তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
টিউলিপকে নিয়ে ভুল শিরোনাম গণমাধ্যমে, ছড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও

টিউলিপকে নিয়ে ভুল শিরোনাম গণমাধ্যমে, ছড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও

তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের বর্তমান সরকারে থাকা লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে একটি দাবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বেশ কিছু ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিককে ব্রিটিশ দুর্নীতিবিরোধী কার্যালয়ের পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। দাবিটি প্রচারিত হয়েছে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম ও গ্রাফিক কার্ডেও। কিন্তু যাচাইয়ে দেখা গেছে দাবিটি সঠিক নয়। ব্রিটিশ গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে বিরোধী দলের এমপিরা লেবার পার্টির এই এমপিকে অপসারণের দাবি তুলেছেন। তবে এখন পর্যন্ত টিউলিপকে অপসারণের কোনো খবর গণমাধ্যমে আসেনি।

ফেসবুকের বেশ কিছু পোস্টে (, , , ) টিউলিপ সিদ্দিকের ছবিযুক্ত গ্রাফিক কার্ড পোস্ট করে আলোচিত দাবিটি করা হচ্ছে। কার্ডে লেখা, “ব্রিটিশ দুর্নীতিবিরোধী পদ থেকে টিউলিপকে অপসারণ।” গ্রাফিক কার্ড ছাড়াও শুধু টেক্সট দিয়ে কিছু ফেসবুক পোস্টেও (, , ) একই দাবি করা হয়েছে।

এছাড়া একই দাবিতে নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গ্রাফিক কার্ড শেয়ার করেছে বাংলাদেশের গণমাধ্যম, একুশে টেলিভিশন। কার্ডে লেখা দাবির সঙ্গে মিল রেখে একই শিরোনামে প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়েছে সংবাদমাধ্যমটির অনলাইন পোর্টালে। একুশে টেলিভিশনের সেই গ্রাফিক কার্ডটি বেশ কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারী (, , ) আলাদাভাবে শেয়ারও করেছেন। ইউটিউবে ভিডিও আকারেও কার্ডটি শেয়ার করা হয়েছে। এ সম্পর্কিত দৈনিক ইনকিলাবের অনলাইন প্রতিবেদনের শিরোনামে এবং ফেসবুক পেজে শেয়ার করা গ্রাফিক কার্ডে একই দাবি করা হয়েছে। আরও কয়েকটি অনলাইন পোর্টালেও (, ) একই শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

দাবিটির সত্যতা যাচাইয়ে শুরুতে এ সম্পর্কিত কিওয়ার্ড দিয়ে অনলাইনে খোঁজ করে ডিসমিসল্যাব। ফলাফলে দেখা যায় টিউলিপ সিদ্দিককে অপসারণকে কেন্দ্র করে দেশের একাধিক গণমাধ্যম প্রতিবেদন (, , , ) প্রকাশ করেছে। তবে সেসব প্রতিবেদনের শিরোনামে টিউলিপকে অপসারণের আহ্বান বা দাবির কথা বলা হয়েছে। এসব প্রতিবেদনে শিরোনামের দাবির সঙ্গে মিল রেখে বিস্তারিত বিবরণেও একই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনের বরাতে সেখানে বলা হয়েছে – বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প থেকে নিজ পরিবারের সদস্যদের ৪ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতে সহায়তার অভিযোগ ওঠায় লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে ব্রিটিশ দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম থেকে আপসারণের দাবি জানিয়েছেন বিরোধী দলের এমপিরা। দুর্নীতিতে সহায়তার অভিযোগের কারণে দুর্নীতিবিরোধী ফাইন্যান্সিয়াল স্যাংকশন ইমপ্লিমেন্টেশনের কার্যালয় থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানান তারা। 

ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে একই ধরনের বিবরণ পাওয়া যায়। সেখানে কোথাও বলা হয়নি টিউলিপকে অপসারণ করা হয়েছে। অন্য কোনো ব্রিটিশ গণমাধ্যমও তাকে অপসারণ করা হয়েছে বলে সংবাদ প্রচার করেনি।

তবে দেশের কিছু গণমাধ্যমের শিরোনাম ও ফেসবুকে প্রকাশিত গ্রাফিক কার্ডে বলা হয় টিউলিপকে অপসারণ করা হয়েছে। যা আসলে সঠিক নয়। ইনকিলাব ও একুশে টেলিভিশনের শিরোনাম ও ফেসবুকের গ্রাফিক কার্ডে অপসারণের কথা বলা হলেও তাদের প্রতিবেদনে বিস্তারিত অংশে ডেইলি মেইলের সেই প্রতিবেদনের বরাতে বলা হয় এই ব্রিটিশ এমপিকে বিরোধী দলের এমপিরা অপসারণের দাবি বা আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, টিউলিপ এবং তাদের পরিবারের বাকি সদস্যদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের তদন্তে নামে দুদক। আবার বাংলাদেশের হাইকোর্টে অভিযোগ ওঠে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ১০ বিলিয়ন পাউন্ড সরাতে সহায়তা করেছিলেন টিউলিপ। ২০১৩ সালে ক্রেমলিনে টিউলিপের উপস্থিতিতে ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন হাসিনা ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার দলের বাকি সদস্যরা এসব অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

আরো কিছু লেখা