সুদেষ্ণা মহাজন অর্পা

ইন্টার্ন, ডিসমিসল্যাব
নভেম্বর ৩, ২০২৫
১৯:৫২:৪৬
ঢাবি শিক্ষিকা মোনামীর দাবিতে ছড়ানো ছবিগুলো এআই জেনারেটেড ও সম্পাদিত

ঢাবি শিক্ষিকা মোনামীর দাবিতে ছড়ানো ছবিগুলো এআই জেনারেটেড ও সম্পাদিত

নভেম্বর ৩, ২০২৫
১৯:৫২:৪৬

সুদেষ্ণা মহাজন অর্পা

ইন্টার্ন, ডিসমিসল্যাব

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক পেজ, প্রোফাইল ও গ্রুপ থেকে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বেশ কয়েকটি ছবি ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে এগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া মোনামীর। তবে ডিসমিসল্যাবের ফ্যাক্টচেকে দেখা গেছে, ছবিগুলো সম্পাদিত বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি।

লাল-সাদা সুইমস্যুটের ছবিগুলো এআই দিয়ে তৈরি

সম্প্রতি একাধিক ফেসবুক পেজ, প্রোফাইল ও গ্রুপ থেকে (,,,,,,,) ঢাবি শিক্ষিকা মোনামীর দাবিতে বেশ কিছু ছবি পোস্ট করা হচ্ছে। একই পোশাকে ৪টি ভিন্ন ভিন্ন ভঙ্গিতে তার ছবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে। ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে সাগরপাড়ে লাল-সাদা ফুলেল ছাপের সুইমস্যুটে হাস্যোজ্জ্বল ছবি তুলেছেন এই শিক্ষিকা। একটি পোস্টের ক্যাপশনের বিবরণ লেখা, “জামাত শিবিরের আদর্শের মোনামী ম্যাডাম!” ইনস্টাগ্রামেও তার নামে ছবিগুলো প্রচার করা হয়।

  • ঢাবি শিক্ষিকা মোনামীর দাবিতে ছড়ানো ছবিগুলো এআই জেনারেটেড ও সম্পাদিত ফ্যাক্টচেক
  • ঢাবি শিক্ষিকা মোনামীর দাবিতে ছড়ানো ছবিগুলো এআই জেনারেটেড ও সম্পাদিত ফ্যাক্টচেক

তবে ছবিগুলোর সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে বেশ কিছু অসঙ্গতি খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। চারটি ছবি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় প্রতিটি ছবিতে নিচের ডান কোণে গুগলের জেমিনি এআইয়ের (Gemini AI) সাদা লোগো আছে। গুগলের এআই চ্যাটবট ব্যবহার করে ছবি তৈরি বা সম্পাদনা করা হলে এই চিহ্ন থাকে।

  • ঢাবি শিক্ষিকা মোনামীর দাবিতে ছড়ানো ছবিগুলো এআই জেনারেটেড ও সম্পাদিত ফ্যাক্টচেক
  • ঢাবি শিক্ষিকা মোনামীর দাবিতে ছড়ানো ছবিগুলো এআই জেনারেটেড ও সম্পাদিত ফ্যাক্টচেক
  • ঢাবি শিক্ষিকা মোনামীর দাবিতে ছড়ানো ছবিগুলো এআই জেনারেটেড ও সম্পাদিত ফ্যাক্টচেক
  • ঢাবি শিক্ষিকা মোনামীর দাবিতে ছড়ানো ছবিগুলো এআই জেনারেটেড ও সম্পাদিত ফ্যাক্টচেক

আলোচিত ছবিগুলো সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করলে আরও কিছু অসংলগ্নতা দেখা যায়। যেমন –

