ফাতেমা তাবাসুম
মমতাজের বাড়ি ভাঙার দাবিতে বন বিভাগের উচ্ছেদ অভিযানের ভিডিও প্রচার
ফাতেমা তাবাসুম
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে সংগীতশিল্পী মমতাজের বাড়ি ভাঙার দাবিতে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এক মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের সেই ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা রঙের একটি দোতলা ভবন ভেঙে দেয়া হচ্ছে ভারী বুলডোজারের সাহায্যে। ভিডিওর ক্যাপশনে দাবি করা হয়, বাড়িটির মালিক বর্তমানে কারাগারে অবস্থানরত সংগীতশিল্পী ও সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। তবে যাচাইয়ে দেখা গেছে, বাড়িটি মমতাজের নয়, বরং গাজীপুরে বন বিভাগের জমি দখল নিয়ে অবৈধভাবে নির্মিত একজন স্থানীয় বাসিন্দার বাড়ি এটি; যা গত মার্চে বন বিভাগের পরিচালিত উচ্ছেদ অভিযানে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। বাড়িটির সঙ্গে মমতাজের কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
গত ১৯ মে ফেসবুকে একাধিক পোস্টে (১, ২, ৩, ৪) বাড়ি ভাঙার ভিডিওটি প্রকাশ করে দাবি করা হয়, এটি সংগীতশিল্পী মমতাজের বাড়ি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে পোস্টটি শেয়ার করেন। ভিডিওটির বিবরণীতে লেখা হয়, “বাংলা লোক গানের সুর সম্রাজ্ঞী মমতাজের বাড়িটা ভেঙ্গে ফেলছে। গত ১৫ বছরে মনির খান, বেবি নাজনীন, আসিফ আকবর তাদের বাড়ী কিন্তু ভাঙ্গেনি।” (বানান অপরিবর্তিত)

অনেক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একজন প্রশ্ন তোলেন, মমতাজকে গ্রেপ্তারের পরও কেন এমনভাবে তার বাড়ি ভাঙা হলো? কেউ লেখেন, “তার বিচার হউক এবং দোষী সাব্যস্ত হলে তার সাজা হউক অথবা তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হউক কিন্তু ভেংঙে ফেলার আইন কোথায় থেকে আসলো?”
ভিডিওটি যাচাই করতে গিয়ে রিভার্স ইমেজ অনুসন্ধানে আনন্দ টিভির একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে একই সাদা রঙের বাড়ি ভাঙার একটি ক্লিপ ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি ‘সময়ের কণ্ঠস্বর’ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি সাংবাদিক মোত্তাসিম সিকদার রাজীব তার ফেসবুক প্রোফাইলে গত ৩০ মার্চ শেয়ার করেছিলেন। সেখানে বলা হয়, গাজীপুরের কালিয়াকৈরের সিনাবহ বাগাম্বর এলাকায় বন বিভাগের জমি দখলমুক্ত করতে অভিযান চালানো হয়েছিল।
ঘটনার বিস্তারিত জানতে ডিসমিসল্যাব তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, উচ্ছেদ হওয়া বাড়িটি বাগাম্বর এলাকার লেবু মিয়া নামের একজন স্থানীয় বাসিন্দা অবৈধভাবে গড়ে তুলেছিলেন। তিনি স্পষ্ট করেন, বাড়িটির সঙ্গে শিল্পী মমতাজের কোনো সম্পর্ক নেই। এছাড়াও, সেই সময় এ সংক্রান্ত ‘সময়ের কণ্ঠস্বর’ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনও গণমাধ্যমটির পক্ষ থেকে ডিসমিসল্যাবের সঙ্গে শেয়ার করা হয়।

একই সূত্র ধরে ডিসমিসল্যাব টিম যোগাযোগ করে কালিয়াকৈর বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক ও রেঞ্জ কর্মকর্তা শাহিদুল হাসান শাকিলের সঙ্গে। তিনি জানান, “গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে, সিনাবহ বাজারের পশ্চিম পাশে লাবিব উদ্দিন লেবু মিয়ার বাড়ি ছিল এটি।”
তিনি জানান, বাড়িটি বন বিভাগের সরকারি জমি দখল করে অবৈধভাবে নির্মিত। ৫ আগস্টের পর থেকে গজারি গাছ কাটা, জমি দখল, ঘরবাড়ি নির্মাণ ও দখল বাণিজ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঢাকা বন বিভাগের উদ্যোগে গত ৩০ মার্চ এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। সেই অভিযানের অংশ হিসেবেই এই বাড়িসহ আরও কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। তিনি নিশ্চিত করেন, উচ্ছেদ হওয়া বাড়িটির সঙ্গে সংগীতশিল্পী ও সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজের কোনো সম্পর্ক নেই।
এছাড়াও, ৩০ মার্চ প্রকাশিত ‘আজকের পত্রিকা’-এর একটি প্রতিবেদনেও একই ঘটনার বিবরণ এবং আলোচ্য বাড়িটির ছবিখুঁজে পায় ডিসমিসল্যাব।
প্রসঙ্গত, ঘটনার দেড় মাস পর গত ১২ মে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার হন সাবেক সাংসদ ও সংগীতশিল্পী মমতাজ বেগম। তাকে খুনসহ একাধিক মামলায় আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। চার দিন রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে, ১৭ মে মমতাজকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত। এরপর থেকেই “মমতাজের বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয়েছে”— এমন দাবিতে এই পুরোনো ও অপ্রাসঙ্গিক ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে থাকে।