তৌহিদুল ইসলাম রাসো
এটি জামাত-শিবির কর্তৃক বিএনপির মঞ্চ ভাঙার ভিডিও নয়
তৌহিদুল ইসলাম রাসো
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক ও এক্সে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে এক মঞ্চের সামনে একদল মানুষকে চেয়ার ছোড়াছুড়ি করতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওর বিবরণে দাবি করা হচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রয়াত নেতা অধ্যাপক গোলাম আযমকে নিয়ে কটূক্তি করায় বিএনপির মঞ্চ ভেঙ্গে দিয়েছে জামায়াত-শিবির। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে দাবিটি সঠিক নয়; এবং ভিডিওটি পুরোনো। এটি এবছরের জানুয়ারিতে ময়মনসিংহের থানারঘাট এলাকায় এক মাজারের কাওয়ালি অনুষ্ঠানে মাদ্রাসা ছাত্রের হামলার দৃশ্য।
ফেসবুকের বেশকিছু ব্যবহারকারী ২৯ সেকেন্ডের এই ভিডিও শেয়ার করছেন (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬) একই দাবিতে। পোস্টের বিবরণে বলা হচ্ছে, “গোলাম আযমকে নিয়ে কটুক্তি করাতে বিএনপির মঞ্চ ভেংগে দিয়েছে জামাত শিবির।পালিয়ে প্রাণ বাচাঁলের নেতারা।সবাই বলুন মারহাবা।” এ সংক্রান্ত পোস্ট গত ১২ মে থেকে সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করতে দেখে ডিসমিসল্যাব। একই দাবিতে ভিডিও শেয়ার করতে দেখা যায় এক্সেও।

ফেসবুকের একটি ভিডিও পোস্ট বিশ্লেষণে দেখা যায় সেটি এখন পর্যন্ত প্রায় দুই লাখবার দেখা হয়েছে। পোস্টটি শেয়ার করা হয়েছে দুই হাজারের বেশিবার। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একদল লোক একটি মঞ্চের সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন। একপর্যায়ে মঞ্চের সামনে রাখা চেয়ারগুলো ছোড়াছুড়ি শুরু করেন তারা। এছাড়া একই ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে ইন্সটাগ্রামের (১, ২, ৩) একাধিক পোস্টে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর দাবি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে শুরুতে কিফ্রেম ধরে অনলাইনে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। সার্চে সংবাদমাধ্যম দ্য ডেইলি স্টারের একটি অনলাইন প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদনে ব্যবহার করা ছবির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর ফুটেজের হুবহু মিল দেখা যায়। গত ৯ জানুয়ারিতে প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনে স্থানীয় লোকজনের বরাতে বলা হয়, ময়মনসিংহ শহরের থানারঘাট এলাকায় একটি কাওয়ালি অনুষ্ঠানে কিছু মাদ্রাসা ছাত্র হামলা চালিয়েছে এবং একটি মাজার ভাঙচুর করা হয়েছে। হজরত শাহ সুফি সৈয়দ কালু শাহ (রহ.)–এর মাজার শরীফ কর্তৃপক্ষ বার্ষিক সামা কাওয়ালি মিলাদ ও দোয়া মাহফিল উপলক্ষে কাওয়ালি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল।

ঘটনা সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হতে আলাদা করে কিওয়ার্ড সার্চ করা হলে একই ঘটনার উল্লেখ আছে– এমন একাধিক সংবাদ প্রতিবেদন (১, ২, ৩) খুঁজে পাওয়া যায়। প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৮ জানুয়ারি রাত ১১ টার দিকে ১৭৯তম বার্ষিক ওরস উপলক্ষে ব্রহ্মপুত্র নদের পারে কাওয়ালি গানের আয়োজন করেন হজরত শাহ সুফী সৈয়দ কালু শাহ (রহ)–এর মাজার কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠান শুরুর ৩০ মিনিট পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে হামলা করা হয়। মঞ্চ ও চেয়ার গুঁড়িয়ে দিয়ে এরপর রাত তিনটার দিকে মাজারেও হামলা হয়।
বিডিনিউজটুয়েন্টিফোরের একই ঘটনার এক সংবাদ প্রতিবেদনের শেষে একটি ভিডিও প্রতিবেদন যুক্ত থাকতে দেখা যায়। ৩ মিনিট ১২ সেকেন্ডের এই ভিডিও প্রতিবেদনের শুরুর ২৯ সেকেন্ডের সঙ্গে ফেসবুকে বর্তমানে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির পুরোটাই মিলে যায়।
অর্থাৎ, জানুয়ারিতে ময়মনসিংহের একটি কাওয়ালি অনুষ্ঠানে একদল মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর হামলার ভিডিও বর্তমানে ছড়াচ্ছে প্রয়াত জামায়াত নেতা গোলাম আযমকে নিয়ে কটূক্তি করায় বিএনপির মঞ্চ জামায়াত-শিবির ভেঙেছে এমন দাবিতে।