আহমেদ ইয়াসীর আবরার
গণপিটুনির পুরোনো ভিডিও সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার
আহমেদ ইয়াসীর আবরার
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে গণপিটুনি দেওয়ার ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হয়েছে এটি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার দৃশ্য। তবে যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওটি বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার এক বছরেরও পুরোনো একটি ঘটনার দৃশ্য, সাম্প্রতিক কোনো ঘটনার নয়।
“অচেনা এক বাংলাদেশ । সকলে রেডি থাকো । ডাক আসেছে । #StepDiwnYounus”– এমন বিবরণ দিয়ে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে ফেসবুকে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে একজন ব্যক্তি মাটিতে পড়ে আছেন এবং অনেকে তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করছেন। একজন নারীকে আহত অবস্থায় সেই ব্যক্তিকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে দেখা যায়। কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকেও দেখা যায় মারধর থামানোর চেষ্টা করতে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ভিডিওটিতে সাতশর বেশি রিয়্যাকশন দেখা গেছে। ৭৪টি মন্তব্য করা হয়েছে এবং পোস্টটি ২৪৮ বার শেয়ার করা হয়েছে।

‘আবদুল্লাহ আল ফয়সাল’ নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে একই ভিডিও পোস্ট করে লেখা হয়, “ইউনূসের নেতৃত্বে তথাকথিত ‘নতুন বাংলাদেশ’: এক দুঃস্বপ্ন যেখানে গণতন্ত্রকে চূর্ণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা তো দূরের কথা, জনতা প্রকাশ্যে পুলিশের সামনে জড়ো হয়, নাগরিকদের নির্মমভাবে মারধর করে এবং হত্যা করে। এটি কেবল আইন-শৃঙ্খলার ব্যর্থতা নয় – এটি একটি বর্বর, নৈরাজ্যবাদী সমাজের কাঁচা, কুৎসিত চেহারা।”
ভিডিওর সূত্র খুঁজতে গিয়ে ডিসমিসল্যাবের সামনে আসে ২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারিতে পোস্ট হওয়া একটি ভিডিও। “ঐতিহ্যবাহী বরমী – Oitijjobahi Barmi” নামের একটি গ্রুপে রমজান আলী রুবেল নামের ব্যক্তি এই ভিডিওটির একটি সংস্করণ পোস্ট করে লিখেন, “ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের এক মর্মান্তিক ঘটনা! আগে খুনি একজন হোমিও প্যাথি ডাক্তারকে প্রকাশ্য কুপিয়ে হত্যা করে তারপর একজন খুনিকে জনগণের গণপিটুনি থেকে বাচাতে অবুঝ মায়ের আর্থনাত, কবে শেষ হবে এ ধ্বংস লীলা।”
এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পোস্টদাতার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান যে তিনি একজন সংবাদকর্মী এবং বর্তমানে এশিয়ান টেলিভিশনে শ্রীপুর প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি নিশ্চিত করেন যে এটি সাম্প্রতিক কোন ঘটনার নয়, বরং ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার ভিডিও।

এই ঘটনা নিয়ে সেসময় গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয় (১, ২, ৩, ৪)। ২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, “ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে হারুন অর রশিদ (৫৫) নামের এক বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে উপজেলার পাইথল ইউনিয়নের গয়েশপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পরপরই এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে রুবেল মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে স্থানীয় লোকজন ধরে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছে। সেই সঙ্গে রুবেল মিয়ার বাড়িতে আগুন দিয়েছে এলাকাবাসী। ঘটনার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”
মানবজমিনে ১৬ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনেও বলা হয়, “ময়মনসিংহের গফরগাঁও পাগলা থানার গয়েশপুর বাজারে বিএনপি নেতা হারুন অর রশিদ (৫৫)কে প্রকাশ্য দিবালোকে গলা কেটে, কুপিয়ে খুন করেছে রুবেল নামে কুখ্যাত এক সন্ত্রাসী। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতা ঘাতক রুবেলের বাড়ি ঘেরাও করে রুবেল ও তার মা বিউটি আক্তারকে গনপিটুনি দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে।”

২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত ফেসবুক পোস্ট ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, ভিডিওটি প্রায় ১৬ মাসেরও বেশি পুরোনো এবং সেখানে যে ব্যক্তিকে মারধর করতে দেখা যাচ্ছে তার নাম রুবেল। ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের এক বিএনপি নেতাকে হত্যার অভিযোগে সেসময় তাকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল স্থানীয় জনতা।