তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
ভিডিওটি উপদেষ্টা আসিফের বাড়ি থেকে চাল উদ্ধারের নয়
This article is more than 2 months old

ভিডিওটি উপদেষ্টা আসিফের বাড়ি থেকে চাল উদ্ধারের নয়

তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক ও এক্সে একটি ভিডিও ভাইরাল হতে দেখা গেছে। বেশকিছু ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাড়িতে মিলেছে বারোশো বস্তা চাল। আর ভিডিওতে থাকা ব্যক্তি উপদেষ্টার বাবা এবং তাকে এ বিষয়ে জবাব দিতে বললে তিনি পুলিশকে ঘুষ দিয়ে সেটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে, যাচাইয়ে দেখা গেছে দাবিটি ভুয়া এবং ভিডিওটি সম্পাদিত। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আলোচিত ঘটনাটি চাঁদপুরের স্থানীয় এক ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যের বাড়ি থেকে দুস্থদের জন্য বরাদ্দ করা সরকারি চাল জব্দের পর গ্রেপ্তারের। 

উপদেষ্টা আসিফের বাড়ি থেকে চাল উদ্ধারের ঘটনা দাবিতে গত ২ জুন থেকে ভিডিও শেয়ার করতে দেখা যায় ফেসবুকে। একাধিক ব্যবহারকারী (, , , , ) একই দাবিতে ভিডিও শেয়ার করতে থাকেন। পরের দিন অর্থাৎ ৩ জুনেও ঠিক একই দাবিতে ভিডিওটি শেয়ার (, , , , ) হতে দেখা যায়। এছাড়া হুবহু একই ভিডিও একই দাবিতে শেয়ার করতে দেখা যায় এক্সে (, , )। ভিডিওটি পোস্ট করে বিবরণে লেখা হয়েছে, “উপদেষ্টা আসিফের বাড়িতে মিলল ১২ শো বস্তা চাল তার বাবা কে জবাব দিতে বললে সে পুলিশদের ঘুষ দিয়ে মেনেজ করার চেষ্টা করে” (বানান অপরিবর্তিত)।

১৯ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যায় কয়েকজন পুলিশ এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছেন এবং সামনে থাকা এক নারী সেই পুরুষকে উদ্দেশ্যে করে বলছেন, “এটা গরীব মানুষকে বিলানোর জন্য এই চাল দিসে, আপনার বাড়িতে রাখার জন্য এই চাল? আপনি এটা কী করসেন।” (ভাষ্য অপরিবর্তিত)। ভুয়া দাবিতে শেয়ার করা ফেসবুকের একটি ভিডিও এখন পর্যন্ত ১৪ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে, শেয়ার করা হয়েছে ১১ হাজারের বেশিবার। পোস্টটিতে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রায় ৪ হাজার ব্যবহারকারী এবং মন্তব্য করেছেন প্রায় ৫০০ জন।

পোস্টটির মন্তব্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে ভিডিওটি সত্য ভেবে প্রসাশনের কাজের প্রসংশা করেছেন অনেকে। আবার অনেকে সেখানে ভিডিওটির সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। দাবিটি সঠিক ভেবে এক ব্যবহারকারী লেখেন, “প্রশাসনের একশন শুরু করার জন্য অভিনন্দন জানাই ।” আরেক ব্যবহারকারী লেখেন, “তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক।” আবার সংশয় প্রকাশ করে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “এইটা যে আসিফের বাবা তার প্রমাণ কি??” আরেকজন লিখেছেন, “এটা আসিফের বাবা না।”

ঘটনাটির সত্যতা যাচাইয়ে শুরুতে ভিডিওটির কীফ্রেম ধরে অনলাইনে সার্চ করে দেখে ডিসমিসল্যাব। সার্চে সংবাদমাধ্যম ডিবিসি নিউজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায় যার সঙ্গে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির মিল রয়েছে। প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “চাঁদপুরে ভিজিএফের ১৬ বস্তা চালসহ ইউপি মেম্বার আটক।” ৩ মিনিট ৫ সেকেন্ডের সেই ভিডিও প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটির ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড অংশ থেকে ২ মিনিট ৫ সেকেন্ড পর্যন্ত অংশ কেটে তা ভুয়া দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হতে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড ধরে অনলাইনে সার্চ করে দেখে ডিসমিসল্যাব। এবার বেশকিছু সংবাদ প্রতিবেদনে (, , , , ) একই ঘটনার বিবরণ জানানো হয়। ২ জুন প্রকাশিত সেই অনলাইন প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়, চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় বসতঘর থেকে দুস্থদের জন্য বরাদ্দ করা সরকারি চাল জব্দের পর এক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোববার গভীর রাত দেড়টার দিকে উপজেলার সূচীপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. হুমায়ুন কবিরের ঘর থেকে এসব চাল উদ্ধার করা হয় বলে শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিগার সুলতানা জানান।

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে আটককৃত ব্যক্তির পরিচয়ে বলা হচ্ছে তার নাম মো. হুমায়ুন কবির এবং ঘটনাটি চাঁদপুরের। আর উপদেষ্টা আসিফের বাবার নাম বিল্লাল হোসেন এবং তিনি কুমিল্লার স্থানীয় আকবপুর ইয়াকুব আলী ভুঁইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। অর্থাৎ তারা দুজন আলাদা ব্যক্তি। এছাড়া উপদেষ্টা আসিফের বাবার সঙ্গে ভিডিওতে থাকা ব্যক্তির চেহারারও কোনো মিল পাওয়া যায় না।

অর্থাৎ, উপদেষ্টা আসিফের বাড়ি থেকে বারোশো বস্তা চাল উদ্ধার এবং বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তার বাবার ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি ভুয়া। ভিন্ন ঘটনার একটি ভিডিও সম্পাদনা করে সেটি ভুয়া দাবিতে উপদেষ্টা আসিফের বাবাকে জড়িয়ে ছড়ানো হচ্ছে। 

উপদেষ্টা আসিফের বাবাকে জড়িয়ে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর ঘটনা এবারই প্রথম নয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে গ্রামবাসীর উপর অত্যাচার করছে উপদেষ্টা আসিফের বাবা এমন দাবিতে ভিডিও ছড়াতে দেখা যায় সামাজিক মাধ্যমে। সে সময়ে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায় ভিডিওটি মূলত ২০২৪ সালের ভিন্ন একটি ঘটনার।

আরো কিছু লেখা