তৌহিদুল ইসলাম রাসো
উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ছড়াচ্ছে এআই দিয়ে তৈরি ছবি
তৌহিদুল ইসলাম রাসো
রাজধানীর উত্তরায় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয় আজ ২১ জুলাই দুপুরে। উড্ডয়নের পরেই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয় বিমানবাহিনীর এফ-৭ বিজিআই প্রশিক্ষণ বিমান। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিধ্বস্ত বিমানের ছবি দাবিতে ছড়াতে দেখা যায় কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই দিয়ে তৈরি বেশকিছু ছবি। ডিসমিসল্যাব এমন অন্তত পাঁচটি ছবি দেখতে পেয়েছে যেগুলো উত্তরায় বিধ্বস্ত বিমানের দাবিতে ছড়ানো হয়েছে।
১ম ছবি
ফেসবুকের একটি গ্রুপ থেকে তিনটি ছবি সম্বলিত একটি পোস্টে বলা হচ্ছে উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা এটি। যাচাইয়ে দেখা যায়, তিনটি ছবির মধ্যে দুইটি এই ঘটনার হলেও যে ছবিতে স্কুলের ভবনের সামনে বিমান দেখা যাচ্ছে সেটি এআই দিয়ে তৈরি।

যে ছবিটিতে বিমান দেখা যাচ্ছে সেটি এআই দিয়ে তৈরি কি না তা যাচাইয়ে “হাইভ মডারেশন” ও “এআইঅরনট” টুলে আলাদাভাবে ছবিটি যাচাই করা হয়। দেখা যায় এই দুটি টুলই বলছে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি করার সম্ভাবনা প্রবল। খালি চোখে ছবিটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সেখানে ইংরেজিতে লেখা “স্কুল” ও “কলেজ” বানান ভুল। এছাড়া বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে মাইলস্টোন স্কুলের একটি ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেছে কিন্তু এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে বিমানটি স্কুলের মাঠে দাড় করানো এবং তার একপাশে আগুন জ্বলছে। অর্থাৎ, এআই দিয়ে তৈরি করে এই ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করা হচ্ছে বিধ্বস্ত বিমানের দাবিতে।
২য় ছবি
ফেসবুকের একটি পেজ থেকে যাত্রীবাহী এক বিমানের ছবি পোস্ট করে বলা হচ্ছে এটি উত্তরায় প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ছবি। অনলাইন পোর্টালের একটি প্রতিবেদনেও ছবিটিকে উত্তরার বিমান দুর্ঘটনার বলে প্রচারিত হয়েছে।

তবে যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে সেটি কোনো যাত্রীবাহী বিমান নয়, বরং প্রশিক্ষণ বিমান। এছাড়া ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি কি না তা টুলের সাহায্যে যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায় এটি এআইয়ের মাধ্যমে তৈরির সম্ভাবনা প্রবল। এছাড়া ছবিতে যে বিমানটি দেখা যাচ্ছে সেটি একটি খোলা মাঠের মাঝখানে দেখা যাচ্ছে এবং চারপাশে অনেক আগুন দেখা গেলেও বিমানটি অক্ষত আছে। তবে মূল বিমানটি মাইলস্টোন স্কুলের একটি ভবনের গিয়ে বিধ্বস্ত হয়।
৩য় ছবি
এক ভবনের সামনে বিধ্বস্ত বিমানের ছবি পোস্ট করা হয়েছে একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে। বলা হচ্ছে এটি উত্তরার দিয়াবাড়ী মাইলস্টোন কলেজে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের।

ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি কি না তা ভিন্ন ভিন্ন টুলের মাধ্যমে যাচাই করে দেখা যায় এটি এআই দিয়ে বানানোর সম্ভাবনা প্রবল। এছাড়া বিমান বিধ্বস্তের প্রকৃত ঘটনার সঙ্গে এই ছবিটির পার্থক্য যাচাইয়ে দেখা যায় মূল বিমানটি ভবনে ঢুকে বিধ্বস্ত হয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে কিন্তু ফেসবুকের ছবিতে দেখা যাচ্ছে সেখানে মোট দুটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। একটি বিমান প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে আর আরেকটির কিছু অংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
৪র্থ ছবি
তিনটি ভিডিও ও একটি ছবি সম্বলিত একটি ফেসবুক পোস্টে বলা হচ্ছে এটি উত্তরার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা। যাচাইয়ে দেখা যায় ভিডিও তিনটি প্রকৃত ঘটনার হলেও ছবিটি এআই দিয়ে বানানো।

