ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
বাংলাদেশের জুলাই আন্দোলনের ভিডিও ভারতের সহিংসতার দাবিতে প্রচার
This article is more than 3 months old

বাংলাদেশের জুলাই আন্দোলনের ভিডিও ভারতের সহিংসতার দাবিতে প্রচার

ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

মাথায় হেলমেট পরে পিস্তল হাতে এক ব্যক্তি রাস্তায় হাঁটছেন। একটু পরে আরেক ব্যক্তি এসে তার হাতে কিছু বুলেট দিয়ে গেলেন। পিস্তলে বুলেটগুলো ভরতে ভরতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলেন লোকটি। এমন একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম এক্সে শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে এটি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রণীত ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গে চলমান সহিংসতার একটি চিত্র। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে, ভিডিওটি ভারতের নয়। এটি বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় ধারণ করা একটি ভিডিও। 

ভারতে ওয়াকফ আইন ঘিরে চলমান উত্তেজনার মাঝে সম্প্রতি নিজেকে ভারতীয় পরিচয় দেওয়া এক ব্যবহারকারী এক্সে ভিডিওটি পোস্ট করে লিখেন “এই ভিডিওটি আপনাকে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি দেখাবে। কিন্তু সাগরিকা ঘোষের কাছে এটি আবার বিজেপির প্রোপাগান্ডা! বাহ তৃণমূল কংগ্রেস, বাহ!!” একই ভিডিও (, , , ) “পশ্চিমবঙ্গে কিছুই ঘটছে না। বিজেপি মিথ্যা বলছে।”– এই শিরোনামেও ছড়াতে দেখা যায়।

ভিডিওটির একটি কি-ফ্রেম ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ সার্চ চালানো হলে দেখা যায়, এটি ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বাংলাদেশের একাধিক মূলধারার গণমাধ্যমে (, , ) প্রকাশিত হয়েছে। সেসময় চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ধারণ করা হয়েছিল ভিডিওটি।

দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের মুরাদপুরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভের জন্য সমবেত হলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা–কর্মীরা অস্ত্র হাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। মিছিল লক্ষ্য করে গুলিও করেন চার ব্যক্তি, যাদের একজনকে ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে। এ হামলায় তিনজন নিহত এবং অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। 

চট্টগ্রামের এই ভিডিওটির কিছু অংশ কেটে নিয়ে সেটিকে পশ্চিমবঙ্গের আন্দোলনে সহিংসতার দৃশ্য দাবিতে প্রচার করা হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ সাগরিকা ঘোষ। গত ১৪ এপ্রিল নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে ওয়াকফ বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে “#মুর্শিদাবাদ_ঘটনা নিয়ে রাজ্য সরকারের অবস্থান স্পষ্ট” শিরোনামে একটি ভিডিও শেয়ার করেন। ভিডিওতে তিনি দাবি করেন, আগুন লাগানো এবং সহিংসতার যেসব ছবি-ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে, তা এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যেন সবকিছুই পশ্চিমবঙ্গে ঘটছে। অথচ এই ছবিগুলো এবং ভিডিওগুলো অন্য রাজ্যের, যেগুলোকে বিজেপি (ভারতীয় জনতা পার্টি) পশ্চিমবঙ্গের বলে চালানোর চেষ্টা করছে। তিনি অভিযোগ তোলেন “এটা বিজেপির মিথ্যাচার, ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের প্রচার, এবং উস্কানিমূলক রাজনীতির প্রচার।” সাগরিকা ঘোষের এই ভিডিও ইন্টারনেটে শেয়ার করার পর থেকেই এক্স প্ল্যাটফর্মে একাধিক ব্যবহারকারী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে “পশ্চিমবঙ্গে কিছুই ঘটছে না। বিজেপি মিথ্যা বলছে।”– এই শিরোনামসহ চট্টগ্রামের ভিডিওটি পোস্ট করতে থাকেন। 

ভারতের লোকসভায় ২ এপ্রিল ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৫ প্রণয়নের পর দেশজুড়ে শুরু হয়েছে প্রতিবাদ। টাইমস অফ ইন্ডিয়া-র তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে ওয়াকফ বিরোধী আন্দোলনে এখন পর্যন্ত তিন জন নিহত এবং শতাধিক ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছেন। 

২০২৩ সালে সিলেটের সুবিদবাজারে বিএনপির ডাকা অবরোধের সময় মশাল মিছিল ও যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর হামলার পাল্টাপাল্টি দাবিতে প্রচারিত হতে দেখা যায়। দাবিটি যাচাই করে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব। 

আরো কিছু লেখা