মো. তৌহিদুল ইসলাম
গাজীপুরে গণধর্ষণের দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে ভিন্ন ঘটনার ভিডিও
মো. তৌহিদুল ইসলাম
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, গাজীপুরে আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার পথে রাস্তায় গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে, দাবিটি ভুয়া। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভিডিওটি এক মাস আগে রংপুরের তারাগঞ্জে চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা হয়, “গাজীপুরে আত্মীয়র বাসায় বেড়াতে যাওয়ার পথে রাস্তায় গণধ’র্ষণের শিকার হয়েছে মেয়ে। ইট দিয়ে থে’তলে দেয়া হয়েছে বাবার মাথা।” ২৬ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায় একজন নারী মাটিতে বসে কান্না করছেন। এসময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে। ভিডিওটির আবহ সঙ্গীতে, “এ শহর কাঁদে, মানুষ মরে” লিরিক্সের গানও শোনা যায়। প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ভিডিওটি ৬০০ বারের বেশি শেয়ার করা হয়েছে এবং ৯০ হাজারেও বেশিবার দেখা হয়েছে। ভিডিওটি আরো কিছু ফেসবুক পেজ ও আইডি (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬) থেকে একই দাবিতে শেয়ার করা হয়েছে।

ঘটনাটির সত্যতা যাচাইয়ে, একাধিক কিফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে সংবাদমাধ্যম এটিএন নিউজ টেলিভিশনের ফেসবুক পেজে হুবহু একই দৃশ্যের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। গত ১১ আগস্ট ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছিল। ৯ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডের ভিডিওটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফেসবুকে বর্তমানে যে ভিডিওটি শেয়ার করা হচ্ছে তা মূলত এই লম্বা সংস্করণের ভিডিওর দুটি আলাদা অংশ থেকে কেটে তৈরি করা হয়েছে। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর প্রথম ১৫ সেকেন্ডের সঙ্গে এটিএন নিউজের পেজে পোস্ট হওয়া ভিডিওটির ১০ সেকেন্ড থেকে ২৫ সেকেন্ডের হুবহু রয়েছে। আবার পরের ১১ সেকেন্ড মিলে যায় এটিএন নিউজে আপলোড হওয়া ভিডিওর ৫৫ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ৬ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশের সঙ্গে।
এটিএন নিউজে পোস্ট হওয়া ভিডিওটির বিবরণে বলা হয়, “যাচ্ছিলেন বিয়ের দিন ঠিক করতে, চোর সন্দেহে জামাই-শ্বশুরকে পিটিয়ে হ*ত্যা।” একই বিবরণে সংবাদমাধ্যমটির ইউটিউব চ্যানেলেও ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়।

ঘটনাটি সম্পর্কে অধিকতর যাচাইয়ে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখে ডিসমিসল্যাব। দেখা যায়, একাধিক সংবাদমাধ্যম ঘটনাটি নিয়ে সেসময় সংবাদ প্রচার করেছিল। সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোতে প্রকাশিত গত ১০ আগস্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৯ আগস্ট রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলায় সয়ার ইউনিয়নের বুড়িরহাট বটতলা এলাকায় ভ্যানচোর সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন কুর্শা ইউনিয়নের রুপলাল দাস ও মিঠাপুকুরের প্রদীপ দাস।

প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়– রুপলালের মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলতে প্রদীপ ভ্যানে করে তাঁর বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। এক পর্যারে পথ হারিয়ে ফেললে রুপলাল প্রদীপকে এগিয়ে নিতে আসেন। পরে দুজনে একসঙ্গে ফেরার সময় বটতলা নামক জায়গার স্থানীয়রা তাঁদের থামায়। ওই এলাকায় আগে থেকেই ভ্যান চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ফলে ভ্যানচোর ভেবে দুইজনকে মারধর করা হয় এবং অচেতন অবস্থায় বিদ্যালয়ের মাঠে ফেলে রাখা হয়। এতে রুপলাল ও প্রদীপ মারা যান।
এটিএন নিউজের প্রকাশিত ভিডিওতে কাঁদতে থাকা নারী, পুলিশের জিজ্ঞসাবাদে রুপলাল ও প্রদীপের নাম উল্লেখ করেন। এছাড়াও সংবাদমাধ্যমটির ভিডিওতে থাকা স্থানীয়দের ভাষ্যের সঙ্গে প্রথম আলোর প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখিত ঘটনার মিল রয়েছে।
অর্থাৎ, ভিডিওটি গাজীপুরের কোনো গণধর্ষণের ঘটনার নয়। এক মাস আগে রংপুরের একটি ভিন্ন ঘটনাকে ভুয়া দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে বর্তমানে শেয়ার করা হচ্ছে।