আহমেদ ইয়াসীর আবরার
ভারতের নারী নির্যাতনের ভিডিও বাংলাদেশের বলে প্রচার
আহমেদ ইয়াসীর আবরার
গাছের সঙ্গে হাত বেঁধে একজন নারীকে পেটানো হচ্ছে – এমন একটি ভিডিও সম্প্রতি প্রচারিত হতে দেখা গেছে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে। পোস্টগুলোর বিবরণীতে ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে, এটি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ের ভিডিও। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়, বরং পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের। একই ভিডিও এর আগে ভারতে ছড়িয়েছিল মুসলিম নারীকে নির্যাতন করা হচ্ছে – এমন দাবিতে। যদিও ভিডিওটির সঙ্গে মুসলিম নির্যাতনেরও কোনো সম্পর্ক নেই।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একজন নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে পেটাচ্ছে একজন ব্যক্তি এবং অসংখ্য মানুষ ঘটনাটি দেখছে। ভিডিওটি ফেসবুকে (১, ২, ৩) পোস্ট করে বিবরণীতে লেখা হয়েছে, “এই সংস্কার গুলো যেন মনে থাকে।” এখানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পরবর্তীতে নেয়া বিভিন্ন সংস্কার কর্মসূচী এবং কমিশন গঠনের বিষয়ে ইঙ্গিত করা হচ্ছে। মিজান উদ্দিন নামের একটি প্রোফাইল থেকে পোস্ট করা ভিডিওটি ৫ হাজারেরও বেশিবার শেয়ার হয়েছে। ভিডিওটি শেয়ার করে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, “এই বর্বরতার শেষ কোথায়? এটাই আমার দেশ ! এই দেশ তো আমি আমরা চাইনি। একটা স্বাধীন দেশে কেনো এই বর্বরতা!”

ভিডিওটির সূত্র যাচাই করতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ডিসমিসল্যাবের সামনে আসে ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য হিন্দুর একটি প্রতিবেদন। ২০১৮ সালের ২৩ মার্চ প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, “পালিয়ে যাওয়ার কারণে ইউপির (উত্তর প্রদেশ) এক নারীকে জনসমক্ষে বেত্রাঘাত”। প্রতিবেদনে ঘটনার একটি স্থিরচিত্র যুক্ত করা হয় যা ভিডিওটির সঙ্গে মিলে যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, “উত্তর প্রদেশের বুলন্দশহরের একটি গ্রাম পঞ্চায়েত এক বিবাহিত নারীকে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাতের নির্দেশ দিয়েছে, কারণ তিনি অন্য পুরুষের সঙ্গে পালিয়েছিলেন। তার স্বামী তাকে জোর করে অন্য গ্রাম থেকে ফিরিয়ে আনার পর তাকে নির্যাতন করা হয়।” একই দিনে এই ঘটনা নিয়ে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি, যার শিরোনাম ছিল, “নারীকে মারধর, পুরুষরা দেখছে: আমরা কি জাতি হিসেবে নীরব দর্শক?” এই প্রতিবেদনেও দৃশ্যটি দেখতে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, ভিডিওটি ভারতের এবং প্রায় সাত বছরের পুরোনো একটি ঘটনার।

একই ভিডিও ২০১৯ সালে ভারতে মুসলিম নির্যাতনের ভিডিও বলে প্রচারিত হয়। এই দাবির প্রেক্ষিতে এএফপি ফ্যাক্টচেক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ২০১৯ সালের ৯ জুলাই। বুলেন্দশহরের ডেপুটি সুপারইনটেনডেন্ট অব পুলিশ (ডিএসপি) ধন প্রকাশ তিয়াগি এএফপিকে জানান যে নির্যাতনের শিকার নারী মুসলিম নন। নিরাপত্তার খাতিরে তার পরিচয় প্রকাশ করা না করলেও তিনি নিশ্চিত করেন যে নির্যাতিত নারী হিন্দু ধর্মের অনুসারী এবং লোদী রাজপুত সম্প্রদায়ের। অর্থাৎ, এটি মুসলিম নির্যাতনের সঙ্গেও সম্পর্কিত নয়।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পরবর্তী সময়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন অনুষঙ্গের সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এই সংস্কার উদ্যোগের অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন, সংবিধান, পুলিশ, জনপ্রশাসন, গণমাধ্যম, স্বাস্থ্যখাত, শ্রম, নারী বিষয়ক এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন গঠন করেছে (১, ২)। তবে, সংস্কার বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় রয়টার্সকে বলেন, “এর আগেও আমরা সংস্কারের নাটক দেখেছি, যেখানে অনির্বাচিত ও অসাংবিধানিক কোনো সরকার সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু পরিস্থিতি কেবল আরও খারাপই হয়েছে।”