ফাতেমা তাবাসুম

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
ভিডিওর এই ব্যক্তি নিহত সাংবাদিক তুহিন নন

ভিডিওর এই ব্যক্তি নিহত সাংবাদিক তুহিন নন

ফাতেমা তাবাসুম

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সম্প্রতি গাজীপুরে নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের মৃত্যুর আগে দেওয়া বক্তব্য দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়াতে দেখা গেছে। যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওটি সাংবাদিক তুহিনের নয়। একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভিডিওতে যে আহত ব্যক্তিকে বক্তব্য দিতে দেখা যাচ্ছে তার প্রকৃত নাম “বাদশা মিয়া।” তিনি হামলাকারীদের প্রথম আক্রমণের শিকার সেই ব্যক্তি, যার ভিডিও ধারণ করার পর হামলার শিকার এবং পরে নিহত হন তুহিন।

ফেসবুকের একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়, এটি গাজীপুরে নিহত সাংবাদিক তুহিনের মৃত্যুর আগে দেওয়া বক্তব্য। একই রকম দাবিতে ভিডিওটি একাধিক পেজ (, , ) ও প্রোফাইল (, , ) থেকেও শেয়ার করতে দেখা যায়। এক পেজ থেকে পোস্ট হওয়া এই ভিডিওটি এখন পর্যন্ত তিনশোর বেশি শেয়ার এবং চব্বিশ হাজারের বেশি ভিউ পেয়েছে। ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে এর ডান পাশে উপরের দিকে এক কোণায় “চ্যানেল টুয়েন্টিফোর” এর লোগোও দেখতে পাওয়া যায়। আরেক পোস্টে একই চ্যানেলকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

সম্প্রতি গাজীপুরে নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের মৃত্যুর আগে দেওয়া বক্তব্য দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়াতে দেখা গেছে। যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওটি সাংবাদিক তুহিনের নয়। একাধিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভিডিওতে যে আহত ব্যক্তিকে বক্তব্য দিতে দেখা যাচ্ছে তার প্রকৃত নাম “বাদশা মিয়া।”

ঘটনাটির সত্যতা যাচাইয়ে কি-ফ্রেম অনুসন্ধানে মূল ভিডিও প্রতিবেদন “চ্যানেল টুয়েন্টিফোর” এর ইউটিউব চ্যানেলফেসবুক পেজে খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। প্রতিবেদনের শিরোনামে লেখা, “যে ব্যক্তির উপর হামলার ভিডিও ধারণের জন্য করুণ পরিণতি সাংবাদিক তুহিনের।” তবে কিওয়ার্ড সার্চে চ্যানেলটির সূত্রে আরও কিছু পোস্ট পাওয়া যায়, যেখানে স্ক্রিনশটস্ক্রিন-রেকর্ডেড ভিডিওতে দেখা যায়, গণমাধ্যমটি প্রথমে ভিডিওর ব্যক্তিকে সাংবাদিক তুহিন দাবি করে আগে একটি পোস্ট করেছিল, যার ক্যাপশন ছিল, “মৃত্যুর আগে যা বলে গেলেন সাংবাদিক তুহিন।” পরবর্তীতে পোস্টটি সরিয়ে ফেলা হয়। এবং নতুন করে একই ভিডিও প্রকাশ করে শিরোনামে বলা হয়, “যে ব্যক্তির উপর হামলার ভিডিও ধারণের জন্য করুণ পরিণতি সাংবাদিক তুহিনের।” তবে ততক্ষণে ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে নিহত সাংবাদিক তুহিনের মৃত্যুর আগে দেওয়া বক্তব্য– দাবিতে।

  • চ্যানেল টুয়েন্টিফোর প্রথমে ভিডিওর ব্যক্তিকে সাংবাদিক তুহিন দাবি করে আগে একটি পোস্ট করে এবং পরবর্তীতে পোস্টটি সরিয়ে ফেলা হয় - ডিসমিসল্যাব
  • চ্যানেল টুয়েন্টিফোর প্রথমে ভিডিওর ব্যক্তিকে সাংবাদিক তুহিন দাবি করে আগে একটি পোস্ট করে এবং পরবর্তীতে পোস্টটি সরিয়ে ফেলা হয়

“চ্যানেল টুয়েন্টিফোর” ছাড়াও “কালের কণ্ঠ,” “ডেইলি সান বাংলা” ও “বৈশাখী টিভি নিউজ”-সহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমেও ভিডিওটি প্রকাশিত হতে দেখা যায়। প্রতিটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ভিডিওর আহত ব্যক্তি তিনিই, যার ওপর হামলার দৃশ্য ধারণ করেছিলেন সাংবাদিক তুহিন। কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে তার পরিচয় ‘বাদশা মিয়া’ উল্লেখ করা হয়। সেখানে বলা হয়, গাজীপুরে সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে হত্যার আগে অস্ত্রধারীরা ‘বাদশা মিয়া’র ওপর হামলার চেষ্টা করেছিল। পুলিশের ধারণা, ওই ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় তুহিনকে প্রাণ হারাতে হয়েছে।

কালের কন্ঠের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ভিডিওর ব্যক্তির নাম বাদশা মিয়া

সুতরাং, ভিডিওর ব্যক্তিটি গাজীপুরে নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন নয়, বরং প্রথম হামলার শিকার ‘বাদশা মিয়া।’ 

প্রসঙ্গত, গত ৭ আগস্ট গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় মসজিদ মার্কেটের সামনে দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩৮) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। হত্যার পর প্রাথমিক তদন্তের শেষে পুলিশ গণমাধ্যমকে জানায়, “চাঁদাবাজি নয়, বাদশা নামের এক ব্যক্তির ওপর হামলার ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় খুন হয়েছেন ওই সাংবাদিক।” ঘটনাটি শুরু হয় এক নারী ও পুরুষের বাকবিতণ্ডা থেকে, যা হাতাহাতিতে রূপ নিলে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা “বাদশা” নামের ওই পুরুষের ওপর হামলা চালায়। সেই দৃশ্য ধারণ করতে গিয়ে তুহিনও হামলার শিকার হন। দুর্বৃত্তরা তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে পালিয়ে যায়; এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। 

আরো কিছু লেখা