তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
সাকিবের চড় মারার ভাইরাল ভিডিওটি আজকের নয়
This article is more than 7 months old

সাকিবের চড় মারার ভাইরাল ভিডিওটি আজকের নয়

তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটার এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী সাকিব আল হাসান ভিড়ের মধ্যে এক ব্যক্তিকে চড় মারছেন– এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে, ঘটনাটি ঘটেছে আজ, ৭ জানুয়ারি, নির্বাচনের দিনে। ভাইরাল সেই ভিডিও নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে মূলধারার একাধিক গণমাধ্যমেও। তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায় ঘটনাটি আজকের নয়, বরং গত ২ জানুয়ারির।

একাধিক মূলধারার গণমাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেল (, , ), বিভিন্ন ফেসবুক পেজ (, , ) ও ব্যক্তিগত প্রোফাইলে (, , ) ভিডিওটি শেয়ার করতে দেখা গেছে। বলা হচ্ছে ভোটের মাঠে মেজাজ হারালেন সাকিব আল হাসান। তবে তারিখ উল্লেখ না থাকায় ভিডিওটি আজকের বলে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।

ফেসবুকের বিভিন্ন পেজে দেশ টিভির লোগো সম্বলিত ভিডিওটি শেয়ার হতে দেখা যায়। সেই সূত্র ধরে দেশ টিভির ইউটিউব চ্যানেল অনুসন্ধান করে ডিসমিসল্যাব। চ্যানেলটিতে “ভোটের মাঠে মেজাজ হারালেন সাকিব আল হাসান” শিরোনামে একই ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়। ভিডিওতে দেখা যায় সাকিব ভিড় ঠেলে গাড়িতে ওঠার চেষ্টা করছেন। চারপাশ ঘিরে রেখেছে উৎসুক ভক্তরা। পেছন থেকে কিছু ভক্ত সাকিবকে টেনে ধরলে পেছনে ঘুরে এক ব্যক্তিকে চড় মারেন সাকিব। ১৬ সেকেন্ডের একই ভিডিও দুবার জোড়া লাগিয়ে চড় মারার দৃশ্যটি ধীরগতিতে রেখে প্রচার করেছে চ্যানেলটি। উক্ত ভিডিওটি এখন পর্যন্ত ১৫ লাখেরও বেশিবার দেখা হয়েছে। লাইক পড়েছে ৪৬ হাজারের বেশি এবং মন্তব্য করেছেন ১১ হাজারেরও বেশি ব্যবহারকারী। যার বেশিরভাগই নেতিবাচক।

এক ইউটিউব ব্যবহারকারী লিখেছেন, “বেয়াদব কখনো ভালো হয় না তারই প্রমাণ এটা”। আরেকটি কমেন্টে লেখা হয়েছে, “নির্বাচন শেষ এখন আসল রুপ বের হচ্ছে, এটাই আমাদের অভিনেতা সাকিব।” আরেকজন লিখেছেন, “এমপি হওয়ার পূর্বেই সাকিবের উন্নয়ন শুরু হয়ে গেছে মাশাল্লাহ।”

ফেসবুকেও ভিডিওটি আজকের মনে করে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। “স্যাভেজ ট্রাইব” পেজ থেকে শেয়ার করা ভিডিওতে এক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, “ভোট তো শেষ! আর কত সহ্য করা যায়!” আরেক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “আজ শুধু বিনোদন, ভালোই কাটছে দিনটা।” আরেকজন মন্তব্য করেছেন, “ভাই এখনো ভোট গণনা শেষ হয়নি, এত তাড়াতাড়ি ফর্মে ব্যাক করছেন।”

শুধু সোশ্যাল মিডিয়ায় নয়, আলোচ্য ভিডিওটি আজকের বলে দাবি করেছে একাধিক মূলধারার গণমাধ্যমও। “মেজাজ হারিয়ে সমর্থককে কষে চড় মারলেন সাকিব” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করে প্রতিদিনের বাংলাদেশ। সেখানে বলা হয়- “মাগুরা-১ আসনে নৌকার প্রার্থী সাকিব আল হাসান তার দলীয় এক সমর্থককে মেজাজ হারিয়ে চড় মেরেছেন। রবিবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ঘটেছে এ ঘটনা। তার চড় মারার একটি ভিডিও সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে”। একই দাবিতে সংবাদ প্রকাশ করে ‘দৈনিক যুগান্তর’

তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা গেছে উক্ত ভিডিওটি ৭ জানুয়ারি অর্থাৎ নির্বাচনের দিনের নয়। প্রকৃত ঘটনাটি আসলে ২ জানুয়ারির। নির্বাচনী জনসভায় মাগুরা থেকে ফরিদপুরে আসলে সেখানে উক্ত ঘটনা ঘটে। 

গত ২ জানুয়ারী নির্বাচনী জনসভায় ফরিদপুরে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উক্ত সমাবেশে যোগ দিতেই মাগুরা থেকে ফরিদপুর আসেন সাকিব। সেখানে ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর হয়ে জনসংযোগও করেন তিনি। সমাবেশ শেষ করে মাগুরার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার ঠিক আগে উক্ত ঘটনা ঘটে।

এ প্রসঙ্গে চ্যানেল টুয়েন্টিফোর-এর একটি লাইভ ভিডিও খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। “সরাসরিঃ সাকিবের, সমর্থকদের গায়ে হাত তোলার ভাইরাল ভিডিও নিয়ে যা জানা গেল” ক্যাপশনের ভিডিওটিতে ঘটনার দিনে উপস্থিত দুজন সাংবাদিকের সাক্ষাৎকার দেখানো হয়। তারা উভয়েই বলেন ঘটনাটি আজকের নয়, বরং ২ তারিখের। নির্বাচনী সমাবেশ শেষে সাকিবের ফেরার সময় এই ঘটনা ঘটে। সাকিবের সেদিনের পোশাক এবং আজকের পোশাকে মিল থাকার কারণে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে। যার কারণে এই বিভ্রান্তিমূলক ভিডিওটি আজকের বলে ভাইরাল হয়। ঢাকা পোস্টের একটি প্রতিবেদনেও উল্লেখ করা হয় যে, ঘটনাটি গত ২ জানুয়ারির।

একই রকমের আরেকটি ভিডিও পাওয়া যায় ফেসবুকে। তবে সেই ভিডিওটি শেয়ার করা হয় নির্বাচনের আগের রাতে। “রুমকি দ্য বিগেস্ট আইলস্যা” পেজ থেকে নির্বাচনের আগের রাতে ১২ টা ২৩ মিনিটে শেয়ার করা হয় ১৬ সেকেন্ডের সেই ভিডিওটি। যেখানে সাকিবকে এক সমর্থককে চড় মারতে দেখা যায়। “No more control” ক্যাপশনে প্রচারিত ভিডিওটি এ পর্যন্ত ১৯ বার শেয়ার হয়েছে ফেসবুকে। 

তাই সাকিবকে মারতে দেখা এই ভিডিওটি আজকের বলে প্রচারিত হওয়া বিভ্রান্তিমূলক। ঘটনাটি নির্বাচনের দিনের নয় বরং নির্বাচনী প্রচারকালীন সময়ের।

আরো কিছু লেখা