  • চারটি ছবির কোনোটিতেই তার পোশাকের প্রিন্টে মিল নেই। একটি ছবির পোশাকের প্রিন্ট (ফুল ও পাতার বিন্যাস) একটি অন্যটির সঙ্গে মিলে না।
  • এছাড়া সুইমস্যুটের পিছনের ব্যাকস্ট্র‍্যাপও আলাদা দেখাচ্ছে দৃশ্যমান দুটো ছবিতে। একটিতে কোনো ফিতা নেই আবার অন্যটিতে ফিতা বাধা অবস্থায় আছে। 
  •  প্রতিটি ছবিতে হাতের অলংকারের বৈসাদৃশ্য রয়েছে। 
  • মুখের ও চুলের সাজেও পার্থক্য রয়েছে ১ম৪র্থ ছবিতে।
  • তিনটি ছবিতে পেছনে সমুদ্রের অবস্থা স্থিতিশীল। এমনকি পেছনে সমুদ্রের সাদা ঢেউয়ের অবস্থানও এক। বাস্তবে সবগুলো হাতে তোলা আলোকচিত্র হলে সমুদ্রের ঢেউ স্থির থাকার কথা নয়।

এই ঢাবি শিক্ষিকার ফেসবুক প্রোফাইল পর্যালোচনা করেও আলোচিত ছবিগুলোর সন্ধান মেলেনি। এসব অসঙ্গতি দেখেই বোঝা যায় ছবিগুলো আসল নয়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে ছবিগুলো তৈরি করা হয়েছে।

ভিন্ন দুই নারীর ছবি সম্পাদিত করে বানানো হয়েছে ভুয়া ছবি

অন্যদিকে কিছুদিন ধরে আরও বেশ কয়েকটি ফেসবুক পেজ ও ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে এই শিক্ষিকা দাবিতে দুটি ভিন্ন (, , , ) ভিন্ন (, , , ) ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। একটি পোস্টের ক্যাপশনে লেখা “মোনামি ম্যামের অপমানে যদি না কাঁদে তোর মনঢাবিয়ান নয় তুই, ঢাবি’র দুষমন… 🥹🥹।”

তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ের দেখা যায়, ছবিগুলো প্রকৃতপক্ষে ঢাবি শিক্ষক মোনামীর নয়। সামাজিক মাধ্যম থেকে দুজন ভিন্ন নারীর ছবি সংগ্রহের পর সেগুলো সম্পাদনা করে মুখমণ্ডল প্রতিস্থাপন করে আলোচিত ছবিগুলো প্রচার করা হয়েছে।

ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলো নিয়ে মুখের অংশ বাদ দিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ডিসমিসল্যাবের সামনে আসে দুইজন ভিন্ন নারীর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট। 

তন্মধ্যে its_munmun134 ইউজারনেমের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ১০টি ছবির সংযুক্তিসহ গত ৬ সেপ্টেম্বর তারিখের একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্ট করা ছবির গুলোর মধ্যে ৩য় ছবিটির সঙ্গে শিক্ষিকা মোনামীর দাবিতে প্রচারিত ছবিটির তুলনা করলে মুখমণ্ডল ছাড়া পোশাক ও অন্য সব বৈশিষ্ট্যে হুবহু মিল পাওয়া যায়।

অন্যদিকে symavermaaa ইউজারনেমের একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর ৮টি ছবিযুক্ত একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্ট করা ছবিগুলোর মধ্যে দুটি ছবির সঙ্গে শিক্ষিকা শেহরীন আমিন মোনামীর দাবিতে প্রচারিত ছবির তুলনা করলে একইভাবে মুখ ছাড়া অন্য সবকিছুতে হুবহু সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

সুতরাং, শেহরীন আমিন ভূঁইয়া (মোনামী)-এর নামে প্রচারিত এই ছবিগুলোও সম্পাদিত।

প্রসঙ্গত, ফেসবুকে এসব ছবি বিকৃতি ও সম্পাদিত ছবি প্রচারের ফলে ৩ নভেম্বর সাইবার সুরক্ষা আইনে শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষিকা।

আরো কিছু লেখা