তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভাঙা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর দাবি

বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভাঙা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর দাবি

তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভাঙা নিয়ে একটি দাবি ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। বেশ কিছু ব্যবহারকারী একই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করছেন, জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের নির্দেশে ভেঙে ফেলা হচ্ছে এই স্মৃতিসৌধ। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে দাবিটি বিভ্রান্তিকর। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ ডিসমিসল্যাবকে জানিয়েছেন স্মৃতিসৌধটি নতুন করে নির্মানের জন্য ভাঙা হচ্ছে। এর সঙ্গে অন্য কোনো বিষয়ের যোগসূত্র নেই বলে নিশ্চিত করেন তিনি।

মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে দাবিতে প্রথম যে পোস্টটি ডিসমিসল্যাবের নজরে আসে তা ফেসবুকে আপলোড করা হয় ২১ এপ্রিল দিবাগত রাত ১ টা ৩২ মিনিটে। ৩৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায় স্মৃতিসৌধের একপাশে ভাঙার কাজ চলছে। ভিডিওর শেষ দিকে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের আরও কিছু ছবি ফুটেজ যোগ করা হয়েছে। এই পোস্টের বিবরণে স্মৃতিসৌধ ভাঙার কথা বলা হলেও গড়ে তোলার কথাটা বাদ দেওয়া হয়। বিবরণে লেখা, “মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভেঙে দিয়ে কোন প্রতিশোধ নিচ্ছে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি চক্র! স্বাধীনতার শত্রু, জাতীয় গণশত্রুরা নিপাত যাক। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।”

আওয়ামী সমর্থিত বিভিন্ন আইডি (, , , , ), ও গ্রুপ থেকে একই দাবিতে এই ভিডিও আপলোড করা হয় ২১ ও ২২ এপ্রিলে। বিবরণে বলা হচ্ছে, “মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবি স্মৃতিসৌধ ইউনুস সরকারের নির্দেশে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। কারণ জুলাই এর সাথে এটা নাকি সাংঘর্ষিক বলে মনে করা হয়।” (বানান অপরিবর্তিত)

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর সত্যতা জানতে শুরুতে কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখে ডিসমিসল্যাব। এই সার্চে গত ২১ এপ্রিল বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে পোস্ট করা একটি ভিডিও সামনে আসে। এই ভিডিওতে থাকা ব্যক্তি ও ফুটেজের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজের কিছু অংশ হুবহু মিলে যায়। ৩৭ সেকেন্ডের ভিডিওটি ধারণকারী ব্যক্তি মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে অবস্থান করছেন বলে জানান। ভিডিওতে তিনি বলেন, “আমাদের চিরচেনা শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের মূল অংশের ডিজাইন ভেঙে নতুন করে গড়া হবে।” স্মৃতিসৌধটি গুড়িয়ে দিয়ে নতুন করে গড়ে তোলার পরিকল্পনার একটা কথা তিনি শুনেছেন বলেও জানান সেখানে। পোস্টের বিবরণে লেখা, “সরেজমিনে দেখাচ্ছি – বদলে যাচ্ছে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এর চেহারা।” “ফোকাস উইথ সাইফ” নামের ফেসবুক পেজ থেকে মূল ভিডিওটি শেয়ার করা হয়।

এই ভিডিওর কিছু অংশ কেটে নিয়ে অন্য আরও কিছু ফুটেজ যোগ করে সেটি বিভ্রান্তিকর দাবিতে ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। কিছু পোস্টে (, ) মূল ভিডিওর শুরুর ১৮ সেকেন্ড পর্যন্ত বাদ দিয়ে পরের ১৭ সেকেন্ডের ফুটেজ হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে। এর সঙ্গে আরও কিছু ফুটেজ যোগ করা হয়েছে। আর কিছু পোস্টে (, , , ) মূল ডিডিওর শুরুর ২৫ সেকেন্ড পর্যন্ত বাদ নিয়ে পরের ১২ সেকেন্ডের ফুটেজ নিয়ে তার সঙ্গে আলাদা ফুটেজ যোগ করা হয়েছে। মূলত যে অংশে প্রকৃত ভিডিও ধারণকারী জানাচ্ছিলেন যে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভেঙে নতুন করে গড়ার পরিকল্পনার কথা তিনি শুনেছেন; সেই অংশটিই কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভাঙা হচ্ছে কি না এবং এর প্রকৃত কারণ জানতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিসমিসল্যাব। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, “ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া পোস্টের দাবিটি মিথ্যা। এটি একেবারে ভেঙে ফেলা হচ্ছেনা বরং নতুন করে তৈরির জন্য ও স্মৃতিসৌধের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য তা ভাঙা হচ্ছে।” বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভাঙার সঙ্গে অন্য কোনো বিষয়ের যোগসূত্র নেই বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।

অর্থাৎ, ড. ইউনূস সরকারের নির্দেশে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ভাঙার দাবিটি বিভ্রান্তিকর। মূলত নতুন করে নির্মাণ ও সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য স্মৃতিসৌধটি ভাঙা হয়েছে।

আরো কিছু লেখা