আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
ওয়াজ মাহফিলের কারণে মন্দির ঢেকে রাখার দাবিটি সঠিক নয়

ওয়াজ মাহফিলের কারণে মন্দির ঢেকে রাখার দাবিটি সঠিক নয়

আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

ওয়াজ মাহফিলের কারণে সিলেটের গোপালটিলায় একটি মন্দির ঢেকে রাখা হয়েছে– এমন দাবিতে সম্প্রতি বেশকিছু পোস্ট ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। একাধিক পোস্টে মন্দিরের কয়েকটি ছবি শেয়ার করে বলা হচ্ছে– মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীর মাহফিলের কারণে মাহফিল থেকে ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গোপালটিলা শিব মন্দির আপাদমস্তক ঢেকে দেওয়া হয়েছে। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে, ওয়াজ মাহফিলের কারণে নয়, মূলত স্বরস্বতী পূজার প্রতিমা তৈরির জন্য মন্দির কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে সেটি কয়েক স্তরের তেরপল দিয়ে ঢেকে রেখেছে।

হিন্দু ভয়েজ নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ জানুয়ারি গোপালটিলার শ্রী শ্রী শিব মন্দিরের একটি ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে বলা হয়, “খবর আসছে বাংলাদেশের সিলেট জেলা থেকে। স্থানীয় মুসলিমদের আপত্তির কারণে ঢেকে দেওয়া হয়েছে একটি শিব মন্দির। মিজানুর রহমান আযহারী নামের একজন মাওলানা ওয়াজ করছেন। মুসলিমরা মন্দিরের সামনের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করছে। তারা মন্দির এবং মূর্তি নিয়ে আপত্তি করেন।” একই দাবিতে পোস্ট করা হয়েছে আরও কিছু এক্স (, , ) ও ফেসবুক (, , , ) অ্যাকাউন্ট থেকে।

দাবিটি যাচাই করতে গেলে ডিসমিসল্যাবের সামনে আসে হাসান আল মাহমুদ নামের এক ব্যক্তির একটি ফেসবুক পোস্ট। সেখানে মাহফিলের কারণে মন্দির ঢেকে রাখার দাবি করা হয়েছে– এমন কিছু এক্স ও ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট যুক্ত করে তিনি লিখেছেন, “এরকম কয়েক হাজার পোস্টে সয়লাব হয়ে গেছে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম। দাবি করা হচ্ছে মন্দির দেখলে গুনাহ হবে তাই আজহারীর সাম্প্রতিক ওয়াজ উপলক্ষে সিলেটে একটি মন্দির কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ছবিটা গোপালটিলা মন্দিরের। মূলত সরস্বতীর প্রতিমা তৈরি উপলক্ষে প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে যাতে করে কুয়াশায় প্রতিমাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ওয়াজের ৩ দিন আগ থেকেই প্লাস্টিক টাঙ্গানো হয়েছে, ওয়াজ শেষ হওয়ার পর প্লাস্টিকগুলো এখনও সেখানে আছে এবং আরও কয়েকদিন থাকবে।” 

বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ডিসমিসল্যাব সেই ফেসবুক ব্যবহারকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি মন্দিরটির একাধিক ছবি এবং মন্দিরের সেবায়তের একটি ভিডিও বক্তব্য পাঠান ডিসমিসল্যাবকে। ভিডিওটিতে সেবায়তকে বলতে শোনা যায় মন্দিরের ভেতরে প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে। প্রতিমাগুলো যেন কুয়াশায় ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেজন্য সেগুলো ঢেকে রাখা হয়েছে।

এই বিষয়ে আরও জানতে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করে গোপালটিলা সার্বজনীন পূজা মণ্ডপের সাধারণ সম্পাদক হিমাদ্রি কর পুরকায়স্থের সঙ্গেও। তিনি জানান, “সরস্বতী পূজা উপলক্ষে মন্দিরে প্রতিমা বানানোর কাজ চলমান। এই কারণেই মূলত মন্দিরের ঐ অংশটুকু ঢেকে রাখা হয়েছে যেন কাজে কোন ব্যাঘাত না ঘটে।” এছাড়া তিনি বলেন, মাহফিল আয়োজক কমিটি মন্দির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে মন্দিরের আশেপাশে যেন কোনো দোকান না বসে সে ব্যবস্থা করেছে। মন্দির ঢেকে রাখার সঙ্গে মাহফিলের কোন সম্পর্ক নেই বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ৯, ১০ ও ১১ জানুয়ারি সিলেটের এমসি কলেজ মাঠে ৩ দিনব্যাপি “ঐতিহাসিক তাফসীরুল কুরআন মাহফিল ২০২৫” আয়োজন করে আনজুমানে খেদমতে কুরআন সিলেট নামের একটি সংগঠন। এই মাহফিলে তাফসীর পেশকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ড. মিজানুর রহমান আজহারি।

আরো কিছু লেখা