মো. তৌহিদুল ইসলাম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
ধর্ষণের অভিযোগে গণপিটুনির পুরোনো ভিডিও, বিএনপি কর্তৃক নির্যাতনের দাবিতে প্রচার

ধর্ষণের অভিযোগে গণপিটুনির পুরোনো ভিডিও, বিএনপি কর্তৃক নির্যাতনের দাবিতে প্রচার

মো. তৌহিদুল ইসলাম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

বিএনপির প্রোগ্রামে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ায় একটি ছেলেকে বিএনপির সন্ত্রাসীরা নির্যাতন করেছে এমন দাবিতে একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ছড়াতে দেখা যায়। তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা গেছে, দাবিটি সত্য নয়। মূলত, গত ১৮ মার্চ খিলক্ষেত এলাকায় শিশু ধর্ষণের অভিযোগে একটি ছেলেকে গণপিটুনি দেওয়ার ভিডিও চিত্র এটি। এর সঙ্গে ‘বিএনপির প্রোগ্রামে জয় বাংলা স্লোগান দেওয়ায় নির্যাতনের’ ঘটনার কোনো সম্পর্ক নেই। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক (, , ), এক্স (, ) ও ইনস্টাগ্রামে (, ) বেশ কিছু প্রোফাইল ও পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। ‘পিপল’স পাওয়ার – এ এল’ নামের একটি পেজ থেকে ৮ আগস্টে ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়, “বিএনপির পোগ্রামে যে শিশু ‘জয় বাংলা’ বলায় ভাইরাল হয়েছিল, সেই শিশুই রাতে বিএনপির সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের শিকার! শুধু একটি কারণ—সে বিএনপির মিছিলে গিয়েও বলেছিল “জয় বাংলা”। শিশুর মুখ থেকে উচ্চারিত একটিমাত্র স্লোগান এতটাই ভয়ংকর হয়ে উঠলো? এটাই কি তোমাদের রাজনীতি? এটাই কি মানবতা?” ভিডিওটি এখন পর্যন্ত ৫০০-রও বেশি শেয়ার হয়েছে, রিয়েকশন পেয়েছে ৬০০-রও বেশি। কয়েকটি পোস্টের ক্যাপশনে লেখা, “শিশুটির অপরাধ ছিল বিএনপির মিছিলে গিয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলা ,,”। আংশিক স্পষ্ট ঐ ৩৪ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায় একটি ছেলেকে বেশকয়েকজন মিলে মারধর করছে।

ধর্ষণের অভিযোগে গণপিটুনির পুরোনো ভিডিও, বিএনপি কর্তৃক নির্যাতনের দাবিতে প্রচার - ফ্যাক্টচেক

ভিডিওটির কয়েকটি কী-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে দেখা যায়, একই দৃশ্য সম্বলিত ভিডিও গত মার্চ মাসেও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট হয়েছিল। ফেসবুকে পোস্ট হওয়া তখনকার (১৯ মার্চ) কয়েকটি ভিডিওর (, , ) ক্যাপশনে ধর্ষণের অভিযোগে একটি ছেলেকে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষুব্ধ জনতা ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনি দেওয়ার বিষয়ে উল্লেখ থাকতে দেখা যায়।

ধর্ষণের অভিযোগে গণপিটুনির পুরোনো ভিডিও, বিএনপি কর্তৃক নির্যাতনের দাবিতে প্রচার

এই বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করলে চলতি বছরের ১৯ মার্চে চ্যানেল টুয়েন্টি-ফোর ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড হওয়া একটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। “খিলক্ষেতের শিশুর শরীরে ‘ধর্ষণের আলামত’, ‘শঙ্কামুক্ত নয়’ আটক কিশোর” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির ১৬ সেকেন্ড থেকে ১৮ সেকেন্ডে যে দৃশ্যটি দেখা যায় তার সাথে ফেসবুকে পোস্ট হওয়া ভিডিওর মিল পাওয়া যায়।

চ্যানেল টুয়েন্টি-ফোর ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড হওয়া একটি সংবাদ প্রতিবেদন

এই ঘটনায় সংবাদমাধম্যেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় (, , , , ) । প্রথম আলোতে ১৯ মার্চ প্রকাশিত খবরের শিরোনামে লেখা হয়,  খিলক্ষেতে ধর্ষণের অভিযোগে কিশোরকে গণপিটুনি, পুলিশের ওপর হামলা। প্রতিবেদনটিতে আরও জানানো হয়, “রাজধানীর খিলক্ষেতে ধর্ষণের অভিযোগে এক কিশোরকে পিটিয়ে আহত করেছেন স্থানীয় ক্ষুব্ধ জনতা। থানায় নেওয়ার সময় পুলিশের গাড়িতে হামলা করা হয়। এতে থানার ওসি (তদন্ত) আশিকুর রহমান গুরুতর আহত হন। তাঁকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত কিশোরকেও হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আজ রাতে খিলক্ষেত বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।”

অর্থাৎ, বিএনপির প্রোগ্রামে ‘জয় বাংলা’ বা ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেওয়ায় সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের শিকার হয়েছে– এমন দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয় এবং মূল ঘটনার সাথে দাবিটিরও কোনো সম্পর্ক নেই। 

আরো কিছু লেখা