তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
রংপুরের পীরগাছার সংঘর্ষে কেউ মারা যায়নি
This article is more than 1 month old

রংপুরের পীরগাছার সংঘর্ষে কেউ মারা যায়নি

তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি সংঘর্ষের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ৮ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে রংপুরের পীরগাছায় সেনাবাহিনীর সামনেই হেযবুত তওহীদের উপর হামলা চালিয়েছে জামায়াত-শিবির। হামলায় কয়েকজন মারাও গেছে বলে জানানো হয় সেখানে। তবে রংপুরের স্থানীয় প্রশাসন, ভুক্তভোগী ও হেযবুত তওহীদের বিভাগীয় আমির, সাংবাদিক এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এই সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হলেও মারা যাবার কোনো ঘটনা ঘটেনি।

ফেসবুকের একাধিক পেজ ও ব্যক্তিগত প্রোফাইল (, , , , , , , , ) থেকে একই ভিডিও শেয়ার করে সংঘর্ষে জামাতের জড়িত এবং কয়েকজনের মারা যাওয়ার দাবি করা হয়েছে। বিবরণীতে বলা হচ্ছে, “জামাত শিবিরের হামলা… ৩/৪ জনের মরদেহ পরে আছে। সেনাবাহিনীর সামনেই হিযবুত তাওহীদের উপর অমানবিক নিষ্ঠুর হামলা চলে পীরগাছা, রংপুরে।।”

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে সংঘর্ষে লিপ্ত বেশকিছু ব্যক্তিকে লাঠিসোটা দিয়ে মারপিট করতে দেখা যায়। সেনাবাহিনী ও পুলিশের উপস্থিতিও ছিল সেখানে। ভিডিওতে একজনকে বলতে শোনা যায় প্রশাসনের সামনে হিযবুত তাওহীদ এবং আমজনতার মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। কয়েকটা লাশ পরে আছে বলেও জানান তিনি। ফুটেজে একাধিক ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় পরে থাকতে দেখা যায়। সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি অর্থাৎ যৌথবাহিনী থাকার পরও তারা কিছু করছে না বলে জানানো হয় সেখানে।

ঘটনায় প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে শুরুতে কিওয়ার্ড সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। উক্ত সার্চে এ সংক্রান্ত একাধিক সংবাদ প্রতিবেদন (, , , , ) পাওয়া যায়। প্রথম আলোর ২৪ ফেব্রুয়ারির প্রতিবেদনে বলা হয়, সেদিন সকাল ১০টার দিকে রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় একটি অনুষ্ঠান আয়োজনকে কেন্দ্র করে ‘স্থানীয় বাসিন্দাদের’ সঙ্গে হিযবুত তাওহীদের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় সংগঠনটির বিভাগীয় সভাপতিসহ ছয় কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। হতাহত সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয় উভয় পক্ষের ২৫-৩০ জন আহত হন এবং তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অন্যান্য প্রতিবেদনে ভিন্ন ভিন্ন আহতের সংখ্যা উল্লেখ থাকলেও সেখানে কেউ মারা গেছেন এমনটি জানানো হয়নি।

সংঘর্ষে কেউ মারা গেছে কি না – তা আরও নিশ্চিত হতে হেযবুত তওহীদের রংপুর বিভাগের আমির আব্দুল কুদ্দুস শামীমের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিসমিসল্যাব। শুরুতে তাকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি দেখানো হলে তিনি জানান ভিডিওতে ভাংচুর করা যে বাড়িটি দেখা যাচ্ছে, সেটি তার নিজেরই। তার বাড়িসহ আরও ৫-৬টি বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তবে এখানে মারা যাবার বিষয়টি সঠিক নয় বলে জানান আব্দুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, “হামলায় আমাদের ২৫ জনের মতো আহত হয়েছে; যার মধ্যে আশংকাজনক অবস্থায় আছেন ৪ জন, গুরুতর আহত প্রায় ৮ জন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো মারা যাওয়ায় ঘটনা ঘটেনি।” 

এ সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হতে পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিকীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিসমিসল্যাব। হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে তিনি জানান কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে এই সংঘর্ষে। তবে কেউ মারা যায়নি।

একই বিষয় জানিয়েছেন ডেইলি অবজারভারের রংপুর প্রতিনিধি লাবণী ইয়াসমিন। তিনি জানান সংঘর্ষে ২০-২৫ জন আহত হলেও সেখানে নিহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

সবশেষে হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে রংপুর মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সেখান থেকে বলা হয় এই সংঘর্ষে আহত হয়ে ২০-২৫ জন চিকিৎসা নিয়েছেন সেখানে। আশংকাজনক কয়েকজন থাকলেও সেটা একেবারে গুরুতর না হওয়ায় সবাই স্থিতিশীল আছেন। সেখান থেকেও নিশ্চিত করা হয় যে কেউ মারা যায়নি। 

আরো কিছু লেখা