ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
ত্রিপুরায় বিক্ষোভের ভিডিওকে বাংলাদেশের বলে প্রচার

ত্রিপুরায় বিক্ষোভের ভিডিওকে বাংলাদেশের বলে প্রচার

ফাতেমা তাবাসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে ঘটে যাওয়া পাহাড়ি-বাঙালি অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ছড়াতে দেখা গেছে একাধিক ভুয়া দাবি। ফেসবুকে এমনই একটি নতুন ভুয়া দাবিতে বলা হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িরা ভারতের অন্তর্ভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করছে। তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওটি মূলত ভারতের ত্রিপুরার; বাংলাদেশের নয়।

ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে একাধিক পোস্টদাতা (, , ) দাবি করেন এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের। ভিডিওতে দেখা যায়, ব্যানার হাতে কিছু মানুষ আন্দোলন করছে। সেখানে এক ব্যক্তিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশ্যে বলতে শোনা যায়, ‍ “যতক্ষণ অবধি পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ কিংবা ভারতের অন্তর্ভুক্ত না হচ্ছে ততক্ষণ অবধি সেখানে সেনা মোতায়েন ও গণহত্যা বন্ধ করতে হবে, এবং সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে হবে।”

একই ঘটনার ভিডিও শেয়ার করে একজন ব্যবহারকারী ক্যাপশনে লেখেন , “ইমিডিয়েট এগুলার বিরুদ্ধে একশন নেয়া উচিত৷ কোন সাহসে দেশের মাটিতে থেকে ওপেনলি ভারতের অংশ হওয়ার কথা বলে। এরকম উদ্দেশ্য যারা বহন করে তাদেরকে জাস্ট মাটিতে মিশাই দিতে হবে। এতটুকুই।” আরেক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে লেখেন, “সুন্দর করে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছেড়ে ভারতে ডুকে পড়ুন। আপনারা বাংলাদেশে থাকার যোগ্য নয়।” 

অন্যদিকে ফেসবুকে বেশ কিছু প্রোফাইল (, ) থেকে দাবি করা হয়, “বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলকে ভারতের অংশ করতে দাবী তুলেছে সেখানকার চাকমা ও হিন্দুরা। আমরা এর সমর্থন করি।” প্রোফাইলগুলোর লোকেশন হিসেবে ভারতের বিভিন্ন স্থানের নাম দেখতে পাওয়া যায়। 

যাচাইয়ে ভয়েস অফ সিএইচটি নামের এক ফেসবুক পেজে একই ভিডিও খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব, সেখানে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছিল গত ২৩ সেপ্টেম্বর। এই পেজে একই দিনে একই ঘটনার একটি লাইভও খুঁজে পাওয়া যায়। ক্যাপশনে ত্রিপুরা রাজ্যের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, “পার্বত্য চট্রগ্রামকে ভারতের সাথে অন্তরভুক্ত করার দাবি এবং পাহাড়ে চারটি দল ঐক্য না হলে ত্রিপুরাবাসিরা সহয়তা দিবেনা বলে সমাবেশ থেকে হুশিয়ারি।” আন্দোলনের যে ব্যানার ফেসবুক লাইভে দেখা যায় সেখানে স্থানের নামে পেঁচারথল, উনকোটি ত্রিপুরার উল্লেখ আছে। ত্রিপুরা ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য। অর্থাৎ ভিডিওটি মূলত ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পেঁচারথল অঞ্চলে ধারণ করা হয়েছে। সেটি ছিল বাংলাদেশে পাহাড়ে চলমান সহিংসতার প্রতিবাদে ডাকা স্থানীয়দের বিক্ষোভের দৃশ্য।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ওপর হওয়া হামলা ও সহিংসতার প্রতিবাদে ২৩ সেপ্টেম্বর ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় স্থানীয়রা। শেয়ার করা ভিডিওটিও এমনি একটি বিক্ষোভ মিছিলের। 

 পাহাড়ে সহিংসতা শুরুর পর থেকে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ছড়াতে দেখা যায় নানা ধরনের অপতথ্য। যা নিয়ে একাধিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন (, , ) প্রকাশ করেছে ডিসমিসল্যাব।

আরো কিছু লেখা