নোশিন তাবাসসুম
ইমামকে ছুরিকাঘাত করার ঘটনাটি বাংলাদেশের নয়
নোশিন তাবাসসুম
বাংলাদেশে একজন ইমামকে নামাজরত অবস্থায় ছুরিকাঘাত করা হয়েছে – এমন দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে, ভিডিওটি ইন্দোনেশিয়ার সেন্ট্রাল সুলাওয়েসি প্রদেশের উত্তর মোরোওয়ালি অঞ্চলের টম্পিরা গ্রামের বাইতুর রহমান মসজিদে হওয়া একটি ঘটনার দৃশ্য। সেখানে গত ২৫ আগস্ট স্থানীয় এক যুবক ইমামকে ছুরিকাঘাত করা হয়।
সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি মূলত একটি সিসিটিভি ফুটেজ যেখানে দেখা যায়, সাদা পাঞ্জাবি, টুপি পরিহিত একজন ব্যক্তিকে নামাজের ইমামতি করতে দেখা যায়। ঠিক সেই সময় খয়েরি পাঞ্জাবি, কালো টুপি পরিহিত এক যুবক হাতে ছুরি নিয়ে এগিয়ে এসে রুকুরত অবস্থায় ইমামকে পাশ থেকে আঘাত করে। আঘাত করার পরেই যুবকটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ইমামের পিছনে থাকা একজন ব্যক্তি যুবকটিকে ধরে ফেলেন। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা, “ইমামতি করা অবস্থায়,ইমামকে ছুরিকাঘাত!মুসল্লি অধিকাংশ লুঙ্গি পড়া,ঘটনা বাংলাদেশের।জঙ্গি ইউনূস দেশটাকে পাকিস্তানি বানিয়েছে” (বানান অপরিবর্তিত)। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ৩২ হাজারবার দেখা হয়েছে ভিডিওটি। শেয়ার হয়েছে ১০০ বার।

ফেসবুকের একাধিক ফেসবুক প্রোফাইল (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮) এবং পেজ থেকে একই দাবিতে ভিডিওটি শেয়ার হতে দেখা যায়। এছাড়া এক্সেও একটি প্রোফাইল থেকে একই দাবিতে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। কোনো কোনো পোস্টে দাবি করা হয়, ঘটনাটি বাংলাদেশের মাগুরার।

ভিডিওটির কিফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ডিসমিসল্যাব একটি ভিডিও খুঁজে পায়। ২০২৫ সালের ৩১ আগস্ট ইউটিউবে আপলোড হওয়া ভিডিওটির সাথে বাংলাদেশের বলে ছড়ানো ভিডিওটির হুবহু মিল লক্ষ্য করা যায়। ভিডিওর ক্যাপশনে লেখা ছিলো, “ইন্দোনেশিয়ায় এক ইমাম মসজিদের ভেতর নামাজ পড়ানোর সময় ছুরিকাঘাতের শিকার হয়েছেন।”
ইন্দোনেশিয়ার সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চ করলে চলতি বছরের আগস্ট মাসের ইন্দোনেশিয়ার একটি ঘটনা ডিসমিসল্যাবের সামনে আসে। ডেটিকনিউজ (Detiknews) নামে ইন্দোনেশিয়া ভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের ২০২৫ সালের ২৬ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে, “এ.এল. (২৩) নামের এক ব্যক্তি সেন্ট্রাল সুলাওয়েসি প্রদেশের উত্তর মোরোয়ালি অঞ্চলের এর বাইতুর রহমান মসজিদে ফজরের নামাজ চলাকালীন সময়ে কোরআন শিক্ষক মুহাম্মদ জুমালি (২৭) কে ছুরিকাঘাত করেছে। নামাজের রুকুর সময় ওই হামলাকারী ইমামকে পেটে আঘাত করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, “২৬ আগস্ট ২০২৫, মঙ্গলবার, ঘটনাটি মসজিদের সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে।”

ঘটনাটি নিয়ে উত্তর মোরোয়ালি পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের প্রধান, ফার্স্ট ইন্সপেক্টর থিওডোরাস রেসুপালের বিবৃতি তুলে ধরে একই দিনে সংবাদ প্রকাশ করে ইন্দোনেশিয়া ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম যাযাকফাকতা (jajakfakta)। এই প্রতিবেদনেও যে ছবিটি যুক্ত করা হয়েছে, তার সঙ্গে সম্প্রতি বাংলাদেশের ঘটনা দাবিতে ছড়ানো ভিডিওর হুবহু মিল পাওয়া যায়। যাযাকফাকতার এই প্রতিবেদনে বলা হয়, “অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে ও প্রমাণস্বরূপ একটি ছুরি এবং একটি মোবাইল ফোন উত্তর মোরোয়ালি থানায় জব্দ করা হয়েছে। আহত ইমামকে কলোনোদালে আঞ্চলিক সাধারণ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।” এই ঘটনায় সমসাময়িক সময়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় একাধিক ইন্দোনেশিয়ান সংবাদমাধ্যমে ( ১, ২)।
অর্থাৎ, ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়, এটি ইন্দোনেশিয়ায় চলতি বছরের আগস্ট মাসের একটি ঘটনার।