তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
পুরোনো ভিডিও ফিরে আসে, ভিন্ন ভিন্ন দাবিতে

পুরোনো ভিডিও ফিরে আসে, ভিন্ন ভিন্ন দাবিতে

তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সম্প্রতি একাধিক সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিতের খবর শুনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মাদার বখশ হল দখলে নিয়েছে ছাত্রলীগ। আবার একই ভিডিও ছয় মাস আগেও ছড়িয়েছিল রাবিতে শিবির ও ছাত্রদলের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ দাবিতে। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে একই ভিডিওকে জড়িয়ে ছড়ানো দুটি দাবিই ভুয়া। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এক বছর আগের মূল ঘটনাটি ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের।

ফেসবুকে গত ১২ মে থেকে ছাত্রলীগের হল দখলের দাবিতে ভিডিও ছড়াতে দেখে ডিসমিসল্যাব। একাধিক ব্যবহারকারী তাদের পোস্টগুলোতে (, , , , , ) হুবহু একই বিবরণে লেখেন, “উত্তাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ✊আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিতের খবর শুনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখস হল দখলে নিলো ছাত্রলীগ। তোরা নিষিদ্ধ করে আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে দিয়েছিস।” একই দাবিতে পোস্ট শেয়ার করতে দেখা গেছে সামাজিক মাধ্যম এক্সেও। ৪৬ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যায়, রাতের বেলায় একদল মানুষ হাতে লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় দৌড়াচ্ছে এবং ভিডিওর শেষের দিকে একটি ভবনের মূল ফটকের সামনে বাংলা ও ইংরেজিতে “মাদার বখশ হল” লেখা দেখা যাচ্ছে।

ঘটনাটির সত্যতা যাচাইয়ে ভিডিওর কিফ্রেম ধরে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে গত বছরের নভেম্বরের একটি ফেসবুক পোস্ট ডিসমিসল্যাবের নজরে আসে। ১ মিনিট ২০ সেকেন্ডের এই ভিডিও পোস্ট করে বিবরণে বলা হয়, “রণক্ষেত্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, এই মুহুর্তে মাদার বখস হলে শিবির-ছাত্রদলের মধ্যে তুমুল সং ঘ র্ষ চলছে, সমন্বয়ককে হলে আটকে রেখেছে শিক্ষার্থীরা।” সম্প্রতি ছাত্রলীগের হল দখলের দাবিতে যে ভিডিও ছড়িয়েছে, সেটিরই একটি দীর্ঘ সংস্করণ ছিল গত নভেম্বরে ছড়ানো এই ভিডিও। সে সময়ে একাধিক ব্যবহারকারী সেটি (, , , ) শেয়ার করেন ফেসবুকে।

পরবর্তীতে ভিডিওটির অন্য একটি কিফ্রেম ধরে পুনরায় অনলাইনে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। এবার সংবাদমাধ্যম দেশ রুপান্তরে ২০২৪ সালের ১২ মে প্রকাশিত এক অনলাইন প্রতিবেদনে ব্যবহার করা ছবির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজের হুবহু মিল পাওয়া যায়। বিশ্লেষণে দেখা যায় দুটি ভিন্ন দাবিতে যে ভিডিওটি ছড়ানো হয়েছে তার সাত সেকেন্ড অংশের সঙ্গে দেশ রুপান্তরের প্রতিবেদনে ব্যবহার করা ছবির হুবহু মিল আছে। “রাবিতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ-ককটেল বিস্ফোরণ” শিরোনামের সেই প্রতিবেদনে ঘটনার বিস্তারিত জানাতে গিয়ে বলা হয়, রাবির সোহরাওয়ার্দী হলে টিভিরুমে বসা নিয়ে হলের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদের সঙ্গে হল কমিটির সহ-সভাপতি আতিকুর রহমানের কথা কাটাকাটি হয়। এরই সূত্র ধরে পরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় দেশীয় অস্ত্রের মহড়াও দেখা যায়।

এরপর কিওয়ার্ড সার্চ করে একই ঘটনার একাধিক সংবাদ প্রতিবেদন (, , ) খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। এসব প্রতিবেদনে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ বলেই ঘটনার উল্লেখ করা হয়। একই ধরনের ফুটেজ পাওয়া যায় সেই সময়ে প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিও প্রতিবেদনেও। প্রথম আলোর সেই ভিডিও প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষ।” এছাড়া সংবাদমাধ্যম ডিবিসি নিউজের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলেও সে সময়ে একই ঘটনার বলে হুবহু ফুটেজ শেয়ার করতে দেখা যায়।

অর্থাৎ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যকার সংঘর্ষের ঘটনা এক বছরের মধ্যে কমপক্ষে দুইবার ভিন্ন দাবিতে ছড়াতে দেখা যায়। গত নভেম্বরে সেটি ছড়ায় শিবির-ছাত্রদল সংঘর্ষের দাবিতে, আর বর্তমানে ছড়ায় আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিতের খবর শুনে ছাত্রলীগ মাদার বখশ হল দখলে নিয়েছে দাবিতে – কিন্তু এই দুটো দাবিই ভুয়া।

প্রসঙ্গত, গত ১২ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সব অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত সংগঠনগুলোর যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। একই দিনে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধনও স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আরো কিছু লেখা