তামারা ইয়াসমীন তমা

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব
বিজ্ঞপ্তি বিকৃত করে ছাত্রলীগ থেকে ধর্মীয় কারণে বহিষ্কারের মিথ্যা দাবি প্রচার
This article is more than 11 months old

বিজ্ঞপ্তি বিকৃত করে ছাত্রলীগ থেকে ধর্মীয় কারণে বহিষ্কারের মিথ্যা দাবি প্রচার

তামারা ইয়াসমীন তমা

রিসার্চ অফিসার, ডিসমিসল্যাব

‘ইসলামপন্থী’ হওয়ায় ও নিজেদের ‘মুসলিম দাবি করায়’ চার ছাত্রলীগ কর্মীকে স্থায়ী বহিষ্কারের বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া। ডিসমিসল্যাবের যাচাইয়ে দেখা গেছে, বিজ্ঞপ্তিটি সম্পাদিত এবং মূল বিজ্ঞপ্তিতে ‘ইসলামপন্থী’ বা ‘মুসলিম দাবি করায়’ বহিষ্কারের কোনো উল্লেখ নেই।

সম্প্রতি বেশ কিছু ফেসবুক পেজ ও ব্যক্তিগত প্রোফাইলে (, , , ) “ইসলামপন্থী, শৃঙ্খলা পন্থী, অপরাধমূলক এবং নিজেদেরকে মুসলিম ধাবি করা হয়, এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে” চার ছাত্রলীগ কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে- এমন একটি বিজ্ঞপ্তি দেখা যায়।

সম্পাদনা করা এই বিজ্ঞপ্তির ছবিটি আপলোড করে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও  প্রোফাইল থেকে বিষয়টির নিন্দা জানানো হয়। চাঁন্দিশকরা সচেতন নাগরিক ফোরাম পেজ থেকে ছবিটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হলো যারা নিজেদেরকে ইসলামপন্থী বা মুসলিম দাবি করে তারা ছাত্রলীগ হতে পারবে না, আর যারা নিজেদেরকে ছাত্রলীগ দাবি করে তারা মুসলিম নয়…” 

টেইক-ব্যাক বাংলাদেশ নামে একটি পেজ থেকে ছবিটি পোস্ট করে লেখা হয়, “তাহলে ছাত্রলীগ কখনো মুসলিম হতে পারে না”। শাহজাদাপুর আল-হেরা ছাত্র সংগঠন নামে একটি পেজ লিখেছে, “ইন্নালিল্লাহি, কী সংঘাতিক ব্যাপার! একটু ভাবুন তো! আসলেই কি বিষয়টি সত্য? ইসলামপন্থী এবং নিজেদেরকে মুসলিম দাবি করা হয়,এমন কার্যকলাপে জড়িয়ে থাকার অভিযোগে……… বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো! আপনি ছাত্রলীগ করলে নিজেকে মুসলিম দাবি করতে পারবেন না?”

তবে ডিসমিসল্যাব যাচাই করে দেখেছে, সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের চার সদস্যকে বহিষ্কার করার একটি বিজ্ঞপ্তি প্রচারিত হলেও সেখানে ইসলাম বা কোনো ধর্মীয় বিষয়াদির উল্লেখ ছিল না। বরং, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে, বহিষ্কৃত কর্মীদের বিরুদ্ধে ভর্তি জালিয়াতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল।

মূল বিজ্ঞপ্তিতে যা ছিল 

গত ১৯ আগস্ট বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের দফতর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ দুই নেতা ও দুই কর্মীকে বহিষ্কারের তথ্য জানানো হয়। ছাত্রলীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকেও বিজ্ঞপ্তিটি আপলোড করা হয়

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের জরুরি সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রেক্ষিতে সংগঠনবিরোধী, শৃঙ্খলা পরিপন্থী, অপরাধমূলক এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে মুশফিক তাহমিদ তন্ময় (সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা), রাজু আহমেদ (যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, শের-ই বাংলা ফজলুল হক হল শাখা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়), মহিবুল মমিন সনেট (কর্মী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, শহীদ হবিবুর রহমান হল শাখা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) ও শাকোয়ান সিদ্দিক প্রাঙ্গণ (কর্মী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, শের-ই বাংলা ফজলুল হক হল শাখা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) কে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হলো।”

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ (, , , ) অনুসারে, ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি জালিয়াতি, অপহরণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মুশফিক তাহমিদ তন্ময়, রাজু আহমেদ, মহিবুল মমিন সনেট ও শাকোয়ান সিদ্দিক প্রাঙ্গণকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। 

এর আগে, ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের ৫ আগস্ট মুশফিক তাহমিদ তন্ময়কে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে ৩ নভেম্বর সেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মিফতাহুল ইসলাম পান্থ’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডিসমিসল্যাবকে জানান, “এই বিজ্ঞপ্তিটি এডিটেড এবং ছাত্রলীগ কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে নয়।”

আরো কিছু লেখা