তৌহিদুল ইসলাম রাসো
ভিডিওর এই ব্যক্তি সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম নন
তৌহিদুল ইসলাম রাসো
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হতে দেখা গেছে। ১৫ সেকেন্ডের ভিডিওটি শেয়ার করে বলা হচ্ছে এটি সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামকে নারীসহ আটকের। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে, এক মাস আগের পুরোনো এই ভিডিওটি বাগেরহাটের এক শিক্ষকের; মনিরুল ইসলামের নয়। ভিডিওটি বাগেরহাটের এক শিক্ষকের বলে নিশ্চিত করেছেন সেখানকার স্থানীয় সাংবাদিকও।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার নারীসহ আটকের দাবিতে ফেসবুকে পোস্ট ছড়ানো শুরু হয় গত ২২ এপ্রিল থেকে। বেশকিছু ব্যবহারকারী তাদের প্রোফাইল (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮), পেজে (১, ২, ৩, ৪) ও গ্রুপে ১৫ সেকেন্ডের ভিডিও শেয়ার করেন একই দাবিতে। সেখানে দেখা যাচ্ছে একটি কক্ষে কয়েকজন ব্যক্তি এক পুরুষ ও নারীকে জেরা করছেন। পুরুষটি ভিডিও করতে বাধা প্রদানের চেষ্টা করছেন এবং বিছানায় বসে থাকা নারী চেহারা ঢেকে কথা বলছেন। পোস্টের বিবরণে লেখা, “স্বৈরাচার এ-র অন্যতম আরেক দোষর, ডি এম পি কমিশনার মনিরুল জামান নারী সহ আটক। (বানান অপরিবর্তিত)।

ভিডিও শেয়ার করা একটি পোস্ট বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেটি এখন পর্যন্ত দেখেছেন ১৪ লাখেরও বেশি ব্যবহারকারী এবং শেয়ার করা হয়েছে প্রায় ৯ হাজারবার। এছাড়া একই দাবিতে পোস্ট শেয়ার করা প্রোফাইল, পেজ ও গ্রুপ যাচাইয়ে দেখা যায় এগুলোর বেশিরভাগই বিএনপি সমর্থিত।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর সত্যতা যাচাইয়ে শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। কিন্তু ভিডিওটি মনিরুল ইসলামের দাবি ছাড়া অন্য কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। এরপর শেয়ার করা ফেসবুক পোস্টের মন্তব্যে সূত্রের খোঁজ করা হয়। একটি পোস্টের মন্তব্যে ভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করেন এক ব্যবহারকারী। সেখানে লেখা, “এটা ভুয়া খবর এটা খুলনা বাগেরহাটের একটা ঘটনা এটা মনিরুল না।”
মন্তব্যের সূত্র ধরে এরপর কিওয়ার্ড সার্চ করা হয় অনলাইনে। এবার একাধিক ফেসবুক পোস্ট (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬) ও ইউটিউবে একই বিষয়ের উল্লেখ করে ভিডিও শেয়ার করতে দেখা যায়। এই সবগুলো পোস্টই করা হয় চলতি বছরের ১২ ও ১৩ মার্চে। বিবরণে বলা হয়, বাগেরহাটের এক স্থানীয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক তার বাসায় একটি মেয়েকে নিয়ে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হওয়ার সময় জনতার কাছে ধরা পড়ে। ভিডিও যাচাইয়ে দেখা যায়, এখানে যে পুরুষ ও নারীকে কয়েকজন ব্যক্তি জেরা করছেন তাদের সঙ্গে ফেসবুকে মনিরুল ইসলাম আটকের দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর পুরুষ ও নারীর হুবহু মিল আছে। কক্ষের আসবাবপত্র, বিছানা, চেয়ারের সঙ্গেও বর্তমানে ছড়ানো ভিডিওটি হুবহু মিলে যায়।

ইউটিউবে “বাগেরহাট মিডিয়া” নামের একটি চ্যানেলেও ভিডিওটি আপলোড করা হয় গত ১২ মার্চ। সেখানেও বলা হয়েছিল, যে ব্যক্তিকে জেরা করা হচ্ছে তিনি স্থানীয় স্কুল শিক্ষক।

অনলাইনে অধিকতর কিওয়ার্ড যাচাইয়ে ইনস্টাগ্রামের আরেকটি ভিডিও খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। সেখানে দেখা যায়, যে শিক্ষককে অনৈতিক কাজে লিপ্ত বলে বিভিন্ন ভিডিওতে অভিযোগ করা হয় সে সম্পর্কে ওই শিক্ষকই তার মতামত তুলে ধরছেন। বিবরণে বলা হচ্ছে – বাগেরহাটের এক স্কুলশিক্ষক সম্পর্কে যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, সেটি একটি ষড়যন্ত্র ছিল। তা নিয়ে বিস্তারিত জানালেন তিনি, দেখুন সম্পূর্ণ ভিডিওতে।
গত ১৮ মার্চ ইন্সটাগ্রামে প্রকাশিত এই ভিডিওতে অভিযুক্ত শিক্ষক জানান, মূল ঘটনাটি ঘটেছিল জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের পরপরই। একদল ব্যক্তি তাকে বাধ্য করে নারীকে সঙ্গে নিয়ে তার বাসায় এসেছে এবং এমন ঘটনা মঞ্চস্থ করেছে। চাঁদাবাজির উদ্দেশ্যে এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে ভিডিওতে জানান তিনি। এছাড়া ঘটনাটির আসল রহস্য উন্মোচনে পুলিশের সাহায্য চেয়েছেন এবং তদন্ত চলছে বলে ভিডিওতে জানান তিনি।
এ সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হতে দৈনিক সমকালের বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি তানজীম আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিসমিসল্যাব। হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি শেয়ার করা হলে তিনি জানান, “ভিটিওটি বাগেরহাটের আর ভিডিওতে যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে তিনি বাগেরহাটের একজন স্কুল শিক্ষক।” তিনি আরও জানান, সরকার পতনের পর এক স্কুল শিক্ষককে নিয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে সেখানে যা সামাজিক মাধ্যমে এসেছে গত মার্চে।
অর্থাৎ, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামকে নারীসহ আটকের দাবিতে বর্তমানে ছড়ানো ভিডিওটি আসলে ভুয়া। ভিন্ন একটি ঘটনাকে মিথ্যা দাবিতে বর্তমানে ছড়ানো হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে।
প্রসঙ্গত, মনিরুল ইসলাম বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি ছিলেন এবং সর্বশেষ তিনি পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তিনি কোথায় অবস্থান করছেন সে তথ্য পাওয়া না গেলেও গত বছরের ৭ অক্টোবরে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে তিনি ভারতের দিল্লিতে পালিয়ে গেছেন।