তৌহিদুল ইসলাম রাসো
আয়নাঘরের নয়, ফ্রান্সের একটি পাতালসমাধির ভিডিও এটি
তৌহিদুল ইসলাম রাসো
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ও ইউটিউবে একটি ভিডিও ভাইরাল হতে দেখা গেছে। ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে, এটি বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার বিতর্কিত আটককেন্দ্রের, যার নাম ‘আয়নাঘর।’ আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিভিন্ন ব্যক্তিকে এখানে বন্দি হিসেবে রাখা হয়েছিল বলে জানানো হয় সংবাদ প্রতিবেদনে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এখান থেকে মুক্তি পান অনেকে। একই সময়ে এই ভিডিওটি ছড়াতে দেখা যায় আয়নাঘরের দৃশ্য দাবি করে। তবে যাচাইয়ে দেখা যায় ভাইরাল ভিডিওটি বিতর্কিত আয়নাঘরের নয়। ভিডিওটি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের ‘ক্যাটাকম্বস’ বা পাতালসমাধির।
ফেসবুকের একাধিক পেজ (১, ২, ৩, ৪) থেকে প্রচারিত ১৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও আয়নাঘর দাবিতে প্রচারিত হয়। প্রতিটি ভিডিওতে একই ক্যাপশনে লেখা, “বাংলার আয়না ঘর। যাদের মনে এতদিনের প্রশ্ন। লাশগুলা গেল কই। এখানে খোজলে পাবেন ইলিয়াস আলী।” ভিডিওতে একটি অন্ধকার সুড়ঙ্গে অনেক হাড়গোড় পরে থাকতে দেখা যায়। ছড়িয়ে পড়া এমন একটি পোস্ট পর্যবেক্ষণে দেখা যায় সেটি দেখেছেন ৮৬ লাখের বেশি ব্যবহারকারী। কমেন্টে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “একাত্তরের গনহত্যাকে হার মানায় এইসব হত্যাকাণ্ডের।” ভিডিওটি শেয়ার করেছেন প্রায় ৬০ হাজার ব্যবহারকারী।
একই দাবিতে ইউটিউবের একাধিক চ্যানেলে (১, ২, ৩) ভিডিও প্রচারিত হতে দেখা যায়।
ভিডিওগুলোর সত্যতা যাচাইয়ে অনলাইনে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। যাচাইয়ে একই ধরনের পুরোনো কিছু ভিডিও পাওয়া যায় ইউটিউবে। ২০২৩ সালে আপলোড করা একটি ভিডিওর ৬ মিনিট ২৫ সেকেন্ড অংশের সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওটির সাদৃশ্যতা খুঁজে পাওয়া যায়। তবে সেই ভিডিওটির স্থান ‘ক্যাটাকম্বস অব প্যারিস’ নামে উল্লেখ করা হয়।
ক্যাটাকম্বস অব প্যারিসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গেলে জানা যায় এই পাতালসমাধির গোড়াপত্তন হয় আঠারো শতকের দিকে। সেই সময় মহামারির কারণে প্যারিসে মৃত ব্যক্তিদের সৎকারের জায়গা এবং স্বাস্থ্য সংকট দেখা দেয়। ফলে পৌর কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় শহরের বেশ কিছু সমাধিভূমি থেকে মানুষের দেহাবশেষ সরিয়ে নিয়ে শহর থেকে দূরে মাটির নিচে বিশাল এক স্থানে জমা করার। সেই কাজের শুরু হয় ১৭৮৫ থেকে ১৭৮৭ সালের দিকে। আর এর মাধ্যমে তৈরি হয় বিশ্বের অন্যতম বড় মানবকঙ্কালের সমাবেশ যার নামকরণ করা হয় ‘ক্যাটাকম্বস’ বা পাতালসমাধি।
বর্তমানে বছরে প্রায় প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ দর্শনার্থী এখানে বেড়াতে যান। অনেক পর্যটক সেখানে ভিডিও করে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেন। এমনই একটি ভিডিওর কিছু অংশ কেটে এবং সম্পাদনা করে সেটিকে আয়নাঘরের দৃশ্য বলে প্রচার করা হচ্ছে।
এছাড়া ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোর ক্যাপশনে নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর উল্লেখ থাকলেও এর কোনো প্রমাণ মেলেনি। বিএনপির এই নেতা আয়নাঘর থেকে মুক্তি পেয়েছেন– এমন দাবিতেও দেখা যায় কিছু পোস্ট। তবে এ সম্পর্কিত কোনো সংবাদ প্রকাশিত হতে দেখা যায়নি গণমাধ্যমগুলোতে।