ছড়িয়ে পড়া ছবিটি এআই দিয়ে বানানো কি না তা যাচাইয়ে শুরুতে টুলের সহায়তা নেওয়া হয়েছে। দুটি আলাদা এআই যাচাই করা টুলে বলা হচ্ছে ছবিটি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বানানোর সম্ভাবনা প্রবল। এছাড়া খালি চোখে ছবিটি যাচাই করে দেখা যায় সেখানে ইংরেজিতে লেখা স্কুলের নামে “এন্ড” শব্দটি দুইবার লেখা আছে, যা স্বাভাবিক নয়। এছাড়া একটি ভবনের উপরে দাঁড়ানো কিছু ব্যক্তিদের মধ্যে লাল পোশাক পরিহিত যে ব্যক্তিটিকে হাতে লাঠি নিয়ে দাঁড়াতে থাকতে দেখা যাচ্ছে তার হাতের দৈর্ঘ্যেও পার্থক্য আছে।
৫ম ও ৬ষ্ঠ ছবি
“ঢাকার উত্তরার মাইলস্টোন কলেজের মাঠে একটি ট্রেনিং বিমান ভয়াবহভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে।”– এমন ক্যাপশনে একটি পোস্টে বিমান বিধ্বস্তের দুটি আলাদা ছবি পোস্ট করা হয়েছে। যাচাইয়ে দেখা গেছে এই দুটি ছবিই এআই দিয়ে বানানো।
পোস্টটির ১ম ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি বহুতল ভবনে একটি বিমান বিধ্বস্তের দৃশ্য। তবে খালি চোখেই বোঝা যায় ছবিটি উত্তরার বিমান বিধ্বস্তের নয় কারণ মূল ঘটনায় বিমান বিধস্ত হয়েছে স্কুলের একটি ভবনে, ছবিতে দেখতে পাওয়া এমন বহুতল ভবনে নয়। এছাড়া জ্বলতে থাকা আগুনের ফুলকি অনেক বেশি উজ্জ্বল যা সাধারণত এআইয়ের মাধ্যমে তৈরি ছবিগুলোতে দেখা যায়। পাশাপাশি বিধ্বস্তের পর বিমানের সামনের অংশে আগুন লাগলেও বাকি অংশ অক্ষত ও আকাশে ভাসমান দেখা যাচ্ছে, যা সাধারণ কোনো ঘটনায় দেখা যায় না। এছাড়া এআই টুলের মাধ্যমে যাচাই করে দেখা গেছে ছবিটি এআই দিয়ে তৈরির সম্ভাবনা প্রবল।

পোস্টের ২য় ছবিতে দেখা যাচ্ছে একটি খোলা মাঠের মধ্যে বিধ্বস্ত বিমানের দৃশ্য। এই ছবিটির সঙ্গে উত্তরার বিমান দুর্ঘটনার বেশকিছু পার্থক্য আছে। প্রথমত উত্তরায় বিধ্বস্ত বিমানটি একটি প্রশিক্ষণ বিমান, কিন্তু পোস্টের ছবিতে থাকা বিমানটি একটি যাত্রীবাহী বিমানের। আবার বিমানের সামনের অংশে আগুন ও ধোঁয়া দেখা গেলেও, পেছনের অংশে আগুনে পুড়ে গেলেও কোনো ধোঁয়ার অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে না। আবার মূল বিমানটি স্কুল ভবনে বিধ্বস্ত হলেও ছবির বিমানটি একটি মাঠে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। সবশেষে, এআই টুলের মাধ্যমে যাচাই করলে দেখা যায় ছবিটি এআইয়ের মাধ্যমে তৈরির সম্ভাবনা প্রবল।