তৌহিদুল ইসলাম রাসো
ফুয়াদ আব্দুল্লাহর ছবি সম্পাদনা করে ভুয়া দাবিতে প্রচার
তৌহিদুল ইসলাম রাসো
সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট ভাইরাল হতে দেখা গেছে। বেশ কিছু আইডি থেকে বাংলাদেশের গণমাধ্যম ‘নয়া দিগন্ত’র লোগোযুক্ত একটি সংবাদ প্রতিবেদনের ছবি দিয়ে দাবি করা হচ্ছে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বা ফুয়াদ আব্দুল্লাহ একজন পতিতা সর্দার। সংবাদ প্রতিবেদনের ওই ছবিতে ফুয়াদ আব্দুল্লাহকেও দেখতে পাওয়া যায়। তবে যাচাইয়ে দেখা যায় ভাইরাল এই ছবির দাবিটি সঠিক নয়। ২০২১ সালের একটি সংবাদ প্রতিবেদনের ছবি সম্পাদনা করে সেখানে ফুয়াদ আব্দুল্লাহর মুখ জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
নয়া দিগন্তের লোগোযুক্ত সংবাদ প্রতিবেদনের ছবিটি শেয়ার করা হয় বেশ কিছু ফেসবুক প্রোফাইল (১, ২, ৩, ৪), পেজ ও গ্রুপ (১, ২, ৩) থেকে। এছাড়া ছবিটি ভিডিও আকারে শেয়ার করতে দেখা যায় ইউটিউবেও। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোর বিবরণীতে লেখা হয়েছে, “বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ফুয়াদ আব্দুল্লাহ যখন পতিতা সর্দার!”
সংবাদ প্রতিবেদনের ভাইরাল ছবিটির শিরোনামে লেখা – “র্যাবের অভিযানে পতিতা সর্দার সহ চার পতিতা গ্রেফতার”। আর ছবিটির উপরের দিকে প্রথম সংস্করণ লেখা দেখতে পাওয়া যায়। সাধারণত সংবাদপত্রের ছাপা সংস্করণের ক্ষেত্রে এমনটি লেখা হয়ে থাকে। সংবাদের বিবরণীতে বলা হচ্ছে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাবের একটি দল ঢাকার উত্তরায় এক বাসায় অভিযান চালিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪ পতিতাকে গ্রেফতার করে। একই সঙ্গে অসামাজিক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে ফুয়াদ আব্দুল্লাহ নামের এক পতিতা সর্দারকেও গ্রেফতার করা হয়। প্রতিবেদনে যে ছবি ব্যবহার করা হয় সেখানে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে লুঙ্গি ও শার্ট পরা অবস্থায় এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব ফুয়াদ আব্দুল্লাহকে দেখতে পাওয়া যায়।
ছবিটির সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সংবাদ প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ডিসমিসল্যাব। উক্ত সার্চে রাজশাহীর স্থানীয় দুটি আলাদা অনলাইন পোর্টালের সংবাদ প্রতিবেদনে (১, ২) ব্যবহার করা ছবির সঙ্গে ওই ছবিটির মিল পাওয়া যায়। দুটি প্রতিবেদনই প্রকাশিত হয়েছে ২০২১ সালের ২০ জুন। এসব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অবৈধ ও অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ৩ জন পতিতা এবং ২ জন পতিতা ব্যবসা পরিচালনাকারীকে আটক করে র্যাব ৫ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের সদস্যরা। সেখানে আটককৃত পুরুষ পতিতা সর্দারের নাম বলা হয় জাহাঙ্গীর আলম।
২০২১ সালের দুটি স্থানীয় অনলাইন পোর্টালের প্রতিবেদনে ব্যবহার করা ছবি এবং সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ছবি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ছবি দুটিতে উপস্থিত র্যাব সদস্য এবং বাকি চার নারীদের ছবির ব্যক্তিরা একই। তাদের চেহারা ও পোশাকে হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। আবার দুটি ছবিতেই গ্রেপ্তারকৃত পুরুষের পোশাকেও হুবহু মিল আছে। শুধু ২০২১ সালের সংবাদ প্রতিবেদনগুলোর ছবিতে থাকা পুরুষের মুখমণ্ডল ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় পরিবর্তন করে ভুয়া প্রতিবেদনের ছবিতে ফুয়াদ আব্দুল্লাহর ছবিটি বসানো হয়েছে।
ভাইরাল ছবিটির সংবাদ প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাইয়ে নয়া দিগন্তের ছাপা সংস্করণ খুঁজে দেখে ডিসমিসল্যাব। সেখানে এমন কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। আবার ভাইরাল ছবিতে সংবাদটি ২০০৯ সালের উল্লেখ করা হয় কিন্তু এমন ছাপা সংস্করণের ডিজিটাল কপি গণমাধ্যমটির আর্কাইভে পাওয়া যায় শুধু ২০১৯ পর্যন্তই। এ থেকে বোঝা যায় সংবাদটি নয়া দিগন্তে ছাপা হয়নি।
এছাড়া নয়া দিগন্তের সেই প্রতিবেদনের শিরোনামের শেষে ‘দাড়ি’ যতিচিহ্ন ব্যবহার করতে দেখা যায় যেটি সচরাচর গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে কখনোই ব্যবহার করা হয় না।
তাই বলা যায়, ভাইরাল হওয়া সংবাদ প্রতিবেদনটি ভুয়া এবং সেখানে ফুয়াদ আব্দুল্লাহর ছবিটি সম্পাদনা করে বসানো হয়েছে।