আহমেদ ইয়াসীর আবরার
অস্ত্রসহ রাস্তা পার হওয়া যুবকদের ভিডিওগুলো পার্বত্য চট্টগ্রামের নয়
আহমেদ ইয়াসীর আবরার
পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষকে ঘিরে অস্থিরতার মাঝে ফেসবুকে দুটি ভিডিও ছড়াতে দেখা যাচ্ছে যাকে ঐ অঞ্চলের বলে প্রচার করা হচ্ছে। ভিডিওগুলোয় অস্ত্রসহ একাধিক যুবককে দেখা যাচ্ছে। তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা গেছে ভিডিও দুটি পার্বত্য চট্টগ্রামের নয়, বরং ফিলিপাইনের।
ভিডিও দুটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় উভয় ভিডিওই একই স্থানে ধারণ করা হয়েছে। একটি ভিডিওতে সশস্ত্র দুইজন যুবকের রাস্তা পারাপারের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। ৭ সেকেন্ডের এই ভিডিওর ৬ সেকেন্ডে একটি মাইক্রোবাসকে যেতে দেখা যায়। মাইক্রোবাসের নাম্বার প্লেটটিতে তিনটি অক্ষর এবং চারটি সংখ্যা দেখা যায়। অর্থাৎ, এটি মূলত এলএলএল-ডিডিডিডি ফরমেটে লেখা। এখানে এল হলো লেটার এবং ডি হলো ডিজিট। ফিলিপাইনের গাড়ির নাম্বার প্লেটের ফরম্যাটের সঙ্গে এর মিল রয়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে গাড়ির নাম্বার প্লেট নির্ধারিত হয় “শহর – যানবাহন শ্রেণী বর্ণ এবং নম্বর – গাড়ি নম্বর”। “ঢাকা-ঢ-১১-৯৯৯৯” বাংলাদেশের গাড়ি সমূহের নাম্বার প্লেটের একটি উদাহরণ হতে পারে। অর্থাৎ, গাড়িটি বাংলাদেশে রেজিস্ট্রিকৃত কোনো বাহন নয়।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একজন সশস্ত্র যুবক রাস্তা পার হচ্ছে। এটিও পূর্ববর্তী ভিডিওটির স্থানেই ধারণ করা বলে নিশ্চিতভাবে বলা যায়। উভয় ভিডিওতে “ট্যাপ ফ্রেশ ব্রেড বেকারি” নামের একটি ব্যানার ঝুলতে দেখা যায় এবং ব্যানারের পেছনে দোকানের মধ্যেও সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
যাচাইয়ে দুটি ভিডিওরই মূল সূত্র খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। সাত্তার জাক্কাল নামের একটি পেজ থেকে এই দুটি ভিডিও প্রথম পোস্ট হতে দেখা যায় (১, ২)। এই পেজটির প্রাথমিক লোকেশন দেখায় ফিলিপাইনে। দ্বিতীয় ভিডিওটির ৯ সেকেন্ডের দৃশ্যপটের ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে মিল রয়েছে এরকম আরেকটি ভিডিও পাওয়া যায় সাত্তার জাক্কাল পেজের একটি রিলে। রিলের শুরুতে দৃশ্যের প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে একটি মিনি গ্যাস স্টেশন। গ্যাস স্টেশনে জিক্যাশ পেমেন্ট ব্যবস্থার একটি ব্যানারও দেখা যায়। জিক্যাশ ফিলিপাইনের বহুল ব্যবহৃত মোবাইল ওয়ালেট সার্ভিস। দেশটির মোবাইল ওয়ালেটের জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে এই অ্যাপ।
অর্থাৎ, বেশকিছু ভিডিওর মূল সূত্রসহ আশেপাশের স্থান পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হওয়া যায় এগুলো বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে ধারণকৃত ভিডিও নয়।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ সেপ্টেম্বরে খাগড়াছড়ি পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের নোয়াপাড়া এলাকায় মোহাম্মদ মামুন নামের একজন বাঙালী যুবকের মৃত্যুকে ঘিরে সংঘর্ষ শুরু হয়। ১৯ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালায় পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হলে রাতভর জেলা সদরে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। গোলাগুলিতে ও সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন পাহাড়ি নিহত হয়েছেন বলে জানা যায়। আহত হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। এদিকে, আজকে রাঙামাটিতেও বাঙালি ও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ দেখা দিলে সেখানে ১৪৪ দ্বারা জারি করে প্রশাসন।