নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫
১৪:৪৬:৪৪
জাকসু নির্বাচনে সংঘর্ষের দাবিতে ছড়াচ্ছে ঢাবির পুরোনো ভিডিও

জাকসু নির্বাচনে সংঘর্ষের দাবিতে ছড়াচ্ছে ঢাবির পুরোনো ভিডিও

সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৫
১৪:৪৬:৪৪

নোশিন তাবাসসুম

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ভোট বর্জন করে সংঘর্ষে জড়িয়েছে শিবির এবং ছাত্রদল – এমন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে, ভিডিওটি পুরোনো এবং জাকসু নির্বাচনের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। মূলত এটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন ছাত্র সংগঠন ঘোষণার পূর্বে পদ-পদবি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনার দৃশ্য।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ৫২ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে বেশ কিছু ব্যক্তিকে হাতাহাতি করতে এবং বিক্ষুব্ধ অবস্থায় দেখা যায়। ভিড়ের মধ্যে অধিকাংশই সাদা ও কালো পোশাকে ছিলেন। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা, “এই মুহূর্তে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোট বর্জন করে সংঘর্ষে জরিয়েছে শিবির এবং ছাত্রদল। দু-পক্ষের বহু হতাহত হয়েছে। গৃহযুদ্ধের পথে সোনার বাংলাদেশ,,,” (বানান অপরিবর্তিত)। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত এক লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে ভিডিওটি। শেয়ার হয়েছে ২৪ বার।

জাকসু নির্বাচন - ফ্যাক্টচেক
ভুয়া দাবিতে ছড়ানো ভিডিওসহ ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট

ফেসবুকের একাধিক ফেসবুক প্রোফাইল থেকে (, , , , , , , , ) ১১ সেপ্টেম্বর রাত থেকে একই দাবিতে ভিডিওটি শেয়ার করতে দেখা যায়।  

ভিডিওটির সূত্র যাচাইয়ে কিছু কিফ্রেম বিশ্লেষণ করলে ভিডিওটির প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। মধুর ক্যান্টিনের সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চ করলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে হওয়া একটি বিক্ষোভের ভিডিও ডিসমিসল্যাবের সামনে আসে। হুবহু একই দৃশ্য সম্বলিত ও একই দৈর্ঘ্যের একটি ভিডিও ২০২৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকের একটি ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে পোস্ট করা হয়েছিল। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আ’ন্দো’ল’নের নতুন দলের আ’ত্ম’প্র’কাশকে কে’ন্দ্র করে দুই পক্ষের হা’তাহা’তি,,,,”। 

এছাড়াও রিসেন্ট রিভিউস (Recent Reviews) নামের একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে গত ২৬ ফেব্রুয়ারিতে পোস্ট হওয়া ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিওর সঙ্গে সম্প্রতি ছড়ানো ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা, “শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক সংগঠনের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি চলছে।” একই তারিখে একাধিক ফেসবুক প্রোফাইল (, , , , , , ) থেকেও ভিডিওটি একই দাবিতে পোস্ট করা হয়। এছাড়া ফেসবুকের গ্রুপ এবং পেজ থেকেও একই দাবিতে ভিডিওটি প্রচার করা হয়। এছাড়া ইন্সটাগ্রামেও একটি প্রোফাইল থেকে একই ভিডিও পোস্ট করা হয়।

ঢাবির ভিডিও জাবির বলে প্রচার
ভিডিওসহ পুরোনো পোস্টের স্ক্রিনশট

এই ঘটনায় সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় একাধিক গণমাধ্যমে (, , , , , , )। চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “ছাত্রদের নতুন সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’”। প্রতিবেদনে বলা হয়, “আত্মপ্রকাশ করলো ছাত্রদের নতুন সংগঠন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের উদ্যোগে গঠিত এ ছাত্র সংগঠনের নাম দেয়া হয়েছে ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ’। এর কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক করা হয়েছে আবু বাকের মজুমদারকে। আর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন জাহিদ আহসান। এর স্লোগান ঠিক করা হয়েছে ‘শিক্ষা-ঐক্য-মুক্তি’।” সংঘর্ষের বিষয়ে উল্লেখ করে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্টরা জানান, সংগঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা উপলক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়করা বিকালে মধুর ক্যান্টিনে এসে জড়ো হন। অন্যদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিজেদের পর্যাপ্তসংখ্যক পদ দাবি করে বিক্ষোভ করেন। মধুর ক্যান্টিনের সামনে দুই পক্ষের অবস্থানের মধ্যে বিকাল ৪টার পর হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন ‘ঢাবির কালো হাত, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’।”

জাকসু
মূল ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রতিবেদন

অর্থাৎ, সম্প্রতি ছড়ানো এই ভিডিওর সঙ্গে ১১ সেপ্টেম্বর হয়ে যাওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। 

এদিকে গত ১১ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে ভোটগ্রহণে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় ছাত্রদল। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদের নির্বাচনে গতকাল বৃহস্পতিবার শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলেও ছিল অব্যবস্থাপনার অভিযোগ। কোনো কোনো হলে সন্ধ্যার পরও ভোট নিতে হয়েছে। ভোট বর্জন করেছে অংশগ্রহণকারী ৫টি প্যানেল।

আরো কিছু লেখা