আহমেদ ইয়াসীর আবরার
১৮ সালের ঢাবির আন্দোলনকে তিতুমীর কলেজের সংঘর্ষ বলে প্রচার
আহমেদ ইয়াসীর আবরার
শহীদ তিতুমীর কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে সমন্বয়কদের হাতাহাতি হয়েছে এবং সমন্বয়কদের কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে- এমন দাবিতে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওটি ২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়নবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপরে ছাত্রলীগের হামলার। এর সঙ্গে সম্প্রতি তিতুমীর কলেজে চলমান আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই।
“রণক্ষেত্র মহাখালী__শহীদ তিতুমীর কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে সমন্বয়কদের তুমুল টি টোয়েন্টি শুরু হয়েছে, সমন্বয়কদের কলেজ থেকে বের করে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা !”- এ ক্যাপশনে একটি ভিডিও পোস্ট হতে দেখা যাচ্ছে ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি ও পেজ থেকে (১, ২, ৩)। ভিডিওটিতে একটি কলাপসিবল গেটের মধ্যবর্তী জায়গায় দুইটি গ্রুপকে সংঘর্ষে লিপ্ত দেখা যাচ্ছে। প্রসঙ্গত, ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করাসহ তিনদফা দাবিতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে সোমবার দিনভর আন্দোলন করেছেন কলেজটির শিক্ষার্থীরা।
ভিডিওটির সূত্র যাচাই করতে গেলে ডিসমিসল্যাবের সামনে আসে ২০১৯ সালে পোস্ট হওয়া একটি ভিডিও। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা, “নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রথম অংশ! ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ রেজিস্টার বিল্ডিং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।” পোস্টটির কমেন্টে পোস্টদাতা লিখেন, “অধিভুক্তি বাতিলের আন্দোলনে নির্যাতন-নিপীড়নের বিচারের দাবিতে ১৭ তারিখ প্রক্টর অফিস ঘেরাও করা হলে সেদিন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন উপাচার্য। পরবর্তীতে ৪৮ কর্মঘণ্টা পার হয়ে গেলেও আমরা তদন্ত কিংবা বিচারের নূন্যতম কোন কাজ কর্ম দেখতে পাইনি। ফলে আমরা ২৩ জানুয়ারি ভিসি কার্যালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিই। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা ভিসি কার্যালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গিয়ে দেখি তারা ভিসি কার্যালয়ে প্রবেশের ৩টি গেটে মোটা শিকল দিয়ে তালা বেঁধে রেখেছেন। সেই গেট খুলতে বলার পরও তারা গেট না খুললে আমরা গেট ভেঙ্গে ভিতরে যাই এবং বিচারের দাবিতে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করি। উপাচার্য কোন নির্ধারিত বক্তব্য ছাড়াই আমাদের ফিরে যেতে বললে আমরা প্রত্যাখ্যান করি। এবং পরবর্তীতে ছাত্রলীগ ডেকে আমাদের ওপর হামলা চালায় এই ভিসি/প্রক্টরবাহিনী। ছাত্রলীগের আমাদের সব দিক দিয়ে ঘিরে ফেলে এবং উপরের ভিডিওটি হামলার শুরুর দিকের একাংশ।”
এই ঘটনা নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয় সেই সময় (১, ২, ৩)। মূলত, ছাত্রী নিপীড়নের বিচারসহ চার দফা দাবিতে আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে অবরুদ্ধ করে আন্দোলনকারীরা। পরবর্তীতে আন্দোলনকারীদের উপর হামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এই ঘটনায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।
অপরদিকে সরকারী তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করাসহ তিনদফা দাবিতে আন্দোলন করছে কলেজটির শিক্ষার্থীরা। আজ ১৯ নভেম্বর, মঙ্গলবার বিকালে ১৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দিকে যায় বলে সংবাদ প্রতিবেদনে জানা যায়। এই আন্দোলন নিয়ে চলছে নানাবিধ আলোচনা-সমালোচনা।
চলতি মাসে আরেকটি ভিন্ন ঘটনার ভিডিওকে জামায়াতের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ হিসেবে প্রচার করা হলে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব। এছাড়া, চলতি বছরের অক্টোবরে, আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনে গ্রেফতার আন্দোলনকারীদের ভিডিও পোস্ট করে তাদেরকেই ছাত্রলীগের কর্মী বলে দাবি করে ভিডিও ছড়ালে সেটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব।