। রঙিন ব্যাকগ্রাউন্ডে সাদা-কালো স্ট্রোক দিয়ে ছবিটি আঁকা হয়…যার ফলে দৃষ্টির ফোকাস গতি লাভ করে এবং ব্যক্তির কাছে মনে হয় ছবিটি নড়ছে”।

এর আগে ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোতে দাবি করা হয় জাপানি সাইকোথেরাপিস্ট ইয়ামামোতো হাশিমা মানসিক ক্লান্তি যাচাইয়ের একটি পদ্ধতি বের করেছেন।

ইউরি তাঁর পোস্টে আরও লিখেন, “এই ছবির সঙ্গে জাপানি সাইকোথেরাপিস্ট ইয়ামামোতো হাশিমার কোনো সম্পর্ক নেই। তাছাড়া ইয়ামামাতো হাশিমা বলে বাস্তবে কেউ নেই। গুগল করে দেখতে পারেন”।

আরো কিছু লেখা