ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
হত্যাকাণ্ডের পুরোনো ভিডিও গণধর্ষণের ঘটনা হিসেবে প্রচার
This article is more than 1 month old

হত্যাকাণ্ডের পুরোনো ভিডিও গণধর্ষণের ঘটনা হিসেবে প্রচার

ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ২৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে গণধর্ষণের পর একজন নারীকে হত্যা করে গাছের সঙ্গে বেধে রাখার অভিযোগ করা হয়েছে। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে, ঘটনাটি এক বছরের পুরোনো এবং হত্যাকাণ্ডের একমাত্র আসামী ছিলেন ওই নারীর সাবেক স্বামী। এছাড়া ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ধর্ষণের কোনো অভিযোগ ছিল না।

ফেসবুকের একাধিক প্রোফাইল থেকে (, , ) শেয়ার করা ভিডিওতে একজন নারীকে গাছের সঙ্গে কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখা অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। বিবরণে লেখা হয়, “১৮ জন মিলে ধ*র্ষন শেষে গাছের সাথে বেঁধে হ*ত্যা। বর্ণনা দিলেন বাবা”। এরকম শেয়ার করা একটি পোস্ট এখন পর্যন্ত দুই লাখ ১৫ হাজারের বেশিবার দেখা হয়েছে এবং দেড় হাজারেরও বেশি ব্যবহারকারী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। ঘটনাটি সাম্প্রতিক ধরে নিয়ে এক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, “ধর্ষিত বাংলাদেশ! পুরো বাংলাদেশকে বিচারহীনতার এক জনপদ বানিয়েছে ইউনুস গং। সারাদেশে খুন, ধর্ষণ আজকে যেন অতি স্বাভাবিক একেকটি ঘটনা।”

মুজিব সৈনিক লালমাই নামে একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকেও একই ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “আমরা কি এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? আজ সুশীলরা কোথায়? গণমাধ্যম কেন চুপচাপ?” একই দাবিতে একাধিক ইউটিউব চ্যানেলেও (, ) ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়।

ভিডিওটিতে ‘দ্য সময়’ লেখা দেখতে পাওয়া যায়। কিওয়ার্ড ধরে খোঁজ করলে ফেসবুকে একই নামে একটি পেজ খুঁজে পাওয়া যায়। পেজটিতে এই ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছিল ২০২৪ সালের ৩০ মার্চ। তবে ওই পোস্টের বিবরণ ছিল ভিন্ন– “প্রথমে নিখোঁজ, দুই দিন পর গভীর জঙ্গলে পাওয়া গেল যুবতীর এমন নি° থ° র দে° হ…।” সেই ভিডিওটি শুরুর সাত সেকেন্ড পর এক ব্যক্তিকে কথা বলতে দেখা যায়। ভিডিওটিতে পরিচয় জানতে চাওয়া হলে তিনি নিজেকে মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলে পরিচয় দেন। লাশ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, মৃত নারী তার কন্যা, নাম রেখা বেগম।

এই তথ্যের ভিত্তিতে পুনরায় কিওয়ার্ড সার্চ করে প্রথম আলোসমকালসহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। এসব প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়– মূল ঘটনা ঘটেছিল ২০২৪ সালের ২৯ মার্চ, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায়। সেদিন একটি বনের ভেতর থেকে গাছের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় ১৫ বছর বয়সী কিশোরী রেখার মরদেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি মূলত সেই ঘটনার সময় ধারণকৃত ফুটেজ। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সে বছরের ৩০ মার্চ ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা থেকে তার সাবেক স্বামী রিয়াজ উদ্দিনকে (২৪) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যার দায় স্বীকার করে পুলিশকে জানান, তালাকের পর অন্য এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ের কথা চলছিল রেখার, যা তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাই কৌশলে রেখাকে বাড়ির পাশের জঙ্গলে ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।

অর্থাৎ, রেখা হত্যাকাণ্ডের এক বছর পুরোনো সেই ভিডিওটি নতুনভাবে গণধর্ষণের পর হত্যার ভুয়া দাবিতে শেয়ার করা হয়েছে।

এছাড়া, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া আরেকটি ভিডিওতে (, , ) দাবি করা হচ্ছে, এটি বাংলাদেশের একজন নারীর সাম্প্রতিক ধর্ষণবিরোধী প্রতিবাদের দৃশ্য, যেখানে তিনি পোশাক খুলে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। তবে যাচাই করে দেখা গেছে, ভিডিওটি পাঁচ বছর পুরোনো এবং ওই নারী ভারতের নাগরিক কিনকিনি তিতির সেনগুপ্ত। ২০২০ সালে তিনি তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে প্রথম ভিডিওটি পোস্ট করেন।

আরো কিছু লেখা