তৌহিদুল ইসলাম রাসো
পুরোনো ভিডিও ছড়িয়ে দাবি: ঈদের আগে সাঁতরে ঢুকছে ভারতের অসংখ্য গরু
তৌহিদুল ইসলাম রাসো
ঈদুল আজহার আগে ভারত থেকে নদীপথে পাচার করে আনা হচ্ছে বিপুলসংখ্যক গরু- এমন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। একাধিক ব্যক্তিগত প্রোফাইল (১, ২), গ্রুপ ও পেজ এই দাবিতে ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার করেছে। পুরোনো এ ভিডিওটি ইউটিউব এবং টিকটকেও শেয়ার করা হচ্ছে। যাচাইয়ে দেখা যায়, একই দাবিতে গত কয়েক বছর ধরেই ভিডিওটি শেয়ার করা হচ্ছে। এগুলো ভারতেরই গরু এবং চোরাইপথে বাংলাদেশে আনা হচ্ছে- এমন কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই। তবে কোরবানির ঈদের প্রাক্কালে ছড়ানোয় অনেকেই পুরোনো ভিডিওটিকে চলতি বছর সীমান্তে গরু পাচারের ঘটনা বলে বিশ্বাস করছেন।
ফেসবুকের একটি ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে এক এক মিনিটের এই ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে বলা হয়, “ঈদ উল আযহা উপলক্ষে গরু আসছে ভারত থেকে।” এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভিডিওটি দেখেছেন প্রায় সাড়ে আট লাখ ব্যবহারকারী। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দুই হাজারের বেশি এবং মন্তব্য করেছেন দুইশর বেশি ব্যবহারকারী। কমেন্টে একজন লেখেন, “ভারত থেকে গরু আসছে।” আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “আরো বেশি করে আসা দরকার।” অনেকেই ভিডিওটি এ বছরের বলে ধরে নিয়েছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন এটি পুরোনো। একজন ব্যবহারকারী লেখেন, “এইগুলো ফালতু সংবাদ গতবছর একই ভিডিও দেখছি, এই ভিডিও ভারতের ভিতরে।” আরেকজন মন্তব্য করেন, “একই ভিডিও বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে, আর সবাই আলহামদুলিল্লাহ মাশাআল্লাহ বলে দুনিয়া আমিরাতের কামিয়াবী হাসিল করছে!”
টিকটকে একই ভিডিও শেয়ার করে লেখা হয় ভিডিওটি চলতি বছরের ১০ জুনের। ক্যাপশনে লেখা, “ভারত থেকে বাংলাদেশে কোরবানীর জন্য গরু পার করছে কীভাবে দেখুন!! || ইন্ডিয়ান কোরবানীর গরুর হাট।”
মূল ভিডিওটির উৎসের খোঁজে অনলাইনে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। দেখা যায়, একই দাবিতে বিভিন্ন সময়ে ছড়ানো হয়েছে ভিডিওটি। তবে কোনটাকেই মৌলিক বলে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।
অনলাইনে সবচেয়ে পুরোনো যে ভিডিওটি ডিসমিসল্যাব পেয়েছে সেটি ২০২২ সালের। ইউটিউবের একটি চ্যানেলে সেটি শেয়ার করা হয় সে বছরের সাত জুলাইয়ে। ভিডিওর শিরোনামে লেখা, “ভারত থেকে বাংলাদেশে কোরবানীর জন্য গরু পার করছে কীভাবে দেখুন !! || ইন্ডিয়ান কোরবানীর গরুর হাট।” একই বছরের পহেলা নভেম্বর ভিডিওটি শেয়ার করা হয় টিকটকে।
একই দাবিতে ভিডিওটি ২০২৩ সালেও একাধিক সামাজিক মাধ্যমে ছড়াতে দেখা যায়। এর মধ্যে ইউটিউবের একাধিক (১, ২, ৩) চ্যানেল রয়েছে। এছাড়া এক্সের (সাবেক টুইটার) একটি ভেরিফায়েড পেজ থেকে ভিডিওটির কয়েকটি স্ক্রিনশট নিয়ে সেটি গতবছরের কুরবানি ঈদের সময়ের বলে প্রচার করা হয়। পোস্টটির কমেন্টে সোর্স হিসেবে একটি ফেসবুক একাউন্টকে উল্লেখ করা হয়। এই ফেসবুক একাউন্টে একই স্ক্রিনশট ব্যবহার করে একই সেটি শেয়ার হতে দেখা যায়। পোস্টে বলা হয়, “অবৈধ ভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে হাজার হাজার গাই-গরু কোরবানি দিতে পাঠানো হয়েছে। এই দৃশ্যটা খুবই দুঃখজনক।”
ভিডিওটির প্রকৃত উৎস খুঁজে পাওয়া না গেলেও এটি নিশ্চিত করে বলা যায়, এটি কয়েক বছরের পুরানো। এছাড়া ঘটনাটি ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু পাচারের- এমন দাবি নাকচ করে কেউ কেউ বলছেন আসলে গবাদি পশু চরানোর দৃশ্য এটি।
পুরোনো ভিডিওটি এমন এক সময়ে শেয়ার করা হচ্ছে যখন ঈদুল আজহার কোরবানির বাজারকে ঘিরে বাংলাদেশে চোরাই পথে বিপুল সংখ্যক গরু ঢোকার খবর আসছে গণমাধ্যমে। বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে দেশের ডেইরি ফার্মাস অ্যাসোসিয়েশনের বরাতে বলা হয়, “গত এক মাসে দেড় লাখের মতো গরু প্রবেশ করেছে দেশে।”
এছাড়া চ্যানেল ২৪ এর একটি ভিডিও প্রতিবেদনেও সীমান্ত অতিক্রম করে ভারত থেকে দেশে গরু আসার বিষয়টি বলা হয়েছে। দুটি প্রতিবেদনেই ভারত থেকে গরু আসার কারণে নিজেদের পালিত গরুর কাঙ্খিত দাম নিয়ে খামারিরা শঙ্কায় আছেন বলে জানানো হয়েছে। গণমাধ্যমের এই প্রতিবেদনগুলোতেও ছড়িয়ে পড়া ভিডিও সদৃশ কোনো ছবি বা ফুটেজ পাওয়া যায়নি।