ফামীম আহমেদ

রিসার্চার, ডিসমিসল্যাব
সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কৃষি উৎপাদন: বাংলাদেশ কি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম?
This article is more than 2 years old

সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কৃষি উৎপাদন: বাংলাদেশ কি দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম?

ফামীম আহমেদ

রিসার্চার, ডিসমিসল্যাব

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে দাবি করেছেন, দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশেই প্রথম বাণিজ্যিক সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিচে সফল কৃষি উৎপাদন শুরু হয়েছে। কিন্তু যাচাই করে দেখা গেছে, বাংলাদেশের আগেই ভারতে বাণিজ্যিক সৌর বিদ্যুৎ প্লান্টে কৃষি উৎপাদন শুরু হয়েছে। 

প্রতিমন্ত্রী তার ফেসবুক পোস্টে যা লিখেছেন তার একটি অংশ এরকম: “দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশেই প্রথম বাণিজ্যিক সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রর নিচে সফল কৃষি উৎপাদন শুরু হলো। নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির সিরাজগঞ্জ ৭.৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার গ্রীড সংযুক্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিচে কুমড়ার বীজ থেকে কুমড়ার চারা গজানোর খবর দিয়েছিলাম গত নভেম্বরে। এবার সেই গাছে কুমড়া ধরার সুখবর দিচ্ছি।”

একই দাবি তাঁর ফেসবুক পোস্টের বরাতে বাংলাদেশের মূলধারার কয়েকটি সংবাদমাধ্যমেও (, , , ) প্রকাশিত হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও একই তথ্য পোস্ট করা হয়েছে।

সিরাজগঞ্জে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের  ৭.৬ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ২০২১ সালের ৩০ মার্চ আনুষ্ঠানিক উৎপাদন শুরু করে। পরের বছর, অর্থ্যাৎ ২০২২ সালের ৬ অক্টোবরে কৃষি উৎপাদন প্রকল্পটি শুরু হয় বলে নিশ্চিত করেন প্রকল্পের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও প্রকৌশলী।   

তবে, ইন্টারনেটে সার্চ করে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ ভারতে, আরও আগে থেকে সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিচে কৃষি উৎপাদনের নজির মেলে।

nasrul_hamid_agrophotovoltaics_dimislab_factcheck

যেমন:  দেশগুজরাটএইচডি নামের ইউটিউব চ্যানেলে “Farm based Solar power generation pilot project launched in Gujarat” শিরোনামে ১২ সেকেন্ডের এই ভিডিও, যেখানে সৌর বিদ্যুৎ প্যানেলের নিচে কৃষি উৎপাদনের ছবি রয়েছে।

ভিডিওর শুরুতেই গুজরাটি ভাষায় একটি নামফলক চোখে পড়ে। গুগল লেন্সে অনুবাদ করে দেখা যায়, নামফলকে লেখা ”গুজরাট ইন্ডাস্ট্রিজ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড”। ২০১৬ সালে, গুজরাট রাজ্যের সুরাত বিভাগের ভাস্তান গ্রামে কেন্দ্রটি চালু হয়।

সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কৃষি উৎপাদন নিয়ে, ২০২১ সালে ন্যাশনাল সোলার এনার্জি ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া এবং ইন্দো-জার্মান এনার্জি ফোরামের যৌথ উদ্যোগে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতেও জিআইপিসিএলের ভাস্তান বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিবরণ এবং সেখান থেকে ফসল সংগ্রহের ছবি রয়েছে। 

জিআইপিসিএলের এমন আরেকটি প্রকল্প হল, আমরোল ডিস্ট্রিবিউটিভ সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট। প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে সয়াবিন, গম, সরিষা সহ ৪০ ধরনের ফসল পরীক্ষামূলকভাবে ফলানো হয়েছে। 

আমরোলের সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হয় ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল। প্রতিবেদনে, প্রকল্পটিকে “বাণিজ্যিক” সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র বলেও অভিহিত করা হয়।

অর্থ্যাৎ ভারতের অন্তত দুটি সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ২০২১ সালের আগে থেকেই কৃষি উৎপাদন চলছে, যেখানে বাংলাদশের  সিরাজগঞ্জে প্রথম কুমড়োর চারা লাগানো হয় ২০২২ সালে। 

সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং কৃষির সহ-অবস্থান, সাধারণত এগ্রিভোল্টাইক্স নামে পরিচিত। ২০২১ সালে প্রকাশিত “এগ্রিভোল্টাইক্স ইন ইন্ডিয়া” শীর্ষক এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতে এধরনের অন্তত ১৬টি এগ্রিভোল্টাইক্স প্রকল্প চালু রয়েছে।

অবশ্য বাংলাদেশেও সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কৃষি উৎপাদনের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। পিভি ম্যাগাজিনের খবর অনুযায়ী, ২০২১ সালে সৌদিয়া এগ্রো সোলার পিভি পাওয়ার প্ল্যান্টের সঙ্গে ৩.৭৭ মেগাওয়াটের একটি এগ্রো ভোল্টাইক সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি হয়েছে সরকারের।

আরো কিছু লেখা