আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে দুটি ভুয়া দাবি ফেসবুকে

ছাত্রশিবিরকে জড়িয়ে দুটি ভুয়া দাবি ফেসবুকে

আহমেদ ইয়াসীর আবরার

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

সম্প্রতি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি এবং সেক্রেটারির পরিচয় সামনে আসার পর তা নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এরই মধ্যে এই ছাত্র সংগঠনটিকে জড়িয়ে দুইটি ভুয়া দাবিও প্রচারিত হচ্ছে ফেসবুকে। একটি দাবিতে বলা হচ্ছে, ঢাকার কেরানীগঞ্জে হিজাব না পরার কারণে এক ছাত্রীর উপরে হামলা করেছে স্থানীয় ছাত্রশিবির এবং অপর দাবিতে বলা হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ ১১ লাখ টাকা দিয়ে ছাত্রলীগের পদ কিনেছিলেন। ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, দুটি দাবিই ভুয়া।

হিজাব না পরার কারণে হামলা হয়নি

ফেসবুকে একটি মেয়ের ছবি পোস্ট করে দাবি করা হয়েছে যে ঢাকার কেরানীগঞ্জে হিজাব না পরার কারণে এক স্কুলছাত্রীর ওপর হামলা হয়েছে। কিছু পোস্টে বলা হয়েছে হামলা করেছে স্থানীয় ছাত্রশিবির (, , , ) এবং কিছু পোস্টের দাবি হামলা করেছে স্থানীয় মৌলবাদীরা (, , , )। দুই ধরনের পোস্টেই বলা হচ্ছে যে, লাঞ্ছনার শিকার হয়ে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। এই পোস্টগুলো ফেসবুকে দেওয়া হয়েছে ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর।

ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা যায়, এই ছবির সঙ্গে হামলা বা লাঞ্ছনার মতো বিষয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। ছবিটির সূত্র সন্ধান করতে গিয়ে ডিসমিসল্যাব গত ১৮ সেপ্টেম্বরের একটি ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পায় যেখানে বলা হয় “বরিশালের টেকনিকাল কলেজের ছাত্রী আজ দুপুর বেলায় রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পরে যায় , তার কোন নাম্বার বলতে পারছে না, শের ই বাংলা মেডিকেল এ ভর্তি আছে।” 

এই পোস্টে যুক্ত নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন ঘটনা মূলত ভিন্ন। বরিশালের টেকনিক্যাল কলেজের একজন শিক্ষার্থী ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে তীব্র গরমের কারণে রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। ছবিটি সেই শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নেয়ার পরে তোলা। মূল পোস্টদাতা আশিক আবির ডিসমিসল্যাবকে তার সেই সময়ে দেয়া পোস্টগুলো শেয়ার করেন (, )। তিনি ডিসমিসল্যাবকে বলেন, “ওই শিক্ষার্থীর ওপর কোনো ধরনের হামলা হয়নি। সে তীব্র গরমে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে জ্ঞান ফিরলে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে তার পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয়।” 

ছাত্র শিবিরের সাধারণ সম্পাদকের নামে ভুয়া উক্তি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদের নামে একটি উক্তি পোস্ট হতে দেখা যায় ফেসবুকে (, , )। পোস্টে দাবি করা হচ্ছে ঢাবি ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, “সংগঠনের ১১ লক্ষ টাকা দিয়ে ছাত্রলীগের পদ কিনেছি নিজের ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের ভিত্তি মজবুত করার জন্য।” এই বিষয়ে জানতে এস এম ফরহাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাকে পাওয়া না গেলেও, ঢাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয় ডিসমিসল্যাব। তিনি বলেন, “এগুলো মিথ্যা। এধরনের কোনো বক্তব্য সাধারণ সম্পাদক দেননি এবং তার সম্পূর্ণ বক্তব্য দুইদিন আগে দেয়া বিবৃতিতে দেয়া হয়েছে।”

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি এবং সেক্রেটারির পরিচয় সামনে আসলে তা নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয় সামাজিক মাধ্যমে। প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে বলা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী এবং তিনি সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। তবে এস এম ফরহাদ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সঙ্গে তার এই সংশ্লিষ্টতাকে অস্বীকার করে একটি বিবৃতি পাঠান গণমাধ্যমকে। বিবৃতিতে তিনি বলেন, “সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখা ছাত্রলীগের কোনো কর্মসূচি ও কার্যক্রমের সাথে আমার সম্পৃক্ততা নেই। ছাত্রলীগের কোনো পদ-পদবির জন্য কোনো সিভি (জীবন বৃত্তান্ত) আমি কখনো কাউকে দিইনি। বিভাগ-ইনস্টিটিউটের কমিটিতে কাকে রাখা হবে, সেটা সংশ্লিষ্ট ছাত্রসংগঠনের সিদ্ধান্ত। সেখানে আমাকে কেন জড়ানো হচ্ছে, যেখানে আমি ইনস্টিটিউটে ছাত্রলীগের সাথে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নই।”

এছাড়া, যমুনা টিভির ফটোকার্ড ব্যবহার করেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদের নামে একটি বক্তব্য ছড়ায়। এতে বলা হয়, “ফ্যাসিস্ট সরকারের কারণে আমরা ১৭ বছর প্রকাশ্য রাজনীতি করতে পারিনি। একারণে আন্ডারগ্রাউন্ড পলিটিক্স বেছে নিতে হয়েছিল। স্বৈরাচারী সরকারের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের দলে আমরা মিশে গিয়েছিলাম, এটি আমাদের দলীয় নির্দেশনা ছিলো। নিজেদের গোপন রাখতেই আমরা ছাত্রলীগের মিছিলে হেলমেট ব্যবহার করতাম। আমাদের কৌশল ওরা ধরতে পারেনি, যার কারণে আমরা বিজয় সুনিশ্চিত করতে পেরেছি।” আবার, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীরের নামে একটি বক্তব্য ছড়ায় যে “ক্ষমতায় গেলে পুরুষদের ৪ বিয়ে বাধ্যতামূলক করবে জামায়াত।” এই দুটি বক্তব্যকে মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করে ভিন্ন দুটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন (, ) প্রকাশ করে বাংলাদেশের একটি তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান।

আরো কিছু লেখা