ফাতেমা তাবাসুম
অস্ত্রসহ নারী আটকের পুরোনো ভিডিও সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার
ফাতেমা তাবাসুম
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে র্যাবের হাতে অস্ত্রসহ এক নারীকে আটকের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি শেয়ার করে পোস্টদাতারা দাবি করছেন, অভিযুক্ত ওই নারী শিবির সমন্বয়কদের সঙ্গে জড়িত। ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে জানা যায়, সমসাময়িক ঘটনা হিসেবে দাবি করা হলেও ভিডিওর ঘটনাটি প্রায় তিন মাস আগের।
ফেসবুকে সম্প্রতি একাধিক প্রোফাইল (১, ২, ৩, ৪), পেজ (১, ২) ও গ্রুপ থেকে (১, ২, ৩) একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হয়, “শিবির সমন্বয়কের ম্যাটিকুলাসের অংশ হিসেবে জান্নাতি হুড় RAB এর হাতে মেসিন সহ কট।” ফেসবুকে এমন একটি পোস্ট এখন পর্যন্ত আট লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে। এটি শেয়ার করা হয়েছে আট হাজারের বেশিবার। এই প্রতিবেদনটি লেখার সময় পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বেশি ব্যবহারকারী প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ভিডিওটিতে, এছাড়াও মন্তব্য রয়েছে এক হাজারের বেশি। আবার কিছু কিছু পোস্টে দাবি করা হয়, “শিবির জান্নাতি হুররা ভালোই প্রশিক্ষন পাচ্ছে! জামায়াতের আমীর শফিকুর বলেছিল, ৪০% নাকি মহিলা কর্মি আছে জামাতের। এটা ভালো প্লান। বোরখার নিচে অস্ত্র থাকলে বুঝার উপায় নাই, যদি কনফার্ম নিউজ না থাকে। … এরা নাকি আমাদের দেশ চালাবে!! ভাইরে ভাই!!”
একজন ব্যবহারকারী ২১ নভেম্বর সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও সজীব ওয়াজেদ এই দুই গ্রুপে প্রায় একই সময় ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করেন, “পাকিস্তান থেকে শীপে আসা জামাত শিবিরের খাতা কলম সর্বারহ হচ্ছে বলে হাতে নাতে দরা পরল ডিবি পুলিশের কাছে।” ভিডিওগুলোর বেশিরভাগ পোস্টেই #stepdowndryunus, #StepDownYunus এবং #SheikhHasina এর মতো হ্যাশট্যাগ ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। ভাইরাল একটি পোস্টে একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেনে, “পাকিস্তানি সর্টগান। জাহাজে করে এসেছে মনে হয়।এগুলো এখন সবাইকে পাচার করছে ভিবিন্ন কৌশলে।” অর্থাৎ বেশিরভাগ মন্তব্যকারীই ভিডিওটিকে সাম্প্রতিক ঘটনার অংশ হিসেবে ধরে নেয়।
ভিডিওটির কিফ্রেম ধরে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে যমুনা টেলিভিশন এবং কলারোয়া নিউজ নামের দুটি সংবাদমাধ্যমে প্রায় তিন মাস আগের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। “সাতক্ষীরায় অস্ত্রসহ দুজন আটক” শিরোনামের এই প্রতিবেদনটি যমুনা টেলিভিশন প্রকাশ করে এ বছরের ৯ জুলাই। অর্থাৎ, এটি গত জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আগে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা। মূল ঘটনা ৯ জুলাই রাতের, যেদিন র্যাব-৬ অভিযান চালিয়ে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় অস্ত্রসহ একজন নারী ও একজন পুরুষকে আটক করেছিল। অভিযুক্তদের ব্যাপারে র্যাব-৬ এর সাতক্ষীরার কোম্পানি কমান্ডার এএসপি ফয়সাল তানভীর সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, গোপন খবরের ভিত্তিতে তারা অভিযুক্তদের আটক করে ও কসটেপ মোড়ানো একটি ওয়ান সুটারগ্যান পিস্তল উদ্ধার করে। ঠিক যেমনটি ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে। এই ঘটনায় র্যাব-৬ এর সাতক্ষীরা কোম্পানি কমান্ডার কিংবা কলারোয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) তাইজুর রহমান—কারোরই দেওয়া বিবৃতিতে শিবির বা কোনো রাজনৈতিক দলের জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি। যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, ভিডিওটি পুরোনো এবং দাবিগুলোও ভুয়া।
চলতি মাসে পুরোনো ভিডিও সাম্প্রতিক সময়ের সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ বা তিতুমীর কলেজের ঘটনার দাবিতে প্রচার করা হয়। যা নিয়ে ইতোমধ্যে দুটি ফ্যাক্টচেক (১, ২) প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ডিসমিসল্যাব। গেল অক্টোবরে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গ্রেফতার হওয়া আন্দোলনকারীদের ছাত্রলীগ কর্মী দাবিতে প্রচারের ঘটনার পরও ডিসমিসল্যাব একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।