তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রেস ব্রিফিংয়ের প্রশ্নে সামাজিক মাধ্যমের অপতথ্য

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রেস ব্রিফিংয়ের প্রশ্নে সামাজিক মাধ্যমের অপতথ্য

তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

গত ১৯ মার্চ, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে গিয়ে পুরোনো একটি ছবি সাম্প্রতিক দাবি করে বক্তব্য দিয়েছেন বাংলাদেশী এক সাংবাদিক। একই দাবিতে ছবিটি এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচারিত হয়েছে।

বাংলাদেশে ইসলামী চরমপন্থার ক্রমবর্ধমান হুমকি এবং ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলছে– এমন বক্তব্য দিতে গিয়ে একটি ছবি উপস্থাপন করেন সাংবাদিক দস্তগীর জাহাঙ্গীর। ছবিটি দেখিয়ে তিনি দাবি করেন সেটি ১৮ মার্চ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ইসলামী খিলাফতপন্থী মিছিলের দৃশ্য। তবে যাচাইয়ে দেখা যায়, ছবিতে দেখানো দৃশ্যটি একটি পুরোনো ভিডিওর অংশ, যে মিছিলটি হয়েছিল ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট। ৫ আগস্ট, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে কোনো সরকার না থাকা অবস্থায় এই মিছিলটি হয়েছিল।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রেস ব্রিফিংটি প্রকাশ করা হয় ২০ মার্চ। সেই ভিডিওটির ৫০ মিনিট ২০ সেকেন্ড থেকে কথা বলা শুরু করেন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্যভয়েসডটনিউজের সম্পাদক দস্তগীর জাহাঙ্গীর। প্রেস এক্সপ্রেস নামের আরেকটি সংবাদমাধ্যমের ফেসবুক পেজে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি এই প্রতিষ্ঠানেরও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো প্রধান হিসেবে কাজ করছেন।

সাংবাদিক দস্তগীর জাহাঙ্গীর দাবি করেন ছবিটি ১৮ মার্চ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত ইসলামী খিলাফতপন্থী মিছিলের দৃশ্য। তবে যাচাইয়ে দেখা যায়, ছবিতে দেখানো দৃশ্যটি একটি পুরোনো ভিডিওর অংশ, যে মিছিলটি হয়েছিল ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুসের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, “মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান মিসেস তুলসি গ্যাবার্ড বাংলাদেশ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন কারণ দেশটি ইসলামী চরমপন্থার ক্রমবর্ধমান হুমকি হয়ে উঠছে এবং ইসলামী খিলাফত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। তবে তিনি সরাসরি মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অভিযুক্ত করেননি, কিন্তু ড. ইউনূস এই উদ্বেগগুলোকে অস্বীকার করেছেন, অসত্য বলে অভিহিত করেছেন। এরই মধ্যে, গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিশাল খিলাফত-পন্থী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।”

এই কথা বলার সময় তিনি একটি ছবি উঁচিয়ে তুলে ধরেন। ছবিতে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনে আরবি লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে মিছিল হচ্ছে। প্রেস ব্রিফিংয়ে ছবি দেখানোর সময়ের স্ক্রিনশট নিয়ে সেটি তিনি নিজের ফেসবুক আইডিতে শেয়ার করে লেখেন, “মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে আমার হাতে দেশের বর্তমান ছবি।” এছাড়া সেটি ভিডিওসহ অনলাইন প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা হয় দ্যভয়েসডটনিউজের ওয়েবসাইটে

২০ মার্চ প্রেস ব্রিফিংয়ে ছবি দেখানোর সময়ের স্ক্রিনশট নিয়ে সেটি নিজের ফেসবুক আইডিতে শেয়ার করেদস্তগীর জাহাঙ্গীর লেখেন, “মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে আমার হাতে দেশের বর্তমান ছবি।”

ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায়, সেটি নেওয়া হয়েছে একটি ভিডিও থেকে, যেটি গত ১৮ মার্চ থেকে ফেসবুক (, ) ও এক্সে (, ) শেয়ার করে বলা হচ্ছে এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ের ভিডিও। ভিডিওটিতে দেখা যায়, হিজবুত তাহরীরের ব্যানারসহ একটি মিছিল ঢাবির কার্জন হল এলাকা থেকে বের হচ্ছে এবং বিভিন্ন স্লোগান দেয়া হচ্ছে। ভিডিওটি একই দাবিতে এক্সে শেয়ার করছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এ. আরাফাত। এটি এখন পর্যন্ত দেখা হয়েছে ৯ হাজারেরও বেশিবার।

ভুয়া দাবিতে ছড়িয়ে পড়া পোস্ট।

ভিডিওটির মূল উৎস খুঁজতে কিফ্রেম ধরে অনলাইনে সার্চ করা হলে একটি ফেসবুক প্রোফাইল ও একটি পেজে শেয়ার করা ভিডিও পাওয়া যায়। সাম্প্রতিক বলে ছড়িয়ে পড়া পোস্ট এবং পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রেস ব্রিফিংয়ে দেখানো ছবির সঙ্গে এই ভিডিওর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। বিস্তারিত বিশ্লেষণে দেখা যায় এই দুটি ভিডিও একই দিন অর্থাৎ ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট শেয়ার করা হয়েছিল। বিবরণীতে বলা হয়েছে, “কার্জন হল থেকে হিজবুত তাহেরির মিছিল। এই মুহুর্তে দরকার, খেলাফত সরকার।”

মিছিলটি ছিল গত বছরে (২০২৪) আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরের দিন, ৬ আগস্টের।

অর্থাৎ, দস্তগীরের দেখানো ছবিটি ১৮ মার্চ বা সাম্প্রতিক সময়ের নয়, যেমনটি একাধিক সামাজিক মাধ্যমের পোস্টেও দাবি করা হয়েছে। বরং মিছিলটি ছিল গত বছরে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরের দিন, ৬ আগস্টের। ৮ আগস্ট সন্ধ্যায় ড. ইউনূসের সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার আগের তিন দিন বাংলাদেশ মূলত সরকারবিহীন ছিল এবং সেই সময়ের ভিডিওটিকে ভুয়া দাবিতে বর্তমানের বলে ছড়ানো হচ্ছে।

আরো কিছু লেখা