তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
পারিবারিক কলহে হত্যার শিকার দুই নারী, ফেসবুকে ভুয়া দাবি

পারিবারিক কলহে হত্যার শিকার দুই নারী, ফেসবুকে ভুয়া দাবি

তৌহিদুল ইসলাম রাসো

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হয় স্থানীয় এক বিএনপি নেতার আত্মীয়রা দুই নারীকে ধর্ষণ করেছেন। ভিডিওটিতে দুই নারীকে একটি বিছানায় মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। ভিডিওর ক্যাপশনে এই দুই নারীর নাম-পরিচয়ও যুক্ত করা হয়েছে এবং তারা মারা গেছেন বলেও বার্তা দেওয়া হয়েছে। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে ভিডিওতে থাকা নারীদের হত্যা করা হয়েছে পারিবারিক কলহের কারণে। এই ঘটনার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা এখনো পাওয়া যায়নি। 

ফেসবুকের বেশকিছু ব্যবহারকারী (, , , , , , ) একই ভিডিও শেয়ার করেছেন। বিবরণীতে লেখা হচ্ছে, “ব্রেকিং নিউজঃ বাড়িতে ঢুকে স্থানীয় বিএনপি নেতা কামরুল হোসেনের ভাইগনা পলাশ শরীফ ও তার দলবল নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। আর কত ধর্ষণ দেখবে বাংলাদেশ।” আর সেখানে নারীদের নাম ও ঠিকানা জানিয়ে বলা হয়েছে ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘটেছে এবং তারা নিহত হয়েছেন।

test

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে দুইজন নারী বিছানায় মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন। ঘরে থাকা একাধিক ব্যক্তি তা ভিডিও করছেন। ৪২ সেকেন্ডের এই ভিডিওর শেষে একজন পুরুষের ছবিও দেখানো হয়। আর পুরো ভিডিওজুড়ে ‘রেড নিউজ টিভি’ (RED NEWS TV) লেখা দেখতে পাওয়া যায়।

ঘটনাটির সত্যতা যাচাইয়ে শুরুতে ভিডিওতে থাকা এই ‘রেড নিউজ টিভি’ কিওয়ার্ড দিয়ে ফেসবুকে সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। সেই সার্চে একটি ফেসবুক পেজ খুঁজে পাওয়া যায়। পেজটিতে একই ভিডিও পোস্ট করে সেখানেও নিহতদের পরিচয় ও ঘটনার স্থান হিসেবে ব্রাহ্মনবাড়িয়ায় উল্লেখ করা হয়। তবে সেখানে বলা হয়, “স্বামীর হাতে আপন দুইবোন খুন”। কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে– তা জানা যায়নি বলা হলেও সেখানে অভিযুক্ত হিসেবে মো: আমির হোসেন নামের এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া ভিডিওতে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায় স্বামী তার স্ত্রী ও শ্যালিকাকে হত্যা করে পালিয়ে গেছেন। ভিডিওর শেষে যুক্ত করা ছবিটি হত্যাকারীর বলে জানানো হয় সেখানে।

ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে অনলাইনে নিহতদের নাম ও পরিচয় দিয়ে সার্চ করা হয়। সেখানে দেখা যায় একাধিক গণমাধ্যম এ নিয়ে প্রতিবেদন (, , ) প্রকাশ করেছে। কিছু কিছু প্রতিবেদনে (, ) ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর শেষে অভিযুক্তর যে ছবি দেওয়া হয়েছিল সেটিও ব্যবহার করা হয়েছে। সব প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে স্ত্রী ও শ্যালিকাকে খুন করে পালিয়েছেন স্বামী। আর খুনের কারণ হিসেবে পারিবারিক কলহের কথা বলা হয়েছে। তবে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোতে অভিযুক্ত স্বামীর একাধিক নাম প্রকাশে দেখা দেয় বিভ্রান্তি। কোনো প্রতিবেদনে বলা হয় হত্যাকারী স্বামীর নাম আমির হোসেন, কোথাও বলা হয় সামিউল ইসলাম আবার কোথাও আমির হোসেন সামিউল

অভিযুক্তর নামের এই সংশয় কাটাতে ব্রাহ্মনবাড়িয়ার কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল কাদেরের সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিসমিসল্যাব। তিনি বলেন, “হত্যাকান্ডের এই ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামীর নাম সামিউল ইসলাম ওরফে সামির আর পিতার নাম ফারুক হোসেন”। এছাড়া তিনি জানান অভিযুক্ত ব্যক্তিকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আরো কিছু লেখা