মো. তৌহিদুল ইসলাম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
আগস্ট ১১, ২০২৫
১৩:১২:৫১
এনসিপির নেতাকর্মীরা হত্যা করেছে দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার
This article is more than 2 months old

এনসিপির নেতাকর্মীরা হত্যা করেছে দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার

আগস্ট ১১, ২০২৫
১৩:১২:৫১

মো. তৌহিদুল ইসলাম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় দলটির নেতাকর্মীরা ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে একজন যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে– এমন দাবিতে একটি ভিডিও সম্প্রতি প্রচারিত হতে দেখা গেছে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, ভিডিওটি পুরোনো। এবং এটি যাত্রাবাড়ীর কোনো ঘটনাও নয়। গত ৩০ জুন গাজীপুরের কোণাবাড়িতে শ্রমিক হত্যার পুরোনো ঘটনাকে ভুল দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে। 

ফেসবুকে ন্যাশনালিস্ট পাওয়ার এবং ভাইরাল পলিটিক্স নামের দুটি পেজ থেকে গত ৮ আগস্ট ৩৪ সেকেন্ডের এই ভিডিও পোস্ট করে লেখা হয়, “রাতে ফেসবুকে পোস্ট সকালে Ncp নেতাকর্মীরা পোস্ট দেওয়া সেই যুবককে পিটিয়ে হ/ত্যা করে। আহ কি নির্মম হ/ত্যাকান্ড । এ দেশে কি এগুলোর বিচার কখনো হবে? ঘটনাটি ঘটে যাত্রাবাড়ী আজ সকালে।” এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত দুইটি পোস্টই চারশর বেশিবার শেয়ার হতে দেখা যায়।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় দলটির নেতাকর্মীরা ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে একজন যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে – এই দাবিটি ভুয়া।

ভিডিওটির সূত্র যাচাই করতে বিভিন্ন কি-ফ্রেম নিয়ে সার্চ করে গত ৩০ জুন ফেসবুকে পোস্ট করা একটি পুরোনো ভিডিও খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা ছিল, “একজন শ্রমিক কে চুরির অপবাদে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে, এখন বিষয়টা হচ্ছে, সামান্য চোরের অপরাধে একজন শ্রমিককে এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো, তাহলে যারা দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে তাদের কি করা উচিত। বিষয়টা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং শ্রমিক ফেডারেশনের কাছে জানতে চাই।”

একই দিনে ঘটনাটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, সময় টেলিভিশনএকুশে টেলিভিশন সহ আরও বেশকিছু সংবাদমাধ্যম। এসব প্রতিবেদন অনুসারে, ঘটনাটি ঘটে গত ২৮ জুন, গাজীপুরের কোনাবাড়িতে গ্রীনল্যান্ড লিমিটেড কারখানায়। সেখানে চোর সন্দেহে হৃদয় (১৯) নামের একজন শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার  অভিযোগ ওঠে।

ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে এনসিপি কর্মীদের হাতে যাত্রাবাড়িতে এক যুবক নিহত দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি আসলে গাজীপুরের কোণাবাড়িতে হৃদয় নামের একজন শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যার পুরোনো ঘটনার।

প্রাসঙ্গিক কিছু কীওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক ভিডিও প্রতিবেদনও (, , , ) খুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব। এসব প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ভিডিও ফুটেজের সঙ্গে সম্প্রতি ‘এনসিপি নেতাকর্মীদের হত্যাকান্ডের’ দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজের হুবহু মিল লক্ষ্য করা যায়।

ডেইলি স্টারের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে ডিসমিসল্যাব। প্রতিবেদনটিতে ব্যবহৃত একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, একজন যুবককে আরেকজন ব্যক্তি দুই পা ধরে মেঝেতে শোয়ানো অবস্থায় টেনে নিয়ে আসছেন। যুবকের হাত পেছন দিকে বাঁধা এবং পরনে প্যান্ট থাকলেও শরীরে কোনো কাপড় নেই। একটু পরেই যুবকটি উঠে দাঁড়ায় এবং তাঁকে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হয়। 

ভিডিও ফুটেজে যে ব্যক্তি তার দুই পা ধরে টেনে এনেছেন, তার মুখে দাঁড়ি এবং পরনে একটি পোলো টি-শার্ট ও জিন্স রয়েছে। ভিডিওতে লাঠি হাতে আরেকজন ব্যক্তিকেও দেখা যায়, যার পরনেও পোলো টি শার্ট ও জিন্স রয়েছে । এছাড়াও হলুদ শার্ট পরিহিত একজনকেও ভুক্তভোগী যুবকের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ওই নির্দিষ্ট সিসিটিভি ফুটেজটিতে ভুক্তভোগীসহ মোট ১১ জন মানুষকে দেখা যায়। 

ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে ব্যবহৃত সকল ভিডিও ফুটেজের সঙ্গে সম্প্রতি এনসিপির নেতাকর্মী কর্তৃক নির্যাতনের দাবিতে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর হুবহু  মিল রয়েছে। তবে ডেইলি স্টারের ব্যবহৃত ফুটেজে সিসিটিভি ক্যামেরার টাইমলাইন দেয়া থাকলেও, সম্প্রতি ছড়ানো ভিডিওটিতে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরার আইকন বা টাইমলাইন নেই।

অর্থাৎ, ভিডিওটির সঙ্গে এনসিপির বিরুদ্ধে পোস্ট দেয়ায় যাত্রাবাড়ীতে নির্যাতনের কোন সম্পর্ক নেই। এটি মূলত গাজীপুরে একজন গার্মেন্টস শ্রমিককে পিটিয়ে হত্যা ঘটনার দৃশ্য। 

আরো কিছু লেখা