সুদেষ্ণা মহাজন অর্পা
আইসিসির শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র দেখতে চাওয়ার দাবিটি ভিত্তিহীন
সুদেষ্ণা মহাজন অর্পা
সামাজিক মাধ্যমে সম্প্রতি একটি ভিডিও ছড়ানো হচ্ছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র দেখতে চেয়েছে। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে, দাবিটি ভুয়া। ভিডিওটি আসলে ৫ বছর আগে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে তদন্ত শুরুর অনুমোদন সংক্রান্ত আইসিসির একটি বিবৃতির অংশ, যা অসত্যভাবে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রচার করা হচ্ছে।
গত ১১ আগস্ট এসটিএমআর টিভি নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি ভিডিওটি শেয়ার করা হয়। পোস্টের বিবরণে লেখা, “আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত International Criminal Court (ICC) থেকে আগামী ১৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র দেখতে চেয়েছে, অন্যথায় শেখ হাসিনাকে জোরপূর্বক ক্ষমতাচ্যুত করার দায়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে গ্রেফতারের আদেশ আসবে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর উপর। আজ নেদারল্যান্ডস থেকে International Criminal Court (ICC) এর এক ভিডিও বার্তায় এমন নির্দেশ এসেছে।” (লেখা অপরিবর্তিত)
ইউনুসের সময় শেষের দিকে বলে উল্লেখ করা ভিডিওটি এখন পর্যন্ত আটশোর বেশিবার শেয়ার করা হয়েছে। একই দাবির ভিডিওটি আরো কয়েকটি ফেসবুক পেজে (১, ২) প্রকাশিত হয়েছে। সবগুলো ভিডিওতে আইসিসির লোগো দেখা যাচ্ছে।

ঘটনাটির সত্যতা যাচাইয়ে ভিডিওটির কিফ্রেম ধরে সার্চ করলে, ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর আইসিসির ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হুবহু একই ফুটেজের একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ৪ মিনিট ১৮ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে আইসিসির মুখপাত্র ফাদি আল আবদুল্লাহ বিবৃতি দিচ্ছিলেন। ভিডিওর ১ মিনিট ২১ সেকেন্ড থেকে ৩ মিনিট ১৬ সেকেন্ড পর্যন্ত সময়ের সঙ্গে বর্তমানে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির হুবহু মিল রয়েছে। পুরো ভিডিও থেকে জানা যায়, সেদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারকেরা রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রসঙ্গে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে আইসিসির এখতিয়ারভুক্ত অভিযোগগুলো তদন্ত করতে প্রসিকিউটরকে অনুমতি দেয়।

বিষয়টি নিয়ে অধিকতর যাচাইয়ে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর প্রকাশিত একটি নথি পাওয়া যায়। সেখান থেকে জানা যায়, সেদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রি-ট্রায়াল চেম্বার-৩ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে আইসিসির আওতাধীন অভিযোগগুলো তদন্ত করতে প্রসিকিউটরকে অনুমতি দেয়। প্রি- ট্রায়াল চেম্বার-৩ এর তিনজন বিচারক ছিলেন ওলগা হেরেরা কারবুচিয়া(সভাপতি), রবার্ট ফ্রেমার এবং জিওফ্রি হেন্ডারসন।
অর্থাৎ, সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে যে ক্লিপটি প্রচারিত হয়েছে সেটি ৫ বছরের পুরোনো একটি ভিডিওর খন্ডচিত্র। আন্তজার্তিক অপরাধ আদালত শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র দেখতে চেয়েছে এমন কোন দাবি ভিডিওটিতে পাওয়া যায়নি।
এছাড়া আইসিসির ওয়েবসাইটে খুঁজেও সংস্থাটির আগামী ১৭ কার্যদিবসের মধ্যে শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র দেখতে চাওয়া এবং এতে ব্যর্থ হলে জোরপূর্বক ক্ষমতাচ্যুত করার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট সবাইকে গ্রেপ্তার করতে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীকে আদেশ দেওয়ার দাবির সত্যতা পাওয়া যায়নি।