স্টিভ সালগ্রা রেমা

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
প্রতিদিন নয়, বছরে অপচয় হয় ১০০ কোটি টন খাদ্য

প্রতিদিন নয়, বছরে অপচয় হয় ১০০ কোটি টন খাদ্য

স্টিভ সালগ্রা রেমা

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

বিশ্বে প্রতিদিন ১০০ কোটি টন খাদ্যের অপচয় হয়– এমন শিরোনাম দিয়ে সম্প্রতি সংবাদ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। ফেসবুকে তথ্যটি প্রচারিত হয়েছে ফটোকার্ড আকারে। এমন দাবি সম্বলিত কিছু ভিডিও-ও আপলোড হতে দেখা গেছে ইউটিউবে। তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায় দাবিটি ভুল। প্রতিদিন নয়, বরং ২০২২ সালের হিসেব অনুযায়ী, পুরো বছরে বিশ্বজুড়ে অপচয় হয়েছে ১০০ কোটি টনের বেশি খাবার।

গত ২৭ মার্চ জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) তাদের খাদ্য অপচয় সূচক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে দেখানো হয়, বিশ্বে ২০২২ সালে বাসাবাড়ি, খাদ্যসেবা ও খুচরা পর্যায়ে মোট যে পরিমাণ ব্যবহারযোগ্য খাদ্য ছিল, তার প্রায় ১৯ শতাংশ অর্থাৎ একশ কোটি টনের বেশি খাবার অপচয় হয়েছে। এরপর ২৮ মার্চ সকাল ৭টা ৫৪ মিনিটে ডিবিসি নিউজে “বিশ্বে প্রতিদিন ১০০ কোটি টন খাদ্য নষ্ট হয় বাড়িঘরে: জাতিসংঘ” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর চার মিনিট পর ৭টা ৫৮ মিনিটে একই শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক ইনকিলাব। ২৯ মার্চ এমন তথ্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে সময় টিভি, চ্যানেল-২৪, আরটিভি, দেশ রূপান্তর, প্রতিদিনের সংবাদ। একই ভুল দেখা যায় ৩০ মার্চ যায়যায়দিন-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে।

কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম ফেসবুকে এমন ভুল তথ্য দিয়ে ফটোকার্ড (, ) প্রকাশ করেছে। এবং অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী সেগুলো শেয়ার করেছেন। এমনই একজন ব্যবহারকারী সময় টিভির ফটোকার্ড শেয়ার করে লিখেছেন, “আর এইদিকে ফিলিস্তিনের মুসলমান না খেয়ে মারা যাচ্ছে বাঁচার তাগিদে ঘাস খাচ্ছে”। আরেকজন ব্যবহারকারী চ্যানেল-২৪ এর ফটোকার্ড আপলোড করে লেখেন, “প্রতিদিন বিশ্বে অভুক্ত থাকছে ৮০ কোটি মানুষ। বিশ্বে দৈনিক নষ্ট হচ্ছে ১০০ কোটির বেশি খাবার। জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।” কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেলেও (, ) আপলোড করা হয়েছে এমন ভুল দাবি সম্বলিত ভিডিও। 

জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির খাবার অপচয় সূচক প্রতিবেদন-২০২৪ অনুযায়ী, ২০২২ সালে ১.০৫ বিলিয়ন (১০৫ কোটি) টন খাদ্য অপচয় হয়েছিল। এর ২৮ শতাংশ খাবার রেস্তোরাঁ, ক্যান্টিন, ও হোটেলের মতো খাদ্য সেবা সংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোতে অপচয় হয়েছে। কসাই ও মুদি দোকানে অপচয় হয়েছে ১২ শতাংশ খাবার। তবে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ৬০ শতাংশ খাবার অপচয় হয়েছে বাসাবাড়িতে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে বসতবাড়িতে গড়ে একজন মানুষ বছরে ৮২ কেজি খাবার অপচয় করেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মালদ্বীপে এই অপচয়ের পরিমান ২০৭ কেজি, পাকিস্তানে ১৩০ কেজি, আফগানিস্তানে ১২৭ কেজি, নেপালে ৯৩ কেজি, শ্রীলঙ্কায় ৭৬ কেজি এবং ভারতে গড়ে ৫৫ কেজি। ভুটানে এই হার সবচেয়ে কম, যেখানে প্রতি ব্যক্তি গড়ে ১৯ কেজি খাদ্য অপচয় করে।

জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই বিষয়ে আরো বিশদ তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে ইউএনইপির নির্বাহী পরিচালক ইনসার এন্ডারসেনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘খাদ্য অপচয় একটি বৈশ্বিক ট্র্যাজেডি। সারা বিশ্বে খাদ্য নষ্ট হওয়ায় লাখ লাখ মানুষ আজ ক্ষুধার্ত ।

ইউএনইপির অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলেও “২০২২ সালে বিশ্বে ১.০৫ বিলিয়ন টন খাদ্যের অপচয় হয়েছিল” এমন তথ্য পাওয়া যায়।

আরো কিছু লেখা