ফাতেমা তাবাসুম
প্রশ্নফাঁস কাণ্ডে একাধিক ভুয়া দাবি ফেসবুকে, সর্বশেষ যুক্ত সুশান্তর নাম
ফাতেমা তাবাসুম
৩০তম বিসিএসে প্রথম স্থান অধিকারী সুশান্ত পালকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দৈনিক কালবেলার লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড (১, ২, ৩) ছড়াতে দেখা গেছে। এতে দাবি করা হয়, সুশান্ত পাল ফাঁস হওয়া প্রশ্নে প্রথম হয়েছেন। বিভিন্ন ফেসবুক পোস্টে আরো দাবি করা হয়, আবেদ আলীর ১০৫ জনের একটি তালিকা দিয়েছেন, যার ১১তম স্থানে সুশান্ত পালের নাম রয়েছে। তবে যে ফটোকার্ডটি ঘিরে এমন দাবি করা হচ্ছে, তা “কালবেলার প্রকাশিত নয়” বলে জানিয়েছে তারা।
“সুশান্ত পাল ফাঁস হওয়া প্রশ্নে প্রথম হয়েছে” কিংবা “৩০ তম বিসিএসে রেকর্ড মার্ক পেয়ে প্রথম হওয়া “সুশান্ত পাল” ফাঁস হওয়া প্রশ্নে প্রথম হয়েছে” এমন দাবিতে ১৩ জুলাই সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন প্রোফাইল, পেজ ও গ্রুপে পোস্ট ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। বেশকিছু পোস্টে কালবেলার লোগো সম্বলিত একটি ফটোকার্ড যোগ করা হয়, যাতে লেখা “প্রশ্নফাঁস কান্ডে দোষী সাব্যস্ত হলেন সুশান্ত পাল”।
মূলধারার গণমাধ্যম কালবেলা জানায়, সুশান্ত পাল ফাঁস হওয়া প্রশ্নে প্রথম হয়েছে এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করেনি তারা। আবার, ১৩ জুলাই দুপুর দেড়টায় এই গণমাধ্যমের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “কালবেলার লোগো সম্বলিত যে ফটোকার্ড সামাজিকমাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে সেটিও কালবেলার প্রকাশিত নয়।”
তবে সুশান্ত পালকে নিয়ে এর ঘণ্টাখানেক আগে বেলা ১২টা ১১ মিনিটে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমটির অনলাইন সংস্করণে। যার শিরোনাম ছিল “ আমি আপনার ফরমায়েশের চাকর নই: সুশান্ত পাল”। চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনে নিজের কোনো বক্তব্য না দেওয়া নিয়ে সুশান্ত পালের করা একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ঘিরে তৈরি এই প্রতিবেদনটি।
যাচাইয়ে দেখা যায়, ফাঁস হওয়া প্রশ্নে বিসিএস উত্তীর্ণ হয়েছেন এমন কোনো নাম আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও প্রকাশ করা হয়নি। কালবেলার ওয়েবসাইট ও অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ বা অন্য সব মাধ্যমে আলোচিত দাবি সংক্রান্ত কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশিত হতে দেখা যায়নি।
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং বিসিএস প্রশ্নফাঁস কাণ্ড ঘিরে তোলপাড়ের মধ্যে নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে গত ১২ জুলাই শুক্রবার রাত ৯টা ৩৮ মিনিটে একটি পোস্ট করেন সুশান্ত পাল। তিনি লেখেন, “কোটা এবং প্রশ্নফাঁস বিষয়ে কিছু না লিখলে যদি আপনাদের খারাপ লাগে, তাহলে এত কথা না বলে আমাকে আনফলো করে দিন। … এসব নিয়ে আমি আপনার মনের মতো করে লিখব না। এটা আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। … আমি আপনার ফরমাশের চাকর নই।” এরপর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দেখা যায়।
১৩ জুলাই সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে একটি ফেসবুক গ্রুপে নাম গোপন রেখে কেউ একজন পোস্ট করেন: “সুশান্ত পাল ফাঁস হওয়া প্রশ্নে প্রথম হয়েছে.. আবেদ আলীর প্রশ্ন সাপ্লায়ের ১০৫ জন লিস্টের ১১ নাম্বারে সুশান্ত পালের নাম।“ এর প্রায় আধ ঘণ্টা পর সকাল ৯টা ২৪ মিনিটে একটি ব্যক্তিগত আইডি থেকে পোস্ট করা হয়: – “ব্রেকিং…সুশান্ত পাল ফাঁস হওয়া প্রশ্নে প্রথম হয়েছে.. আবেদ আলীর প্রশ্ন সাপ্লায়ের ১০৫ জন লিস্টের ১১ নাম্বারে সুশান্ত পালের নাম“। পরে আরও বহু আইডি, গ্রুপ ও পেজ থেকে একই দাবি করা হয়। তবে সুশান্ত পালের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত কোনো সরাসরি বক্তব্য বা পোস্ট দিতে দেখা যায়নি। তবে শুক্রবারের পোস্টের নিচে শনিবার সকাল ৬টা ৪৪ মিনিটে তিনি মন্তব্য করেন: “বিভিন্ন জায়গায় আমাকে নিয়ে দেখলাম খুব ম্যাসিভ আকারে চর্চা শুরু হয়ে গেছে। আমার হাসি পাচ্ছে, কেননা যে-বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছে, তার সাথে আমার বিন্দুমাত্রও সংযোগ নেই। আপনারা কী কারণে এভাবে একজন লোককে ক্রমাগত বিরক্ত করে যাচ্ছেন, আমার কাছে তা অস্পষ্ট। নিশ্চয়ই আপনারা ক্যান্ডিডেট নন, আপনারা কেবলই ফ্যাসাদ সৃষ্টি করার ব্যাপারে আগ্রহী। ভুল তো আপনাদের নয়, আমার। কখনও বিনা পয়সায় বাঙালির উপকার করতে নেই। আপনাদের বোধোদয় হোক।“
এর বাইরে সরকারি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর নাম উঠে আসার পর সম্প্রতি ‘বিসিএস,’ কিংবা ‘পিএসসি,’ সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরণের গুজব সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। যেমন, ১১ জুলাই “পিএসসি’র কর্মকর্তার বউ আড়াই কেজি স্বর্ণ শরীরে লাগিয়ে ছবি তুলেছে,”– দাবি করে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীকে একটি ভুল ছবি শেয়ার করতে দেখা যায়। পোস্টে পিএসসির কোন কর্মকর্তা তা নির্দিষ্ট করে বলা না থাকলেও ব্যবহার করা ছবিটি ছিল জামালপুর জেলার বুলবুল জেনারেল হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ আশরাফুল ইসলাম (বুলবুল) ও তার স্ত্রী ডা. নাহিদা পিংকির; যা খুব সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হতে দেখা গিয়েছিল। পরবর্তীতে ভাইরাল ছবিটি তাদের আইডিতে না পাওয়া গেলেও একই দম্পতির বেশ কিছু ছবি বুলবুল আশরাফুল নামের ফেসবুক আইডি থেকে নানা সময়ে পোস্ট হতে দেখা যায়।