তৌহিদুল ইসলাম রাসো
ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী নেতাদের বৈঠকের দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি পাকিস্তানের
তৌহিদুল ইসলাম রাসো
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক ও এক্সে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে বৈঠকে বসছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আরো বলা হচ্ছে, ভারত সরকারের সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় দেশত্যাগের পর এই প্রথম গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করছেন তারা। তবে, যাচাইয়ে দেখা গেছে ভিডিওটি পুরোনো এবং পাকিস্তানের ভিন্ন একটি ঘটনার।
একই দাবি করা ভিডিওগুলো (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮) গত ২৭ মে থেকে ফেসবুকে শেয়ার করতে দেখে ডিসমিসল্যাব। এক্সেও শেয়ার হয় ভিডিওটি। ক্যাপশনে লেখা, “ব্রেকিং…ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শেখ তন্ময়, বাহারউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, শেখ সেলিম সহ আওয়ামী লীগের কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে ভারত সরকারের সর্বোচ্চ নিরাপত্তায়। দিল্লির থেকে উড়িস্যায় পৌঁছেছেন স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা। দেশ ত্যাগের পর তাদের সাথে এই প্রথম বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন।”

সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের এক পেজ থেকে শেয়ার করা ১ মিনিট ৩ সেকেন্ডের ভিডিওটি এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজারবার দেখা হয়েছে, শেয়ার করা হয়েছে প্রায় ৫০০ বার। ভিডিওতে দেখা যায় খোলা মাঠে একটি হেলিকপ্টার অবতরণ করে এবং এর অন্যপাশে অনেকগুলো গাড়ি ঘিরে আছে। হেলিকপ্টার থেকে নেমে কয়েকজন ব্যক্তিকে গাড়ি উঠতে দেখা যায় এবং এরপর গাড়িবহরটি সামনে এগিয়ে চলে। আর ভিডিওটির নিচের দিকে “জিএনএনএইচডি.টিভি” নামের একটি প্রতিষ্ঠানের লোগো ও ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের অ্যাকাউন্টের নাম দেখা যায়।

ঘটনাটির সত্যতা যাচাইয়ে শুরুতে ভিডিওটির কিফ্রেম ধরে অনলাইনে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখে ডিসমিসল্যাব। সার্চে পাকিস্তান থেকে পরিচালিত এক ফেসবুক পেজের পোস্টে একই জায়গার ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। গত বছরের ১৩ আগস্টে উর্দু ভাষায় লেখা সেই পোস্টের ক্যাপশন গুগল ট্রান্সলেট করে জানা যায়, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ আরশাদ নাদিম নামের ব্যক্তিকে গাড়ি উপহার করেছেন, যা নিশ্চিত করেছন আরশাদ নাদিমের বাবা মুহাম্মদ আশরাফ।
এরই সূত্র ধরে পোস্টে উল্লেখ করা ব্যক্তিদের নাম, পদবি, পুরস্কার দিয়ে অনলাইনে কিওয়ার্ড সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। সেখানে পাকিস্তানের কিছু সংবাদমাধ্যমের ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলে (১, ২) ও ফেসবুক পেজে হুবহু একই জায়গার ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়, “পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ অলিম্পিক স্বর্ণপদক বিজয়ী আরশাদ নাদিমকে দেখতে হেলিকপ্টারে করে মিয়া চান্নুতে পৌঁছেছেন।”
ঘটনাটি সম্পর্কে অধিকতর নিশ্চিত হতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির নিচে দেখতে পাওয়া প্রতিষ্ঠানের নাম ও লোগো অনলাইনে সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। সেখানে দেখা যায় “জিএনএন” হলো পাকিস্তানের একটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম। সংবাদমাধ্যমটির ফেসবুক পেজে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড ধরে সার্চ করে হুবহু একই জায়গায় ভিডিও পাওয়া যায়। ২০২৪ সালের অর্থাৎ গতবছরের ১৩ আগস্টে সেই লাইভ ভিডিওর ক্যাপশনে উর্দুতে লেখা ছিল, “স্বর্ণ পদকপ্রাপ্ত আরশাদ নাদিমের বাড়িতে পৌঁছেছেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ। লাইভ দেখুন।”

একই ঘটনা নিয়ে সংবাদমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে অনলাইন প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, “প্যারিস অলিম্পিকে জ্যাভলিন থ্রোতে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত আরশাদ নাদিমকে পুরস্কার প্রদান করেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ। তিনি মিয়া চান্নুতে আরশাদ নাদিমের সঙ্গে দেখা করেন এবং তার ঐতিহাসিক কৃতিত্বের ১০ কোটি টাকা পুরস্কার এবং একটি গাড়িও প্রদান করেন। আরশাদের সাথে দেখা করার পর মরিয়ম নওয়াজ হেলিকপ্টারে করে লাহোরের উদ্দেশ্যে রওনা হন।”
অর্থাৎ, প্রায় এক বছর আগে পাকিস্তানের পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ দেশটির অলিম্পিক জয়ী ক্রীড়াবিদকে পুরস্কার দিতে হেলিকপ্টারে আগমনের ভিডিও বর্তমানে ভুয়া দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে।