ফাতেমা তাবাসুম
গণমাধ্যমের নাম ও নকল ফটোকার্ড দিয়ে অপতথ্য প্রচার
ফাতেমা তাবাসুম
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে ভুয়া তথ্য ও গুজব ছড়ানোর প্রবণতা এই সময়ে চোখে পড়ছে। নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহারের পাশাপাশি গণমাধ্যমের সূত্র ধরেও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। সম্প্রতি এ ধরনের তিনটি ঘটনা ডিসমিসল্যাবের নজরে এসেছে।
মূলধারার গণমাধ্যম যমুনা টেলিভিশনের নামে সম্প্রতি একটি ফটোকার্ড ও এই গণমাধ্যমের সূত্র ধরে দুটি ভুয়া খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি শেয়ার হতে দেখা যায়। এমনকি এই গণমাধ্যমের নামে খোলা গ্রুপে বিভ্রান্তিকরভাবে ছড়ানো হচ্ছে ভুয়া তথ্য। এই একই গ্রুপে যমুনা টেলিভিশনের নামে বানানো আরও একটি ভুয়া ফটোকার্ড খুঁজে পাওয়া যায়। ইতোমধ্যে একটি তথ্যকে গুজব জানিয়ে যমুনা টেলিভিশন তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে।
যমুনা টেলিভিশনের লোগো বসানো একটি ফটোকার্ডে দেখা যায় সম্প্রতি বিলুপ্ত সংসদের হুইপ ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজার ছবি; যেখানে বলা হয়েছে, “জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। আমি কোথাও যাবো না। ক্ষমাপ্রার্থনার প্রশ্নই আসে না। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু”। ডিসমিসল্যাব যমুনা টেলিভিশনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল কিংবা ওয়েবসাইটে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পায়নি। যমুনা টেলিভিশনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করার পর তারা জানায়, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ককে নিয়ে করা ফটোকার্ডটি “ভুয়া।”
প্রাণঘাতী সংঘর্ষ, ইন্টারনেট শাটডাউন ও কারফিউয়ের মতো অস্থিরতার মধ্যে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। তার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের হয়েই গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইল-২ আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও সংসদ সদস্য ছিলেন মাশরাফি। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর নড়াইলে মাশরাফির বাড়িতে ভাঙচুর চালানোর এক পর্যায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। এরপর ৭ আগস্ট সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায় এই ভুয়া ফটোকার্ডটি।
এছাড়া যমুনা টেলিভিশনকে সূত্র দেখিয়ে আরও একটি দাবি অনেক ব্যবহারকারীকে (১, ২, ৩) শেয়ার করতে দেখা যায় ফেসবুকে। দাবিতে বলা হয়, “শুধু পুলিশ বিভাগেই চাকরি করতো ভারতের ৮০ হাজার লোক।” এমন দাবিতে ছড়ানো পোস্টগুলোর একটি এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত শেয়ার করা হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার বার।
ডিসমিসল্যাব যমুনা টেলিভিশনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল কিংবা ওয়েবসাইটে এমন কোনো তথ্য খুঁজে পায়নি। ৭ আগস্ট দুপুরে তথ্যটিকে গুজব জানিয়ে যমুনা টেলিভিশন তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে একটি বিবৃতি ও ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে বিশিষ্ট গণমাধ্যম প্রথম আলোর সূত্র ধরে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (১, ২, ৩) প্রচার হতে দেখা যায়। এতে দাবি করা হয় “প্রথম দিনেই ৬২ হাজার গ্রামে লুটপাট”। যা অনেকে শেয়ারও করছেন। ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে প্রথম আলোর ওয়েবসাইট বা পত্রিকায় এমন কোনো খবরের সন্ধান মেলেনি। ৬ আগস্ট “দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়ি-দোকান-উপাসনালয়ে হামলা” শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রথম আলোর বিশাল বাংলা ডেস্কে প্রকাশিত হয়েছে; তবে এই প্রতিবেদনে “৬২ হাজার গ্রামে লুটপাট”– এমন কোনো তথ্যের উল্লেখ নেই। পরবর্তীতে প্রথম আলোর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায় যেখানে জানানো হয়, প্রথম আলোর নামে ছড়ানো আলোচ্য তথ্য প্রথম আলো প্রচার করেনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সরকার পতনকে ঘিরে গত এক সপ্তাহে এরকম বেশ কিছু ভুয়া ফটোকার্ড (১, ২, ৩) ও গণমাধ্যমের সূত্র (১, ২, ৩) ধরে ভুয়া খবর প্রচার হতে দেখা গিয়েছে। এসকল ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য নিয়ে প্রতিনিয়ত ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন (১, ২, ৩) প্রকাশ করে চলেছে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।