মিনহাজ আমান

রিসার্চ-লিড, ডিসমিসল্যাব
ওবায়দুল কাদেরের ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি

ওবায়দুল কাদেরের ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি

মিনহাজ আমান

রিসার্চ-লিড, ডিসমিসল্যাব

এপ্রিলের ১১ তারিখ থেকে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে কলকাতার একটি হাসপাতালের সামনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছবি ছড়াতে দেখা গেছে। তিনি কলকাতায় আছেন এবং সেখানকার একটি হাসপাতালে তাকে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে– এই দাবিতে একজন সাংবাদিকের ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল হলে পরবর্তীতে আলোচিত ছবিটিও ফেসবুকে অনেকে শেয়ার করেন। পরে সেটি গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হতে দেখা যায়। কিন্তু যাচাইয়ে দেখা গেছে, ওবায়দুল কাদেরের ছবিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি।

গত ১১ এপ্রিল সকাল সন্ধ্যা পত্রিকার সম্পাদক গাজী নাসির উদ্দিন একটি ফেসবুক পোস্টে বলেন, তার এক বন্ধু তাকে জানিয়েছেন, কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে ওবায়দুল কাদেরকে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। পরবর্তীতে এর উপর ভিত্তি করে সংবাদমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়। তারপরেই ফেসবুকে অনেকে এই আওয়ামী লীগ নেতার একটি ছবি শেয়ার করেন, যেখানে দেখা যায় তিনি মুখ ঢেকে একটি হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ ছবিটি শেয়ার করে করে লিখেছেন, “পরিচিত কারো সঙ্গে মিল খুঁজে পেলে তা নিতান্তই কাকতালীয়।” এমনকি দৈনিক রুপালী বাংলাদেশ নামের একটি গণমাধ্যমেও ছবিটি প্রকাশিত হয়েছে, যার শিরোনাম ছিল, “দেখা মিলল ওবায়দুল কাদেরের।” এছাড়া অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিডি২৪ লাইভের একটি প্রতিবেদনেও এই ছবিটি যুক্ত করা হয়েছে। তবে কেউই ছবির কোনো সূত্র উল্লেখ করেনি।

ফেসবুক পোস্ট ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট

ছবিতে সাইনবোর্ড থেকে হাসপাতালের নাম পুরোপুরি দেখা না গেলেও ছবির দেয়াল ও পাশের অ্যাম্বুলেন্স থেকে ধারণা করা যায়, ওবায়দুল কাদেরের ছবির পেছনের হাসপাতালটির নাম “নর্থ সিটি হসপিটাল।” সার্চ করে এই নামে হাসপাতালটির একাধিক ছবিসহ অবস্থান গুগলে ও ফেসবুক পোস্টে পাওয়া যায়। এই নামের একটি হাসপাতাল কলকাতার বাগমারী রোডে অবস্থিত। তবে গুগলে পাওয়া একাধিক ছবির সঙ্গে ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট ছবির রয়েছে বেশ কিছু অমিল।

যেমন, আলোচ্য ওবায়দুল কাদেরের পেছনের হাসপাতালটিতে চারটি জানালা দেখা যাচ্ছে, কিন্তু গুগল থেকে পাওয়া ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে পাঁচটি জানালা।

গুগলে পাওয়া ছবি (বামে), ফেসবুকে ছড়ানো ছবি (ডানে)

দ্বিতীয়ত, ওপেন সোর্সে অর্থাৎ গুগলে বা ফেসবুকে অন্যদের শেয়ার করা ছবিতে দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালটির প্রধান সাইনবোর্ডের দুই পাশে দুটি নীল স্তম্ভ আছে, কিন্তু ফেসবুকের ছবিটিতে এটি অনুপস্থিত। 

গুগলে পাওয়া ছবি (বামে), ফেসবুকে ছড়ানো ছবি (ডানে)

তৃতীয়ত, ফেসবুকে ছড়ানো ছবিটিতে হাসপাতালের প্রধান সাইনবোর্ডের সঙ্গে গুগলে পাওয়া ছবিগুলোর সাইনবোর্ডে অমিল লক্ষ্য করা যায়। গুগলে পাওয়া ছবিগুলোতে সাইনবোর্ডটি ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি এবং ইটালিক ফন্টে লেখা বোঝা গেলেও ওবায়দুল কাদেরের ছবিতে সেগুলো স্পষ্ট নয়।

গুগলে পাওয়া ছবি (বামে), ফেসবুকে ছড়ানো ছবি (ডানে)

এছাড়া, ওবায়দুল কাদের সংক্রান্ত ছবিটির সঙ্গে অন্যদের শেয়ার করা ছবিগুলোর আরো পার্থক্য ধরা পড়ে হাসপাতালের মূল গেটের পাশে থাকা নীল রঙের সাইনবোর্ড এবং এ্যাম্বুলেন্সের গায়ের লেখাগুলো খেয়াল করলে। যেমন, ওবায়দুল কাদেরের ছবির পেছনের নীল সাইনবোর্ডে লেখা, নর্থ সিটি ইমেজিং সেন্টার, কিন্তু অন্য ছবিগুলোতে একই জায়গায় লেখা আছে, নর্থ সিটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। 

গুগলে পাওয়া ছবি (বামে), ফেসবুকে ছড়ানো ছবি (ডানে)

একইভাবে ফেসবুকের ছবিটিতে এ্যাম্বুলেন্সের গায়ে কেবল হাসপাতালটির নাম উল্লেখ থাকলেও আসল ছবিগুলোতে দেখা যাচ্ছে, এ্যাম্বুলেন্সের গায়ে নামের পাশাপাশি হাসপাতালের জরুরি ফোন নম্বর ও ঠিকানা যুক্ত থাকে।

গুগলে পাওয়া ছবি (বামে), ফেসবুকে ছড়ানো ছবি (ডানে)

এসব অসামঞ্জস্যতা দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় ওবায়দুল কাদেরের এই ছবিটি বাস্তব নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করা। এছাড়া এআই দিয়ে তৈরি ছবি চিহ্নিত করার দুটি আলাদা টুল দিয়ে ছবিটি যাচাই করে দেখেছে ডিসমিসল্যাব। এআইঅরনট এবং ডিটেকট এআই ইমেজেস – এ দুটি টুলই বলছে ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

তবে ওবায়দুল কাদের কলকাতায় আছেন কি না বা চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে কি না তা আলাদাভাবে যাচাই করেনি ডিসমিসল্যাব। দৈনিক প্রথম আলোর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ওবায়দুল কাদের বর্তমানে কলকাতার অভিজাত রাজারহাট নিউটাউন এলাকার ডিএলএফ নিউটাউন হাইটস প্লাজায় আছেন।

আরো কিছু লেখা