তাসনিম তাবাস্সুম মুনমুন

ফেলো, ডিসমিসল্যাব
ইন্দোনেশিয়ার আন্দোলনের ভিডিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে প্রচার

ইন্দোনেশিয়ার আন্দোলনের ভিডিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে প্রচার

তাসনিম তাবাস্সুম মুনমুন

ফেলো, ডিসমিসল্যাব

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি এবং দেশ এখন গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দাবি করে একটি ভিডিও শেয়ার হতে দেখা যাচ্ছে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। তবে ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা গেছে, মূল ভিডিওটি ইন্দোনেশিয়ায় চলমান আন্দোলনের একটি দৃশ্য; এর সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই। 

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ দৌড়াচ্ছেন, কারো হাতে রয়েছে পতাকা। তাদের পেছনে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ও ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি বিভিন্ন ফেসবুক পেজ (, , , ) থেকে শেয়ার করে বিবরণীতে লিখা হয়েছে, “এই মুহূর্তে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়! গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে দেশ” (বানান অপরিবর্তিত)।

২৪ সেকেন্ডের ভিডিওটির চতুর্থ সেকেন্ডেই একটি পতাকা নিয়ে দৌড়াতে দেখা যায় একজন আন্দোলনকারীকে। নবম সেকেন্ডেও একই রকম রং ও প্যাটার্নের চারটি পতাকার সারি দেখা যায়। যাচাইয়ে দেখা যায়, লাল ও সাদা বর্ণের এই পতাকাগুলো ইন্দোনেশিয়ার।

ঘটনাটি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য ভিডিওটির কি-ফ্রেম ধরে সার্চ করলে সামাজিক মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে হুবহু একই ভিডিও পাওয়া যায়। এর বিবরণীতে লেখা, “ব্রিমোব সদর দপ্তরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত এবং ক্রমশ উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে।” গুগল স্ট্রিট ভিউ-এ ব্রিমোব সদর দপ্তর বা ব্রিগেড কর্প্স হেডকোয়াটার্স এর চারদিকের পরিবেশের সাথে ভিডিওতে দৃশ্যমান এলাকার মিল পাওয়া যায়।

গুগল ম্যাপের স্ট্রিট ভিউতে দেখা যায়, ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ঝোলানো তারসহ যে কাঠামোর এক প্রান্ত দেখা যায় তা ব্রিমোব সদর দপ্তরের নিকটবর্তী একটি বাসস্ট্যান্ডের অংশ। ভিডিওতে যে নো-পার্কিং সাইন আছে তাও গুগল ম্যাপে এই বাসস্ট্যান্ডের সামনেই দেখে যাচ্ছে। ভিডিওতে নো-পার্কিং সাইনের বিপরীতে রাস্তার অপর পাশে যে গাছ দেখা যাচ্ছে সেটিও দেখা যায় গুগল ম্যাপে। এছাড়া, রাস্তার অপর পাশে যে টাওয়ার দেখা যায়, একই টাওয়ার ব্রিমোব সদর দপ্তরের এর কাছের বাসস্ট্যান্ডের বিপরীত পাশেও দেখা যাচ্ছে।

ভিডিওটির কি-ফ্রেম ও কি-ওয়ার্ড ধরে অনলাইনে সার্চ করলে ইন্দোনেশিয়ায় চলমান আন্দোলন নিয়ে ইন্দোনেশিয়াভিত্তিক গণমাধ্যম এমএনসি ট্রাইজায়া ও ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির প্রকাশিত প্রতিবেদনেও কাছাকাছি জায়গার ভিডিও পাওয়া যায়। এমএনসি ট্রাইজায়া-এর দাবি, ভিডিওটি ব্রিমোব সদর দপ্তরের সামনে ২৯ আগস্ট রাতের পরিস্থিতির।

প্রসঙ্গত, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে ইন্দোনেশিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সরকারবিরোধী বিক্ষোভ সহিংস রূপ নিয়েছে। বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়ায় পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় এক ডেলিভারি রাইডারের মৃত্যুর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর জাকার্তায় পুলিশের সদর দপ্তর ও ভবনে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরবর্তীতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে মাকাসার, সোলো, যোগ জাকার্তা, মেদানসহ বিভিন্ন শহরে। 

অর্থাৎ, বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বলে দাবি করা ভিডিওটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এটি ইন্দোনেশিয়ায় চলমান আন্দোলনের ঘটনা। 

আরো কিছু লেখা