তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
ভিডিওটি মাদারীপুরে হত্যাকাণ্ডের নয়, ভারতের একটি মন্দিরের

ভিডিওটি মাদারীপুরে হত্যাকাণ্ডের নয়, ভারতের একটি মন্দিরের

তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম এক্সে একাধিক আইডি থেকে একটি ভিডিও শেয়ার হতে দেখা গেছে। যেখানে দাবি করা হয়েছে সেটি মাদারীপুরে মসজিদের ভেতরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ তিন ভাইকে হত্যার ভিডিও। একই দাবিতে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে ফেসবুক ও ইউটিউবে। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে, দাবিটি সঠিক নয়। আসল ভিডিওটি অন্তত তিন বছর আগের এবং এটি ধারণ করা হয়েছে ভারতের একটি মন্দিরে।

১১ সেকেন্ডের সেই ভিডিওটি এক্সে শেয়ার করে এক ব্যবহারকারী বিবরণীতে লিখেছেন, “জঙ্গিবাদের বাংলাদেশ! মাদারীপুরে মসজিদের ভেতরে এইভাবে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ তিন ভাইকে একসাথে জ*বা*ই করে হ*ত্যা! এটা কোন বাংলাদেশ?” এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভিডিওটি দেখেছেন ষোল হাজারের বেশি ব্যবহারকারী। ভিডিওতে দেখা যায় কালো টিশার্ট পরিহিত এক যুবক শান বাধানো মেঝেতে হাত-পা ছড়িয়ে আছে এবং সেখানে তার মাথা দেখা যাচ্ছে না। একই ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে আওয়ামী লীগ ব্রাহ্মণবাড়িয়া নামের আইডি থেকেও। এই পোস্টে বিবরণী অপরিবর্তিত থাকলেও সেখানে ইংরেজিতে কিছু হ্যাশট্যাগ (#বাংলাদেশক্রাইসিস, #সেভবাংলাদেশফ্রমইউনূস) যোগ করা হয়েছে।

একই দাবিতে ভিডিওটি শেয়ার করতে দেখা গেছে ফেসবুকে (, ) এবং ইউটিউবে

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ে শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। সেই সার্চে বালাজি ভগবানপুর ধাম নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে হুবহু একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ১ মিনিট ৩ সেকেন্ডের ভিডিওটি সেই চ্যানেলে প্রচার করা হয় ২০২২ সালের ৭ মার্চ। অর্থাৎ ৩ বছরেরও বেশি আগে। ভিডিওর হিন্দি ভাষায় লেখা শিরোনামটি গুগলে বাংলা অনুবাদ করলে দাড়ায়, “কাষ্টভঞ্জন ভগবানপুর বালাজি ধামে ভূতদের নির্মমভাবে পেটানো হয়।” এছাড়া বিবরণে আরও বলা, “বালাজি ভগবানপুর ধাম আমেঠি ইউপি, হনুমান চালিশা, বালাজি আরতি, মা কালীর আরতি, প্রেতরাজ সরকারের আরতি।”

ভিডিওটির শুরুতে দেখা যাচ্ছে শান বাধানো মেঝেতে হাত-পা ছড়িয়ে আছে এক যুবক এবং তার মাথা দেখা যাচ্ছে না। অসত্য দাবিতে সাম্প্রতিক সময়ের বলে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে এবং এই ভিডিওতে যে যুবককে দেখা যাচ্ছে তার পোষাকে হুবহু সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। আর পুরো ভিডিওর একদম শেষ অংশে, ৫২ সেকেন্ডে দেখা যায় সেই যুবকটি জীবিত আছেন এবং চারকোণা একটি গর্তে নিজ থেকেই মাথা প্রবেশ করিয়েছেন। এই ভিডিওর শুরুর ১১ সেকেন্ড অংশ কেটে নিয়ে তা বর্তমানে মাদারীপুরের আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ভিডিও বলে প্রচার করা হয়েছে। 

ইউটিউব ভিডিওতে থাকা বিবরণের সূত্র ধরে অধিকতর যাচাই করে ডিসমিসল্যাব। গুগলে কিওয়ার্ড ধরে খোঁজ করে ভগবানপুর ধাম আমেঠি নামের একটি মন্দিরের খোঁজ পাওয়া যায়। দেখা যায়, মন্দিরটি ভারতের উত্তর প্রদেশের (ইউপি) আমেঠি নামক জায়গায় অবস্থিত। তাই বলা যায়, ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিওটি মাদারীপুরে মসজিদের ভেতরে হত্যাকাণ্ডের নয় বরং ভারতের একটি মন্দিরের ভিডিও এবং সেটি ৩ বছরেরও বেশি পুরোনো। 

প্রসঙ্গত গত ৮ মার্চ মাদারীপুরে বালুর ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বে তিন ভাইকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সদর উপজেলার খোয়াজপুর টেকেরহাট এলাকার মোল্লা বাড়ি ও সরদার বাড়ির মাঝামাঝি এলাকায় বালু তোলা নিয়ে দুই বংশের লোকজনের মধ্যে লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষ হয়। আর প্রতিপক্ষের হামলা থেকে বাঁচতে দুজন মসজিদে আশ্রয় নিলে হামলাকারীরা সেখানে গিয়ে তিন ভাইকে কুপিয়ে জখম করেন। নিহতরা হলেন আতাউর রহমান সরদার ওরফে আতাবুর (৩৫), সাইফুল ইসলাম ওরফে হিটার সাইফুল (৩০) এবং তাদের চাচাতো ভাই পলাশ সরদার। এদের মধ্যে সাইফুল খোয়াজপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

আরো কিছু লেখা