আহমেদ ইয়াসীর আবরার
যুব মহিলা লীগ নেত্রীর আত্মহননের সংবাদ বিভ্রান্তিকর ক্যাপশনে প্রচার
আহমেদ ইয়াসীর আবরার
যুব মহিলা লীগের নেত্রীর লাশ উদ্ধার হয়েছে এমন একটি সংবাদের ফটোকার্ড প্রচারিত হতে দেখা যাচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। পোস্টের ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে যে আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া সূত্রহীনভাবে ১২ হাজারেরও বেশি আওয়ামী নেতাকর্মীকে হত্যার কথাও উল্লেখ করা হয় পোস্টটিতে। তবে যাচাইয়ে এই ঘটনার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি ডিসমিসল্যাব। বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা ফটোকার্ডটিতে এক নারীর ছবির নিচে লেখা আছে “যুব মহিলা লীগ নেত্রী লাকীর লাশ উদ্ধার”। ফটোকার্ডটি শেয়ার করে লেখা হয়েছে, “৫ আগষ্টের পর আওয়ামীলীগ এর লাকী সহ মোট ১২০৩৪ জন নেতাকর্মীকে নিমর্মভাবে হত্যা করা হয়েছে —আচ্ছা কত জন মানুষ হত্যা করলে গণহত্যা হয়?? স্বাধীনতা বিরোধীরা এই দেশে ২৫ মার্চ যেভাবে গনহত্যা চালিয়েছে ঠিক একই রুপে মাত্র ২ মাসে ওরা স্বাধীনতা স্বপক্ষের নেতাকর্মীদের গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে।।। বাংলাদেশ তোমাদের ক্ষমা করবে তো??” (১, ২, ৩, ৪)। এর মধ্যে কিছু পোস্টে #StepDownYunus, #StepDownYunus, #stepdowndryunus এ ধরনের হ্যাশট্যাগও ব্যবহার করা হয়েছে।
ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, গত ৩১ অক্টোবর গাজীপুরের টঙ্গীতে যুব মহিলা লীগ নেত্রী তানজিলা খানম লাকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে একাধিক গণমাধ্যমে (১, ২, ৩, ৪)। কোনো রাজনৈতিক কারণে নয়, বরং পারিবারিক কলহের জের ধরে তিনি তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনগুলোতে। যুগান্তরের প্রতিবেদনে লাকীর বোনের ভাষ্য যুক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, “সুমন আর লাকী প্রেম করে বিয়ে করেছেন। বর্তমানে তাদের সংসারে তিন সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই সাংসারিক খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে ঝগড়া বিবাদ করে সুমন আমার বোনকে মারধর করত। …বুধবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত তাদের দুইজনের মধ্যে আবারও ঝগড়া শুরু হয়। পরে আমি ঘুমিয়ে যাই। সকালে আমি ঘুম থেকে উঠে তাদের রুমের ভিতরে গিয়ে দেখি আমার বোন গলায় ফাঁস দিয়ে ঘরের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে আর সুমন ফ্লোরে ঘুমাচ্ছে। আমার ডাক-চিৎকার শুনে সে ঘুম থেকে উঠে। পরে আমি ও দুলাভাই বোনকে খাটের উপর নামাই। এরপর সুমন বাসা থেকে চলে যায়। পরে আর তার সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।”
টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি ইসকান্দার হাবিবুর রহমান এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বলেন, “স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্বে আত্মহত্যা করা এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।”
মূল ঘটনাটি আত্মহত্যা নাকি খুনের এই বিষয়ে ডিসমিসল্যাব নিশ্চিত না হতে পারলেও, এই ঘটনার সঙ্গে কোন রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। নিহত তানজিলা খানম লাকী টঙ্গী পূর্ব থানা যুব মহিলা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
ক্যাপশনে আরো উল্লেখ হয় ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরবর্তীতে ১২০৩৪ আওয়ামী নেতাকর্মীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তবে গণমাধ্যমে এই দাবির সমর্থনে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সার্চ করেও এই দাবির সমর্থনে কোন তথ্য খুঁজে পায়নি ডিসমিসল্যাব।