ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
পাহাড়ে সশস্ত্র বাহিনীর ওপর হামলার দাবিতে পুরোনো ছবি-ভিডিও

পাহাড়ে সশস্ত্র বাহিনীর ওপর হামলার দাবিতে পুরোনো ছবি-ভিডিও

ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতকে কেন্দ্র করে চলমান পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। পাহাড়ের অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে ছড়িয়েছে নানা ধরনের অপতথ্য। এরই মধ্যে ফেসবুক ও টুইটারে নতুন কিছু পোস্টে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলার দাবি করে একটি  ছবিভিডিও শেয়ার হয়েছে। যদিও ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায় ঘটনা দুটি পুরোনো এবং বর্তমান সহিংসতার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।

সামাজিক মাধ্যম টুইটারে গত ২২ সেপ্টেম্বর একটি ছবি শেয়ার করে এক ব্যবহারকারী দাবি করেন, “#BreakingNews “পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের হাতে মার খাচ্ছে বিজিবি” এটা একদম অগ্রহণযোগ্য দ্রুত এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি দাবী জানাচ্ছি।” একই ছবি ফেসবুকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (অফিসিয়াল গ্রুপ)’ নামের একটি গ্রুপে শেয়ার করে এক ব্যবহারকারী পোস্ট করেন সাম্প্রতিক হিসেবে। ছবিটিতে বিজিবির ইউনিফর্ম পরিহিত একজনের ওপর হামলা হতে দেখা যায়। পোস্টটিতে এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এবং এটি শতাধিকবার শেয়ার করা হয়েছে। ছবিটিতে রয়েছে সাড়ে তিনশোরও বেশি মন্তব্য। সেখানে এক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, “এরা সেনাবাহিনীর লোকদের গায়েও হাত তোলে। অনেক খারাপ” আরেক ব্যবহারকারী লেখেন, “পাহাড়ীরা অহরহ আইন হাতে তুলে নেয়।”

রিভার্স ইমেজ সার্চে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায় আমাদের সময় ডট কম– এর ২০২৩ সালের একটি অনলাইন প্রতিবেদনে। ঘটনার বর্ণনায় জানা যায়, সেই সময় খাগড়াছড়ির পানছড়ির পূজগাং এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়ে স্থানীয়রা সাড়ে ১২ লাখ টাকা ও আটককৃত দুই আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। মূলত বিজিবি সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে একটি মোটর সাইকেলের দুই আরোহীকে তল্লাশি করে টাকা জব্দ করে। পরে তাদের থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে স্থানীয়রা এই হামলা চালায় এবং এতে পাঁচ বিজিবি সদস্য আহত হন। কিওয়ার্ড সার্চে ২০২৩ সালের একই দিনে ফেসবুকে এক ব্যবহারকারীর পোস্টে এই ঘটনার একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। যার ক্যাপশনে একই তথ্য দেয়া। 

এছাড়া গত ২১ সেপ্টেম্বর ‘এসআই মিডিয়া ঢাকা’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়। সেখানে সেনাবাহিনীর সদস্যদের লাঠি হাতে কিছু নারীকে প্রতিহত করতে দেখা যায়। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, “এদের সুখে থাকলে ভূতে কিলায…।” এই ভিডিওটিতে এখন পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি ব্যবহারকারী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে; এবং ৪৩ হাজারের বেশি বার শেয়ার করা হয়েছে। এছাড়া সাড়ে চার হাজারের বেশি মন্তব্য রয়েছে পোস্টটিতে। মন্তব্যগুলো যাচাইয়ে দেখা গেছে, অনেকেই ঘটনাটিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান সহিংসতার অংশ ভেবে বিভ্রান্ত হয়েছেন। একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, “এতো বড় স্পর্ধা! আমাদের গর্বিত সেনাবাহিনীর গায়ে লাঠিচার্জ করার মানসিক শক্তি এই উপজাতি মহিলারা কোথা থেকে পেলেন? তা খতিয়ে দেখা জরুরি এবং কঠিন শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।” আরেকজন লিখেছেন, “যত পাহাড়ি সরকারি চাকরি করে তাদেরকে বহিষ্কার কারা হোক।” 

ভিডিওটির কিফ্রেম ধরে রিভার্স ইমেজ সার্চে একই ভিডিও ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরের সিএইচটি নিউজের একটি ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর সঙ্গে হুবহু সাদৃশ্যপূর্ণ একটি স্ক্রিনশট পোস্ট করে বলা হয়, সেদিন বিকেলে রাঙামাটি সদরের রাঙাপানি এলাকায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা এক স্থানীয় দোকানদারকে আটক করার চেষ্টা করলে এলাকাবাসী, বিশেষ করে সেখানকার নারীরা এর প্রতিবাদে এগিয়ে আসে। সেসময় সেনা সদস্যদের সঙ্গে নারীদের ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে। এ পোস্ট থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, ভিডিওটি মূলত ছয় বছর পুরোনো ঘটনা। যার সঙ্গে বর্তমান সহিংসতার কোনো যোগসূত্র নেই। এছাড়া ২০২০ সালে “পাহাড়ের খবর-Paharer Khobor” নামের একটি ফেসবুক পেজে খুঁজে পাওয়া যায় ভিডিওটি। ক্যাপশনে দাবি করা হয় ঘটনাটি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে রাঙ্গামাটিতে সেনাবাহিনীর উপর হওয়া একটি হামলার ঘটনা।

প্রসঙ্গত, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে সাম্প্রতিক পাহাড়ি-বাঙালি সহিংসতায় বর্তমানে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও ইউনাইটেড পিপল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলনের ৭২ ঘণ্টার অবরোধ চলমান। আর পাহাড়ে সহিংসতা শুরুর পর থেকে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ছড়াতে দেখা যায় নানা ধরনের অপতথ্য। এ নিয়ে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন (, ) প্রকাশ করেছে ডিসমিসল্যাব।

আরো কিছু লেখা