আবরার ইফাজ

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
মানজুর আল মতিনের সঙ্গে আসমা খাতুন, গোলাম আযম ও নিজামীর পরিবারের আত্মীয়তার দাবিটি মিথ্যা
This article is more than 1 month old

মানজুর আল মতিনের সঙ্গে আসমা খাতুন, গোলাম আযম ও নিজামীর পরিবারের আত্মীয়তার দাবিটি মিথ্যা

আবরার ইফাজ

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

আইনজীবী মানজুর আল মতিনের সঙ্গে সম্প্রতি নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের বিভিন্ন নেতা ও নেত্রীর পারিবারিক সম্পর্ক নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে শুক্রবার সকাল থেকে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ সহ সরকারী দলের বিভিন্ন সমর্থক ও নেতাদের প্রোফাইল থেকে ছড়ানো একাধিক পোস্টে (, , , ) দাবি করা হয়, জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য হাফেজা আসমা খাতুন হলেন মানজুরের নানী এবং এই আইনজীবীর মামা ও খালুর সঙ্গে জামায়াত নেতা ও যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী ও গোলাম আযমের পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। ডিসমিসল্যাব যাচাই করে দেখতে পেয়েছে, তিনটি দাবিই মিথ্যা এবং পোস্টগুলোতে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তাদের সঙ্গে মানজুরের আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই।

গত ৩০ জুলাই, কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কারীর মুক্তি ও শিক্ষার্থীদের দিকে গুলি ছোড়া বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আয়নুন্নাহার সিদ্দিকা ও মানজুর আল মতিন হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। সেদিন, মানজুরের বক্তব্য দেশজুড়ে বেশ আলোচিত হয়। মূলত এরপর থেকেই এই আইনজীবীর বিরুদ্ধে কখনো ছাত্র শিবিরের সঙ্গে কথিত অতীত সম্পৃক্ততা এবং তার পরিবারের সঙ্গে জামায়াত নেতাদের আত্মীয়তার দাবিগুলো ছড়ানো শুরু হয়।

আসমা খাতুন, মানজুরের নানী নন

শুক্রবার সকাল থেকে ছড়ানো পোস্টগুলোতে মূলত তিনটি দাবি করা হয়েছে:

  • ৫ম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসন ২৩– এ জামায়াতের সংসদ সদস্য হাফেজা আসমা খাতুন মানজুর আল মতিনের নানী।
  • মানজুরের আপন মামার নাম সাইফুল্লাহ মানসুর, যিনি মতিউর রহমান নিজামীর জামাতা এবং এই অর্থে মানজুরের সঙ্গে মতিউর রহমান নিজামীর আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে।
  • গোলাম আযমের ছেলে মামুন আল আযমী হলেন মানজুরের খালু, অর্থ্যাৎ. তিনি মানজুরের খালার স্বামী।

প্রথম দাবিটি যাচাইয়ের জন্য ডিসমিসল্যাব মানজুর আল মতিন এবং তার মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি সংগ্রহ করে। তাতে দেখা যায়, এই আইনজীবীর নানীর নাম আসমা খাতুন নয়। মানজুরের মায়ের পরিচয়পত্রে নানীর নাম, মাহবুবুন্নেসা (প্রাইভেসি বা ব্যক্তি গোপনীয়তা বজায় রাখার অনুরোধের কারণে পুরো নাম লেখা হল না)। দাবিটি যে ভুয়া, তা মানজুর আল মতিন নিজেও নিশ্চিত করেন।

আসমা খাতুনের একজন কন্যার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনিও নিশ্চিত করেন যে তথ্যগুলো সত্য নয় এবং তাদের পরিবারে মানজুর নামের একজন সদস্য থাকলেও সেটি মানজুর আল মতিন নন।

মানজুরের সঙ্গে নিজামী বা গোলাম আযমের পরিবারের আত্মীয়তা নেই

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও সরকার দলীয় বিভিন্ন নেতাকর্মীর পোস্টে দাবি করা হয়, মানজুরের আপন মামা হলেন সাইফুল্লাহ মানসুর। কিন্তু মানজুর আল মতিনের বক্তব্য এবং একটি আলাদা সূত্রে স্বাধীনভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এই আইনজীবীর ছোট মামার নাম “মনসুরুল খান”. কখনোই “সাইফুল্লাহ মানসুর” নয়। 

সাইফুল্লাহ মানসুর হলেন সাবেক জামায়াত সাংসদ আসমা খাতুনের ছেলে এবং মতিউর রহমান নিজামীর জামাতা। যোগাযোগ করা হলে, তিনি ডিসমিসল্যাবকে বলেন মানজুরের সঙ্গে তার পরিবারের আত্মীয়তার দাবি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং তিনি মানজুর আল মতিনের মামা নন।

মানজুরের প্রকৃত মামার এক বন্ধু, যিনি ছোটবেলা থেকে পরিবারটিকে চেনেন, তিনি এক ফেসবুক পোস্টে শুক্রবার ছড়ানো দাবিগুলো সম্পর্কে লিখেছেন, পোস্টগুলোতে “বৈবাহিক সম্পর্কগুলি সম্পর্কে যা বলা আছে তা ঠাকুরমার ঝুলিকে হার মানাচ্ছে।”

যাচাই করতে গিয়ে সাইফুল্লাহ মানসুর অফিশিয়াল নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে, আসমা খাতুনের দেয়া একটি ভিডিও সাক্ষাৎকার মেলে। ভিডিওটিতে আসমা খাতুনকে বলতে শোনা যায় যে তার বড় মেয়ে মুন্নি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন এবং তিনি মামুন আল আযমীর স্ত্রী ছিলেন। মামুন আল আযমী হলেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর গোলাম আযমের ছেলে। 

সাক্ষাৎকার থেকে এও জানা যায় যে আসমা খাতুনের তিন মেয়ে ও দুই ছেলে, অর্থাৎ পাঁচ সন্তান। আর মানজুর আল মতিন জানান, তাঁর নানার পরিবারে সন্তান সংখ্যা ১১ জন এবং মুন্নি নামে তার কোনো খালা নেই। 

যাচাইয়ে দেখা যায়, ছাত্রলীগের পেজ ও বিভিন্ন প্রোফাইলে করা দাবিগুলোতে যে পারিবারিক সম্পর্কের তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা জামায়াতের সাবেক সাংসদ আসমা খাতুনের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলে যায়, কিন্তু মানজুর আল মতিনের নানার পরিবারের সঙ্গে মিলে না। 

পুরো দাবিটি প্রতিষ্ঠিত মানজুরের ছোট মামা মনসুরুলের সঙ্গে আসমা খাতুনের ছেলে সাইফু্ল্লাহ মানসুরের নামের আংশিক মিলের ওপর। এই মিলের ওপর ভর করে দাবি করা হয় যে আসমা খাতুন হলেন মানজুরের নানী, যা মানজুরের বক্তব্য, জাতীয় পরিচয়পত্র, আসমা খাতুনের পরিবারের দুই সদস্য এবং আরো একটি স্বাধীন সূত্রের বক্তব্য অনুযায়ী পুরোপুরি মিথ্যা।

আরো কিছু লেখা