মিনহাজ আমান

রিসার্চ-লিড, ডিসমিসল্যাব
মিসৌরির ব্যাচেলর ট্যাক্স: খবরে আছে, বাস্তবে নেই
This article is more than 1 year old

মিসৌরির ব্যাচেলর ট্যাক্স: খবরে আছে, বাস্তবে নেই

মিনহাজ আমান

রিসার্চ-লিড, ডিসমিসল্যাব

বাংলাদেশের একাধিক মূলধারার সংবাদমাধ্যমে (, , , , , , ) প্রকাশিত খবরে দাবি করা হয়েছে যে আমেরিকার মিসৌরি অঙ্গরাজ্যে অবিবাহিত থাকলে পুরুষদের কর (ব্যাচেলর ট্যাক্স) দিতে হয়। চলতি ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত খবরগুলোতে বলা হয়, ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সীদের জন্যে ধার্য করা এক ডলারের এই বাৎসরিক কর ১৮২১ সাল থেকে চলছে। কিন্তু যাচাই করে দেখা গেছে দাবিটি ভুল এবং বেশিরভাগ গণমাধ্যম যে ওয়েবসাইটের সূত্রে খবরটি প্রকাশ করেছে সেখানেই বলা হয়েছে করটি আরোপের পরের বছরই বাতিল করা হয়েছে।

  • ব্যাচেলর ট্যাক্স ফ্যাক্টচেক
  • ব্যাচেলর ট্যাক্স ফ্যাক্টচেক
  • ব্যাচেলর ট্যাক্স ফ্যাক্টচেক
  • ব্যাচেলর ট্যাক্স ফ্যাক্টচেক

এ সংক্রান্ত ৭টি খবরের মধ্যে ৪টিতে ‘মেল ম্যাগাজিন’ নামে একটি সূত্রের কথা বলা হয়েছে। বাকি ৩টি খবরে কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। ২০২২ সালের ১৯ এপ্রিল ‘দ্য ভেরি আনসাক্সেস্ফুল হিস্ট্রি অফ ব্যাচেলর ট্যাক্সেস’ শিরোনামে মেল ম্যাগাজিনের সাইটে লেখাটি প্রকাশিত হয়, যেখানে মূলত অবিবাহিতদের ওপর নানা সময়ে আরোপ করা করের ব্যর্থতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। 

প্রতিবেদনটির এক জায়গায় বলা হয়, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পর থেকে অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে অবিবাহিতদের জন্য কোনো কর ছিল না। কিন্তু ১৮২১ সালে মিসৌরিতে প্রথম প্রাদেশিকভাবে ২১ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য বছরে ১ ডলার কর ধার্য করা হয়।” 

একই প্রতিবেদনের ঠিক পরের অংশেই বলা হয়, “স্বাভাবিকভাবে পরের বছরই সে করের ইতি ঘটে। কিন্তু একইরকম কর ধার্যের ঘটনা পরবর্তী ১০০ বছরে আরো ৮টি অঙ্গরাজ্যে প্রস্তাব (এবং পরে প্রায় প্রত্যেকবারই বাতিল) করা হয়।” কিন্তু বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এই তথ্যটি উল্লেখ করা হয়নি।  

বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলোতে (একটি ব্যতীত) অবিবাহিতের পরিবর্তে “প্রেমিকা না থাকলে” কর দিতে হয় যে দেশে বলে শিরোনাম করা হয়েছে। কিন্তু মেল ম্যাগাজিনের কোথাও প্রেমিকার বিষয়টি উল্লেখই করা হয়নি। 

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, অবিবাহিতদের জন্য কর অসফল হলেও আরো নানা রূপে এধরনের আর্থিক শাস্তি আজও রয়ে গেছে বলে পুুরুষ-অধিকার কর্মীরা বিশ্বাস করেন। এতে পুরুষ-অধিকার কর্মীরা দেশটির বর্তমান আয়কর কাঠামোতে বিবাহিত ও অবিবাহিত পুরুষদের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্যের উদাহরণ টানেন। বিষয়টি বাংলাদেশের প্রতিবেদনগুলোতে আসেনি বরং মিসৌরির পুরনো বিধান এখনো বলবৎ রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

মিসৌরির এই করের ব্যাপারে আরো নিশ্চিত হতে সেন্টার ফর মিসৌরি স্টাডিজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সেখানকার জ্যেষ্ঠ ইতিহাস সংরক্ষক এলিজাবেথ ই এঙ্গেল ডিসমিসল্যাবকে জানান, “মিসৌরিতে এমন কর আরোপের ঘটনা ঘটেছিল ১৮২১ সালে। ১৮২২ সালেই সেটি বাতিল হয়েছে।” 

গত জুলাইয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম, কেআরসিইউ পাবলিক রেডিওর সাইটে মিসৌরির ইতিহাস সংরক্ষণে কাজ করা কেপ জিরার্ডো রিসার্চ সেন্টারের সমন্বয়ক অধ্যাপক বিল এডেলম্যান লেখেন, “কেউ কেউ যুক্তি দিয়েছিলেন যে করটি বিয়ে করা এবং পরিবার প্রতিষ্ঠাকে উৎসাহিত করার একটি উপায় হয়ে থাকবে। মিসৌরিতে পুরুষের সংখ্যা বেশি ছিল, বিশেষ করে যুবকদের, যা সীমান্ত এলাকায় একটি সাধারণ বিষয়।” 

একই লেখার শেষাংশে তিনি বলেন, “অবিবাহিতেরা কেবল ১৮২১ সালে একবারই কর দিয়েছিলেন। এখনো প্রাদেশিক আইন হিসেবে এটি টিকে আছে বলে ভুল ধারণা রয়েছে, কিন্তু ১২ জানুয়ারি ১৮২২ এ সাধারণ পরিষদ অবিবাহিতদের জন্য করটি বাতিল করে।” 

অর্থাৎ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরিতে এখনো অবিবাহিতদের কর (ব্যাচেলর ট্যাক্স) দিতে হয় বলে খবরে প্রকাশিত দাবিটি সঠিক নয়।

আরো কিছু লেখা