নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
শেখ হাসিনা সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা দাবিতে ছড়ানো প্রতিবেদনটি ২০২৩ সালের

শেখ হাসিনা সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা দাবিতে ছড়ানো প্রতিবেদনটি ২০২৩ সালের

নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ২০২৩ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার একটি প্রতিবেদনের ছবি শেয়ার করা হচ্ছে নতুন দাবিতে। মার্কিন জরিপের বরাতে ইউরোপীয় সংস্থার ভাষ্য দাবিতে শিরোনামে লেখা হয়েছে, “এখনো শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা।” তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে জরিপটি ২০২৫ সালের নয়। মূল জরিপটি ২০২৩ সালের যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) জাতীয় সমীক্ষায় উঠে এসেছিল। বাংলাদেশের তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে দুই বছর আগের সেই জরিপকে বর্তমানের বলে ছড়ানো হচ্ছে। 

ফেসবুকের একটি প্রোফাইল থেকে বাংলাদেশ প্রতিদিনের ছাপা সংস্করণের একটি পাতার ছবি শেয়ার করে দাবি করা হয়, মার্কিন জরিপে এখনো শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। পোস্টের বিবরণে লেখা, “২৫ আগস্ট আজকের নিউজ ২৫/৮/২৫। মার্কিন জরিপে এখনো শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা।” 

পোস্টটিতে দেখা যায় কিছু মন্তব্যকারী পোস্টের সমর্থনে “এটা বাস্তব সত্যি কথা”, “এটা ব্যাস্তয়বতা” (বানান অপরিবর্তিত) বলে মন্তব্য করেছেন। একজন মন্তব্যকারী লিখেছেন “এটা ২০২৩ সালের কেনো মানুষকে বিভ্রান্ত করেন”। পোস্টে থাকা বাংলাদেশ প্রতিদিনের ছবিটি বিশ্লেষণে দেখা যায় সেখানে আগস্ট ২৫, ২০২৩ তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। বেশকিছু পেজ-প্রোফাইল (, , , , , , ) থেকেও ছবিটি শেয়ার করতে দেখা যায়।

প্রতিবেদনের ছবিটির সত্যতা যাচাইয়ে কিওয়ার্ড অনুসন্ধানে দেখা গেছে, একই দাবিতে ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর, ফেসবুকের একটি ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে সেটি আপলোড করা হয়েছিল। পোস্টের বিবরণে উল্লেখ করা হয়, “২৫/০৮/২০২৩ তারিখে দেশের সর্বাধিক প্রচারিত জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত সংবাদ। মার্কিন জরিপ নিয়ে ভাষ্য ইউরোপীয় সংস্থার – এখনো শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা।” একই দাবিতে ২০২৩ সালে বেশকিছু প্রোফাইল (, , , , , , ), পেজ (, , ) গ্রুপ (, , ) থেকেও ছবিটি শেয়ার করতে দেখা যায়।

বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত যে সংবাদের ছবি শেয়ার করে এটি ২০২৫ সালের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে সেখানে প্রতিবেদনটি প্রকাশের সময় দেওয়া আছে ২৫ আগস্ট, ২০২৩। এটি প্রকাশিত হয়েছিল বাংলাদেশ প্রতিদিনের উত্তর আমেরিকা সংস্করণে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে সাপ্তাহিক পত্রিকা আকারে বাংলাদেশ প্রতিদিন প্রকাশিত হয় ২০১৮ সাল থেকে। সংবাদমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত দুইটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। একটি প্রকাশিত হয়েছে ২০২৩ সালের ২০ আগস্ট, যার শিরোনাম ছিল “মার্কিন জরিপ নিয়ে ভাষ্য ইউরোপীয় সংস্থার: এখনো শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা”। আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ২০২৩ সালের ১৯ আগস্ট, যার শিরোনাম ছিল: “এখনও বাংলাদেশে শেখ হাসিনাই বেশি জনপ্রিয়: মার্কিন সংস্থার জরিপ।”

বিষয়টি নিয়ে অধিকতর যাচাইয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা মার্কিন সংস্থার খোঁজ করে ডিসমিসল্যাব। এরপর যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) এর নিজস্ব ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে দেশব্যাপী পরিচালিত একটি জরিপের প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। আইআরআইয়ের ওয়েবসাইটে ‘ন্যাশনাল সার্ভে অব বাংলাদেশ, মার্চ-এপ্রিল ২০২৩’ শীর্ষক জরিপের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় ২০২৩ সালের ৮ আগস্টে। জরিপে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাজকে সমর্থন দিয়েছে দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ। এছাড়া জরিপটির ডেটা সংগ্রহের পদ্ধতিতে বলা হয় ২০২৩ সালের ১ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল দেশের ৬৪টি জেলার ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সি পাঁচ হাজার অংশগ্রহণকারীদের সরাসরি সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে।

আইআরআই পরিচালিত এই জরিপের উল্লেখ পাওয়া যায় ২০২৩ সালের ২১ অক্টোবরে প্রথম আলোর প্রকাশিত একটি মন্তব্য প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়, দেশের সামগ্রিক পথচলা নিয়ে ২০১৩ সাল থেকে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে যে ক্রমবর্ধমান আশাবাদ দেখা যাচ্ছিল, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তা নিরাশায় পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের পাঁচ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ওপর করা ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) সমীক্ষায় জনমনের হতাশা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে। 

এছাড়াও, ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অব পিস (ইউএসআইপি) এর ওয়েবসাইটে “বাংলাদেশ: সার্ভে রিভিলস প্রিমিয়ার রিমেইনস পপুলার ডেসপাইট গ্রোয়িং পাবলিক ডিসকন্টেন্ট” শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয় ২০২৩ সালের ৯ আগস্ট। এটি লিখেছেন আইআরআই’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডেভিড হুগস্ট্রা ও সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ জিওফ্রে ম্যাকডোনাল্ড। জরিপটি নিয়ে সেসময় একাধিক সংবাদমাধ্যমেও (, , , ) প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। 

অর্থাৎ, ছড়িয়ে পড়া প্রতিবেদন ও জরিপের দাবিটি ২০২৩ সালের যা শেয়ার করা হচ্ছে সাম্প্রতিক বলে।

আরো কিছু লেখা